Aiburo Bhaat: অভিনব আইবুড়ো ভাতের সাক্ষী রইল হাওড়া-তারকেশ্বর লোকাল ট্রেন, কেমন ছিল সেই মেন্যু?
Local Train: এই আইবুড়ো ভাত অন্যান্য আইবুড়ো ভাতের চেয়ে রাজেশের জীবনে একটু স্পেশ্যাল। কারণ তাঁর বন্ধুরা আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করেছে লোকাল ট্রেনে। যে তারকেশ্বর-হাওড়া লোকালে তাঁদের বন্ধুত্ব, যে ট্রেন তাঁদের রোজের সঙ্গী, ঠিক সেখানেই।

প্রিয় বন্ধুর বিয়ে। তাই বন্ধুরা মিলে আইবুড়ো ভাত খাওয়াতেই হবে। সে নিজে রান্না করে হোক, অথবা কোনও নামীদামি রেস্তোরাঁতে গিয়ে—বন্ধুর পছন্দের পদ থাকতেই হবে মেন্যুতে। কিন্তু যখন বন্ধুত্ব তৈরি হয় লোকাল ট্রেনে, তখন কীভাবে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হয়, জানেন? লোকাল ট্রেনেই। চলন্ত লোকাল ট্রেনেই চলেছে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর পর্ব। শুনতে অবাক লাগছে? সম্প্রতি এই ছবি দেখা গেল তারকেশ্বর-হাওড়া লোকালে। আজ ১ মে, সোমবার রাজেশের বিয়ে। তাই দেরি না করে গত ২৮ এপ্রিল লোকাল ট্রেনের বন্ধুরা তাঁর জন্য আয়োজন করেছিলেন আইবুড়ো ভাতের।
প্রতিদিন লোকাল ট্রেনে তারকেশ্বর থেকে হাওড়া যান অনেকেই। হাওড়া স্টেশনে নেমে তারপর যে যার গন্তব্যে। আবার দিনের শেষে হাওড়া থেকে একইভাবে বাড়ি ফেরা। এই ‘আসা-যাওয়ার মাঝে’ এমন অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়, যাঁদের হয়তো মনে না রাখলেও চলে। আবার এমন কিছু বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যা হয়ে যায় আরও একটা পরিবারের মতো। যাঁদের সঙ্গে অফিসের ঝামেলা থেকে সংসারের সুখ-দুঃখের কথা একটু হলেও শেয়ার করা যায়। এমনই যাতায়াতের সূত্রে ট্রেনে বন্ধুত্ব রাজেশের সঙ্গে অরূপ, দেবু, রঞ্জন, অনির্বাণ, পাপ্পু, রিন্টু, মিলন, দীপক, কমলের। আর বন্ধুর বিয়ে শুনে আনন্দ চেপে রাখতে পারেননি তাঁরাও। যেমন কথা, তেমন কাজ। বন্ধুর আনন্দে আরেকটু রং মিশিয়ে দিতে আয়োজন হয়ে গেল আইবুড়ো ভাতের।
তবে, এই আইবুড়ো ভাত অন্যান্য আইবুড়ো ভাতের চেয়ে রাজেশের জীবনে একটু স্পেশ্যাল। কারণ তাঁর বন্ধুরা আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করেছে লোকাল ট্রেনে। যে তারকেশ্বর-হাওড়া লোকালে তাঁদের বন্ধুত্ব, যে ট্রেন তাঁদের রোজের সঙ্গী, ঠিক সেখানেই। চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই পাত পেড়ে আইবুড়ো ভাত খাওয়ালেন তাঁর বন্ধুরা। লেবু, লঙ্কা থেকে শুরু করে চিংড়ি, পোনা, দই, পায়েস… সব কিছু ছিল আইবুড়ো ভাতের মেন্যুতে। লেবু, লঙ্কা, শসা, ভাত, এঁচোড় চিংড়ি, মাছের কালিয়া, চাটনি, সন্দেশ, পায়েশ, দই। সঙ্গে ছিল কোল্ড ড্রিংক্স। এলাহি আয়োজন। চলল দেদার খাওয়া-দাওয়া।
চলন্ত লোকাল ট্রেনে আইবুড়ো ভাতের আয়োজন কুর্নিশ কুড়িয়েছে ফেসবুকেও। যদিও রাজেশ, রঞ্জন, অনির্বাণ, অরূপ, দেবুদের টিমে এমন ছোট-ছোট আনন্দ উদযাপন হয় প্রায়শই। বিজয়া, নববর্ষ থেকে শুরু করে ইতু পুজো, ঘেঁটু পুজো, কীর্তন সব কিছুতেই চলে খাওয়া-দাওয়া। আর কারও জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকের মতো আনন্দ তো রয়েছেই। যদিও তখন মেন্যুতে সন্দেশ, রসগোল্লা, বোঁদে, বাতাসা থাকে। আর শীত এলে ঠান্ডার আমেজে চলে টি-পার্টি। মানে চা আর কফি।
অন্যান্য দিনের এই আনন্দগুলোর থেকে রাজেশের আইবুড়ো ভাতের আয়োজনটা একটু অন্য ছিল। এঁচোড় চিংড়ি, মাছের কালিয়া, চাটনি এগুলো তো রান্না করতে আনতে হবে। সেই দায়িত্বটা কে নেবে? এখানে তাঁরা ফিরে গিয়েছিলেন একদম ওল্ড স্কুল ভার্সনে। ঠিক ছোটবেলায় স্কুলে পিকনিক হলে, এক-একজন এক-একটা পদ রেঁধে আনত। লোকাল ট্রেনে আইবুড়ো ভাতের আয়োজনেও তেমনটি ঘটেছে। লোকবল বেশি থাকায় একজনের দায়িত্বে মাছ, একজনের ঘাড়ে পায়েস, আবার কেউ লেবু-লঙ্কার দায়িত্বে। আর এভাবেই হইহই করে কাটল তারকেশ্বর-হাওড়া লোকালে আইবুড়ো ভাত-পর্ব।
