খাবার সংরক্ষণের (Food Preservatives) প্রক্রিয়া কিন্তু আজকের নয়। বহু দিন ধরেই চলে আসছে। মাছ কিংবা মাংসের এই যে বর্তমান ম্যারিনেশন পদ্ধতি তা কিন্তু এসেছে এই সংরক্ষণ থেকেই। আদিম কাল থেকেই নুন, সরষের তেল এসব মাখিয়ে মাছ, মাংস সংরক্ষণ করে রাখা হত। পরবর্তীকালে চিনিও ব্যবহার করা হয়। আচার বা চাটনি আমাদের সকলের ভীষণ পছন্দের। আর এই আতার বানানোর পদ্ধতিও একরকম খাদ্য সংরক্ষণ। আচারের মধ্যে যে সব মশলা, তেল, নুন দেওয়া হয় তা সংরক্ষণের কাজ করে। এছাড়াও পরবর্তীতে টিনজাত খাবারের প্রচলন হয়। বিস্কুট, মিষ্টি থেকে শুরু করে কনডেন্স মিল্ক তা কিন্তু টিনের কৌটোতেই সংরক্ষণ করা হত। সেই ধারা মেনে বর্তমানে টিনের কৌটো করে রসগোল্লা, পান্তুয়া এসব বিক্রি করা হয়।
তবে আজকাল এই খাবার সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় কিন্তু এসেছে অনেক বদল। এখন মানুষের চাহিদাও বেড়েছে। দার্ঘদিন ধরে খাবার সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা হয়। এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে খাদ্য রফতানি করা হয়। আর যে কারণে বেড়েছে প্রিজারভেটিব হিসেবে রাসায়নিকের ব্যবহার। এই ফুড প্রসেসিং বা প্রিজারভেশন এখন আলাদা ইন্ডাস্ট্রি। পুরোপুরি ব্যাবসায়িক স্বার্থেই কিন্তু খাবার সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু এই সব খাবার সংরক্ষণ করতে এবং দীর্ঘদিন ভাল রাখতে যে সব উপাদান ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু শরীরের জন্য একেবারেই ভাল নয়।
খাদ্য সংরক্ষণ করে তাকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। সেই সঙ্গে স্বাদগত দিক থেকে যাতে পরিবর্তন না আসে এ ব্যাপারেও কিন্তু নজর রাখা হয়। সংরক্ষণের দুটো পদ্ধতি রয়েছে। শারীরিক ও রায়ায়নিক। বেশ কিছু খাবার থাকে যা শুকনো করে সংরক্ষণ করা হয় আবার কিছু খাবার আছে যা একেবারে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হয়। এই রাসায়নিক সংরক্ষণের সঙ্গে সংযোজন জড়িত। অর্থাৎ চিনি, লেবুর রস, নুন এসব ব্যবহার করেই কিন্তু কৃত্রিম প্রিজারভেটিব বানানো হয়। আর এর মধ্যে থাকে বেনজোয়েট, শরবেট, নাইট্রাইটস- যা মূলত অক্সিডেশনে বাধা দেয়।
এছাড়াও থাকে সোডিয়াম সালফাইট, সোডিয়াম বাইসালফাইট, পটাশিয়াম সালফাইট, পটাশিয়াম মেটাবিসালফাইট, বুটাইলেটেড হাইড্রোক্সিয়ানিসোল, বুটাইলেটেড হাইড্রোক্সিটোলুইন ইত্যাদি। এর মধ্যে মোম জাতীয় পদার্থ বুটাইলেটেড হাইড্রোক্সিয়ানিসোল ব্যবহার করা হয় মাছ-মাংস সংরক্ষণে। বুটাইলেটেড হাইড্রোক্সিটোলুইন ( BHT)পাউডার ব্যবহার করা হয় মাখন, মেয়োনিজ, চিজ এসব সংরক্ষণে। আর শরীরের জন্য এই সবকটি উপাদান কিন্তু বিষাক্ত। ক্যানসার থেকে কিডনির সমস্যা যে কোনও কিছু আসতে পারে। যে কারণে কিন্তু বাইরের খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। পছন্দের সসেজ, সালামিতে, চিপস, কোক, বার্গার সবেতেই কিন্তু থাকে এই প্রিজারভেটিভ। তাই প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলতে পারলেই ভাল।