‘ধর্ম আলাদা হলেও, উৎসব সবার’ এই মন্ত্রেই উদযাপিত বাংলা ও বাঙালির দুর্গোৎসব। হুগলীর পাত্রসায়রের পাণ্ডুয়া গ্রাম। পুজোর আগে এখানে গেলেই চোখে পড়ে দুর্গাপুজোর খরচপাতি নিয়ে আলোচনা করছেন মহম্মদ আলি খান ও সুদীপ চক্রবর্তী। দুর্গাপুজোকে ঘিরে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। শুধু পাণ্ডুয়া গ্রামেই নয়, বাংলায় এমন অনেক পুজো আছে যেখানে গেলেই দেখা যাবে এই একই চিত্র।
আবার রঘুনাথগঞ্জের বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতি, সেখানে মায়ের ভোগ রাঁধেন মুসলমান। পুজোর আগে মায়ের দর্শন পান কোনও না কোনও মুসলিম পরিবারের সদস্য। মায়ের নির্দেশে পুজোর দান আসে সেই পরিবার থেকেই।
খুঁজতে বেরোলে এমন অসংখ্য চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে বাংলার বুকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা নয়, বাংলা দুর্গাপুজো প্রকৃত পক্ষেই ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’। এই পুজোয় জাত, ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সাধারণ মানুষ।
এই পরম্পরা নতুন নয়। বনেদি বাড়িগুলির পুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে ৫০০-৬০০ বছর আগেও ভিন্নধর্মীদের পুজোয় মিশে যাওয়ার প্রমাণ মেলে।
যা আরও বেশি করে প্রকট হয়ে ওঠে উনিশ শতকে। দেশের সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার বাণীতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতেও হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এই পুজো। সর্বজনীন পুজোগুলির জুড়ে গিয়েছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, হেম মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বদেশী কর্মী এবং সমাজসংস্কারকরা। আর তাঁদের সঙ্গেই হিন্দুদের দুর্গাপুজোর সঙ্গে জুড়ে গেল ভিন্নধর্মীরাও। অজান্তেই বাংলার পুজো হয়ে উঠল সর্ব ধর্মের মিলন ক্ষেত্র। যে ধারা সময়ের সঙ্গে বহমান আজও। ধর্মীয় আচারের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্গাপুজো আজ উৎসব। দুর্গাপুজো আজ ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। দুর্গাপুজো হিন্দুরও, মুসলিমেরও, খ্রীস্টানেরও! এ উৎসবের ভাগীদার সকলেই।