নগ্নতাকে সাধারণ অর্থে আমরা অশ্লীল বলেই ধরে নিই। এর মূল কারণ আমাদের মানসিকতা। শরীরের আব্রু বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য… এমনটাই পড়ানো হয় পাঠ্য বইতে। এদিকে শিল্প আবার প্রশ্রয় দেয় নগ্নতাকে। নগ্নতা শিল্প সাধনার অন্যতম বিষয়। শিল্পী মডেল চার্লি অ্যান ম্যাক্স ২০২০ সালে নগ্নতা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। অপরিচিত মহিলাদের সঙ্গে নগ্ন হয়ে একসঙ্গে সময় কাটানো, শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া এবং শিল্প সংক্রান্ত একাধিক আলোচনা করতেন। ইনস্টাগ্রামে বেশ কিছু মহিলাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হওয়ার পর তিনি মহিলাদের নিয়ে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেন। আর সেই নৈশভোজের শর্ত ছিল সকলকে নগ্ন হতে হবে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে যাতে একটা সুন্দর বন্ধুত্ব তৈরি হয় এদিকেও নজর ছিল তাঁর।
প্রতি বছর মার্চ মাসেই আয়োজন করা হয় এই ডিনার পার্টির। অতিথিরা বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সকলে তাঁদের পোশাক খুলে ফেলেন। সেই ঘরে কোনও ড্রেসিং রুম ছিল না। শুধুমাত্র কাপড় ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল। ডাইনিং হলে খুব সুন্দর ভাবে উষ্ণ আলো দিয়ে সাজানো থাকে। সেই সঙ্গে ক্রিম রঙের সিল্কের কাপড় পাতা টেবিলে। হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে মহিলারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছেন। নগ্নতা বিষয়ে নিজেদের মতামত ভাগ করে নেন। তাঁদের সেই সুন্দর মুহূর্তের ছবি যেন মনে করিয়ে দেয় সেই রেনেসাঁর আমলের ছবিকেই। ২০-৫০ বছরের মহিলারা উরস্থিত হয়েছিলেন সেই ডিনার পার্টিতে। এই প্রত্যেকেই কিন্তু একে অন্যের অপরিচিত। এখানে এসেই তাঁদের একে অনেযের সঙ্গে আলাপ হয়।
এই ডিনার পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন- রোজালিনা ভিলানুয়েভা, ৪১ বছরের এই মহিলা মা হওয়ার পর নিজের শরীরকে আবার নতুন করে উপভোগ করতে চেয়েছিলেন। আবার ২০ বছরের তরুণী ক্যাথরিন ফ্র্যাকারোলির কথায়, নগ্ন হয়ে নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতেই তিনি এসেছিলেন এমন একটি ডিনার পার্টিতে। এইঅনুষ্ঠানে এসে সকলেই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন এবং অনেক আরামদায়ক বোধ করেছেন। এমনকী চাপিয়ে দেওয়া পিতৃতন্ত্র আর নগ্নতার ভুল ধারণা থেকে মুক্তি পেতে এমন নৈশভোজের যে প্রয়োজন আছে একথা সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন।
শুধু বিদেশেই নয়। এমন পার্টির আয়োজন কিন্তু আমাদের দেশেও হয়। কেরলের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ত্রিসূর। সেখান থেকেও কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি বাগানবাড়িতে কোনও এক ছুটির দিনে জড়ো হয়েছিলেন ৫০ জন মানুষ। সেই ছোট্ট গেট-টুগেদারে তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ গিটার বাজাচ্ছেন, খাবার তৈরি করছেন, যোগাসন করছেন, বই পড়ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। এখনও অবধি কোনও ‘অস্বাভাবিকতা’ নিশ্চয়ই খুঁজে পাননি? এই যে ৫০ জন মানুষ এক জায়গায় মিলিত হয়ে ছুটি উদযাপন করছেন, এঁরা প্রত্যেকেই নগ্ন। জামাকাপড়ের চিহ্ন নেই সারা শরীরে। নিজের শরীরকে উপভোগ করেন এঁরা। প্রকৃতির সঙ্গে শরীরের মেলবন্ধন তৈরি করেন। এঁদের কাছে জামাকাপড় হল একপ্রকার আস্তরণ, যা শুধুই আমাদের ঢেকে রাখার কাজ করে। কিন্তু যখন এঁরা নগ্ন দেহে প্রকৃতির কাছাকাছি আসেন, নিজেদের ‘স্বাধীন’ মনে করেন। ভারতে এমন নিউডিস্টের সংখ্যাও নেহাত কম নেই। নগ্নতার সঙ্গেই তাঁরা করেন স্ব-প্রেমের উদযাপন।
তথ্য সৌজন্যে- দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস