শিঙ্গাড়ার (Samosa) স্বরূপ চেনা সকলের কর্ম নয়। শিঙ্গাড়া প্রেমিকরা একথা সম্যক উপলব্ধি করেন। মানবজন্মে শিঙ্গাড়ার ভূমিকা পথপ্রদর্শকের মতোই। যে মানুষ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর ঝিঁঝিঁ ডাকা লোডশেডিং সন্ধেবেলায় ভূতের গল্পের সঙ্গে মুড়ি, পিঁয়াজ কুচি, কুচানো লঙ্কার সঙ্গে গোটা দুই শিঙ্গাড়া মাখিয়ে খাননি, তাঁর কাছে বর্ষার রহস্য আজও অধরাই রয়ে গিয়েছে। কিংবা যে লোক প্রেম করতে গিয়ে সঙ্গী বা সঙ্গীনির প্লেটের শিঙ্গাড়ার শেষ টুকরো তেঁতুলের চাটনি সহযোগে ছোঁ মেরে তোলেননি তিনিও জানেন না ভালোবাসা কারে কয়। ইহজগতে শিঙ্গাড়ার নাম একাধিক। বাঙালির শিঙ্গাড়া (Bengali Samosa) বঙ্গের সীমানা পেরিয়ে সামোসা (Indian Street Food) ! তাই বলে কি তার মহিমা অস্বীকার করা যায়। কতশত বলিউড ছবি উতরে গিয়েছে শিঙ্গাড়ার দ্রব্যগুণে! আমির খানের ‘দঙ্গল’ থেকে শুরু করে হৃত্বিক রোশনের ‘গুজারিশ’, হিট হতোই না যদি হিরোরা ওজন বাড়ানোর জন্য সামোসার শরণাপন্ন হতেন!
শিঙ্গাড়ার হৃদয়খানিও যথেষ্ট বড়। শিঙ্গাড়ার দেহের ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন পুর ঠুসে কতশত পরীক্ষা যে হয়েছে! কেউ দিয়েছেন নুডলস, কেউ দিয়েছেন মাংসের কিমা, কেউ পুরেছেন পনির, কেউ মিষ্টি, কেউ ঠেসে দিয়েছেন ফুলকপি! এতশত ল্যাব টেস্টের পরেও আলুর শিঙ্গাড়ার কোনও বিকল্প মেলেনি। শুধু বর্ষা কেন, বছরের যে কোনও মাস হোক বা দিন, সকাল হোক বা ঘেমো দুপুর— আলুর শিঙ্গাড়া মুখে তুলতে দ্বিধা করেনি ভারতবাসী। মোদ্দা বিষয়টা হল, ভারতের কোণে কোণে রয়েছে শিঙ্গাড়াপ্রেমী। শিঙ্গাড়া নিয়ে তাই আদিখ্যেতারও অন্ত নেই। সম্প্রতি এমনই এক শিঙ্গাড়া সংক্রান্ত কাজকর্ম ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেই সংবাদ দেখে শিঙ্গাড়াপ্রেমীদের চোখ উঠে গিয়েছে কপালে! কী সেই কান্ড?
উত্তরপ্রদেশের মিরাটের এক ব্যবসায়ী শিঙ্গাড়া নিয়ে শুরু করেছেন প্রতিযোগিতা। মিরাটের ওই ব্যবসায়ীর তৈরি শিঙ্গাড়ার নাম ‘বাহুবলী সামোসা’। ওই ব্যবসায়ীর শর্ত অনুসারে, বিজয়ী ব্যক্তি পাবেন ৫১ হাজার টাকা। শর্ত একটাই— ‘সামোসা’ খাওয়ার সময়সীমা হবে ৩০ মিনিট। নিশ্চয় ভাবছেন এ আর এমন কী ব্যাপার! একটা বাচ্চাও এক কামড়ে শিঙ্গাড়া উদরস্থ করবে। তাহলে একটু শান্ত হন। আপনি ফের শিঙ্গাড়ার নামটি খেয়াল করুন— ‘বাহুবলী সামোসা’। নাম পড়েই বোঝা উচিত ছিল এই শিঙ্গাড়া যে সে শিঙ্গাড়া নয়। একটি শিঙ্গাড়ার ওজনই হল ৮ কেজি!
জানলে অবাক হবেন, এখনও অবধি কেউ চ্যালেঞ্জটি পূরণ করতে পারেনি। অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন তবে, ৩০ মিনিটে ওই শিঙ্গাড়া শেষ হয়নি।
মিরাটের কুর্তি বাজারে একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। ওই মিষ্টির দোকানের কর্ণধারই দিয়েছেন এই চ্যালেঞ্জ। দোকানদার জানিয়েছেন, তিনি চেয়েছিলেন তার দোকান বিখ্যাত হোক। আর তাই তার মাথায় এই আকর্ষণীয় বাহুবলী সামোসা তৈরির চিন্তা আসে। প্রথমে তিনি ৪ কেজির শিঙ্গাড়া তৈরি করেছিলেন। তবে পরে মত বদলে ৮ কেজির শিঙ্গাড়া তৈরি করেন।
দাম কত?
দোকানদার জানিয়েছেন, ৮ কেজি ওজনের ‘বাহুবলী সামোসা’ বানাতে তাঁর খরচ হয় ১১০০ টাকা। মটর, আলু, পনির ছাড়াও এই সামোসায় ভরা থাকে শুকনো ফল! ইতিমধ্যে অনেকেই আধঘণ্টায় ৮ কেজির সামোসা খাওয়ার চেষ্টা করেও ফেল মেরেছেন। এখন দোকানি বলছেন, তিনি এই ৮ কেজির সমোসার ওজন বাড়িয়ে ১০ কেজি করতে চলেছেন। সম্ভবত ওই শিঙ্গাড়া খাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত উপ্পলপতি ভেঙ্কট সত্যনারায়ণ প্রভাস রাজুকেই ডাকতে হবে!