বিয়ে করছেন ভিকি-ক্যাটরিনা- এই খবর যবে প্রকাশ্যে এসেছে, তবে থেকেই ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। দিন গড়ায়, জল্পনা বাড়ে তবুও স্পিকটি নট ভিক্যাট (ViKat)। অবশেষে ৯ ডিসেম্বর রাজস্থানের সোয়াই মাধোপুরের বারওয়ারা ফোর্টে চার হাতএক হয় ভিকি-ক্যাটরিনার। একে একে প্রকাশ্যে আসে তাঁদের বিয়ের ছবি। প্রাক বিবাহ- থেকে গায়ে হলুদ, সব ছবি শেয়ার করেছেন স্বয়ং ভিক্যাট।
ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের তৈরি লাল লেহেঙ্গা আর বড় নথে সেজে বিয়ের আসরে উপস্থিত হন ক্যাটরিনা। কখনও লেহেঙ্গা, কখনও শাড়ি- সালোয়ারে ক্যাটরিনাকে দেখে আপ্লুত সকলেই। হাই প্রোফাইল এই বিয়ের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে যখন একটা মাছিও গলতে পারেনি তখন কিন্তু সেখানে উপস্থিত এক টুকরো বাংলা।
ভিকি-ক্যাটরিনায় বিয়ের সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে কলকাতা। ভিকি-ক্যাটের বিয়ের যাবতীয় পোশাকের ভার ছিল ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের হাতে। সেই সব পোশাক নিজের হাতে তৈরি করেছেন বাংলার শিল্পীরাই। আর প্রতিটি পোশাক ক্যাটরিনাকে সুন্দর করে পরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বভার পেয়েছিলেন কলকাতারই কন্যা ডলি জৈন।
লেহেঙ্গা থেকে শাড়ি- ক্যাটরিনাকে প্রতিটি পোশাক যত্ন করে নিজের হাতে পরিয়েছেন ড্রেপ আর্টিস্ট ডলি জৈন। শুধু ক্যাটরিনাই নয়, এর আগে দীপিকা পাড়ুকোন, সোনম কাপুর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বিয়েতেও ড্রেপ আর্টিস্ট হিসেবে ডাক পড়েছিল ডলির। ১৭ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছেন ডলি। নানা কায়দায় শাড়ি পরাতে জানেন তিনি। যে কারণে দেশ-বিদেশের হাই প্রোফাইল বিয়েতে ড্রেপিং আর্টিস্ট হিসেবে সর্বদাই ডাক আসে তাঁর। সম্প্রতি টিভি৯ বাংলার তরফ থেকে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম ডলি জৈনের সঙ্গে।
‘ক্যাটরিনাকে শাড়ি পড়ানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তাঁর’- এই প্রশ্ন করতেই ডলি উত্তর দিলেন ‘অসাধারণ’। সবার মত তিনিও খুব উত্তেজিত ছিলেন, তাঁর সাজ ক্যাটরিনার কেমন লাগবে, পছন্দ হবে কিনা। কিন্তু শাড়ি পড়ানোর পর ক্যাটরিনা যখন বললেন যে, ‘এরপর থেকে শাড়ি পরলে তাঁর ডলিকেই চাই’- এই প্রশংসা শোনার পর নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি।
সেই সঙ্গে ডলি নিজে গর্বিত বাংলার মেয়ে বলে। শহর কলকাতাকে নিয়ে তাঁর অনেক গর্ব। ঢাকাই শাড়ি আর শাঁখা-পলায় সেজে তিনি যখন উপস্থিত হন হাই প্রোফাইল বিয়েতে এবং সবাই যখন তাঁর সাজের প্রশংসা করে বলে ‘তুমি বাংলা বলতে পার’? এটা শুনেই খুব খুশি হন তিনি।
প্রি-ওয়েডিং-এ ক্যাটরিনা যে প্যাস্টেল শেডের ফ্লাওয়ার মোটিফের মসলিন শাড়িটি পরেছিলেন তাও কিন্তু তৈরি করেছেন বাংলার শিল্পীরাই। সব্যসাচী জানিয়েছেন ৪০ জন বাঙালি শিল্পী প্রায় ১৮০০ ঘণ্টা ধরে তৈরি করেছেন ক্যাটরিনার এই শাড়ি। এই শাড়িটি ব্রিটিশ ওয়েডিং গাউনের ধাঁচে বানিয়েছেন সব্যসাচী। মাথায় লম্বা ভেল। এই শাড়িই কিন্তু নজর কেড়েছে তামাম দুনিয়ার। এ প্রসঙ্গে ডলি বললেন,’ শাড়ির সঙ্গে নতুন এই এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে তাঁরও একটু সংশয় ছিল। কিন্তু স্বল্প কথার মানুষ ক্যাটরিনা বার বার মিষ্টি হাসিতেই তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এই সাজে তিনি কতটা খুশি। শুধু তাই নয়, শাড়ি পরে এর আগে এরকম আরামও (comfortable)পাননি ক্যাটরিনা, তা জানিয়েছেন ডলিকে’। ডলির দৃঢ় বিশ্বাস শাড়ির সঙ্গে লম্বা ভেলই এবার নতুন ট্রেন্ড হতে চলেছে।
শাড়ি পরতে ভালোবাসেন ক্যাটরিনা। আর তাই সুযোগ পেলে আবারও ডলি নিজের মতো করে সাজাতে চান ক্যাটরিনাকে। কলকাতায় শ্রীদেবীকে একবার একটি অনুষ্ঠানে এক্কেবারে বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরিয়েছিলেন ডলি। সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা সব ছিল। এমন সাজেই তিনি সাজাতে চান তাঁর সব ব্রাইডদের।
অনেক মেয়েই এখন বলেন শাড়িতে তাঁরা ঠিক স্বচ্ছন্দ্য নন, তাঁদের জন্য কী টিপস দেবেন ডলি। উত্তরে বলেন, ‘মেয়েরা শাড়ি পরতে শেখে মায়েদের দেখে। আর তাই সব মায়েদেরই উচিত এই ব্যাপারে মেয়েদের আগ্রহী করে তোলা। জিন্স, টপ, টি-শার্ট, ড্রেস কিংবা কুর্তা কোনওটাই খারাপ পোশাক নয়। কিন্তু শাড়ি পরাও মোটেই কঠিন কাজ নয়। ইচ্ছে করলেই সকলে তা শিখে নিতে পারবে। আর এই ইচ্ছেটা আসুক বাড়ি থেকেই’।
আজকাল বিয়ে মানেই যেখানে মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার ড্রেসার এবং ডিজাইনারদের রমরমা, সেখানে যে তাঁর মতো ড্রেপিং আর্টিস্টরাও গুরুত্ব পাচ্ছেন, ‘শাড়ি পরাও যে একটা শিল্প’- এই ভাবনায় পরিবর্তন আসায় তিনি খুশি। বরং তাঁর মত আরও অনেক ড্রেপিং আর্টিস্ট এভাবে এগিয়ে আসুক এমনটাই চান তিনি। সব্যসাচীর মতো এমন একজন ডিজাইনারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন ডলি। দেশ-বিদেশ থেকে যখন কলকাতার মেয়ে হিসেবে ডাক পান, সেটাই তাঁর কাছে অনেক বেশি গর্বের। আর এভাবেই শাড়ি পরানোর মাধ্যমে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চান তাঁর প্রিয় কলকাতার।
আরও পড়ুন: Designer Tips: সামনেই বিয়ে? বেনারসি কেনার আগে যে সব বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন…