থর মরুভূমি এবং আরাবল্লী পর্বতের কোলে অবস্থিত রাজস্থান। বহু অজানা ইতিহাসের সাক্ষ্মী এই রাজস্থান। এই রাজ্যেই অবস্থিত ভারতের অন্যতম জাদুর শহর যোধপুর। প্রাচীন মারওয়াড় রাজ্যের রাজধানী ছিল এই যোধপুর। অন্যদিকে রাজস্থান রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর যোধপুর। আর এই শহরের নজর কাড়া বৈশিষ্ট্য হল নীল রঙ। যেখানে থেকে এই শহরের আর এক নাম নীল শহর। কিন্তু শহর কেন নীল রঙে এই আবৃত জানেন কি?
এই শহর নীল হওয়ার পিছনে একাধিক তত্ত্ব ও যুক্তি কাজ করে। যদিও এই রঙের শুরুটা হয়েছিল বর্ণপ্রথা থেকে। এই তত্ত্ব যোধপুরের বাসিন্দারা মেনে চলেন। তাঁদের মতে, নীল রঙ সমাজে একটি স্তরের ভূমিকা পালন করে। কিছু স্থানীয়রা মনে করেন যে এই নীল রঙের বাড়িতে ব্রাহ্মণদের বাস। অন্যান্য বর্ণ থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে রাখার জন্য ব্রাহ্মণরা বাড়ির দেওয়ালে নীল রঙ করেছিল। যদিও এই ঘটনা পুরোনো যোধপুর শহরের। সমাজে বর্ণ ভেদ প্রথার অবলুপ্তির সাথে সাথে সব ধরণের মানুষ তাঁদের বাড়িতে নীল রঙ করা শুরু করে।
যোধপুর শহরের বাড়ির দেওয়াল নীল রঙে আবৃত। এক সময় মনে করা হত যে, নীল রঙের ফলে বাড়ির দেওয়ালে উইপোকা ধরে না। শহরের ঘরগুলোতে প্রচুর উইপোকার আক্রমণ হত। ঐতিহাসিক কাঠামো বা বাড়ি ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে নীল রঙ করা হত। কপার, সালফেট এবং চুনাপাথর দিয়ে তৈরি হয় এই নীল রঙ। তাই বাড়ির কাঠামো বাঁচাতে নীল রঙ করা হয় দেওয়ালে।
গ্রীষ্মকালে এই শহরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছে চলে যায়। বাড়িকে ঠান্ডা রাখতে ভীষণ ভাবে কার্যকরী নীল রঙ। অন্যদিকে নীল রঙকে সূর্যালোকের প্রতিফলক হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই এই তত্ত্ব গুলিকে কাজে লাগিয়ে যোধপুর শহরের বাড়ির দেওয়ালে নীল রঙ করা।
এই শহরে বসবাসকারী অনেক প্রবীণ মানুষ মনে করেন যে, নীল রঙ শিবের সাথে যুক্ত। তাঁরা মনে করেন যে, পৃথিবীকে বাঁচাতে সমুদ্র মৈথুনের সময় বিষ পান করেন শিব, যেখান থেকে তাঁর শরীর নীল রঙে পরিবর্তিত হয়। এখান থেকেই বহু মানুষ নিজের বাড়ির রঙ নীল করেন বলে অনেকেই মনে করেন।
তত্ত্ব বা কারণ যাই হোক না কেন এই নীলচে শহরের সৌন্দর্য্য শব্দে ব্যাখ্যা করা কঠিন। ভ্রমণপিয়াসু পর্যটকদের এবং ইতিহাসের সাক্ষ্মী হওয়ার জন্য সহজেই ঘুরে আসতে পারেন যোধপুর।