রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে সেখান থেকে একাধিক সমস্যা হয়। এছাড়াও বড় যে কোনও রোগের লক্ষণও কিন্তু এই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্লান্তি আসে। আয়রনের ঘাটতি হওয়া মানেই অ্যানিমিয়া অবধারিত। শরীরে আয়রন, ভিটামিন বি এবং ফোলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলেই এই সমস্যা সবচাইতে বেশি দেখা যায়। হিমোগ্লোবিন হল লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত একপ্রকার প্রোটিন যার মধ্যে আয়রন এবং ট্রান্সপোর্টস অক্সিজেন বর্তমান। দেহের সমস্ত কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব থাকে হিমোগ্লোবিনের হাতে। শরীরে আয়রনের অভাব হলে তখনও হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। উন্নয়নশীল দেশেই অ্যানিমিয়ার প্রকোপ সবচাইতে বেশি। সেই সঙ্গে পরিসংখ্যান বলছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে কিডনির সমস্যা আসে। যেহেতু কিডনি শরীরের ছাঁকনির কাজ করে তাই কিডনির মাধ্যমে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের সর্বত্র পৌঁছয়। তাই শরীরে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে তা হেলাফেলা করবেন না। সুষম খাবার খান, প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
এক্ষেত্রে ওষুধের থেকেও বেশি ভাল কাজ হয় যদি খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে পারেন। রোজ নিয়ম করে শাক-সবজি খান। ফল খান। সেই সঙ্গে রোজকার মেন্যুতে স্যালাড, বাদাম এসব অতি অবশ্যই রাখবেন। সেই সঙ্গে এই ৮ খাবার যদি রাখেন তালিকায় তাহলে কোনওদিন রক্তাল্পতা আপনাকে ছুঁতেও পারবে না।
বীট- শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে বিটের জুড়ি মেলা ভার। যাদের সুগার রয়েছে তাঁরা বিট এড়িয়ে চলতে পারলেই ভাল, যেহেতু বিটের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ শর্করা। বিটের থেকেও বেশি আয়রন রয়েছে বিটের পাতায়। তাই এই পাতা খেতে পারলেই কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভ।
জাম- একমাত্র গরমের সময়ই জাম পাওয়া যায়। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জামের জুড়ি মেলা ভার। এমনকী জামের বীজও গুঁড়ো করে খেলে সুগার থাকে নিয়ন্ত্রণে। জাম খেলে রক্তও বাড়ে। সবচেয়ে ভাল যদি আমলা আর জামের জুস একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে বাড়বে শরীরে রক্তের পরিমাণ।
পেস্তা- রোজ সকালে তিন থেকে চারটে পেস্তা খেতে পারলে খুবই ভাল। পেস্তা খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। এই ফলের মধ্যে রয়েছে ৩০ রকম ভিটামিন। আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও।
লেবু- লেবুর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও আয়রণ শোষণেও কাজে লাগে লেবু। তাই নিয়ম করে লেবু খান। শরীরে বাড়বে রক্ত।
বেদানা- বেদানার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি। এছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। একগ্লাস ইষদুষ্ণ দুধের সঙ্গে বেদানা মিশিয়ে খান। এতেও শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। সবথেকে ভাল রাতে ঘপমোতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে খেজুর ফেলে খান। এতেও ভাল কাজ হবে। দৃষ্টিশক্তিও ভাল হবে।
আপেল- কথায় বলে রোজ একটা করে আপেল খেলে চিকিৎসা খাতে খরচ কমেন যায়। আপেলের রয়েছে একাধিক গুণ। আর তাই রোজ একটা করে আপেল খেতে পারলে খুব ভাল। বিশেষত মেয়েরা রোজ আপেল খান। আপেল দিয়ে প্যানকেক, আপেল পাইও বানিয়ে নিতে পারেন।
কিশমিশ- রক্ত গঠনের জন্য ভূমিকা রয়েছে কিশমিশের। কিশমিশের মধ্যে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। বিশেষত কালো কিশমিশের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। তাই কিশমিশ খান নিয়ম করে, এতে বেশি ভাল কাজ হবে।
ডুমুর- ডুমুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ১, বি ২, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্লোরিন। রোজ রাতে দুটো ডুমুর জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে তা ছেঁকে খান। এতেও বাড়বে হিমোগ্লোবিন। এছাড়াও বানিয়ে নিতে পারেন ডুমুরের তরকারিও।