বাটার চিকেন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত নন-ভেজ ডিশগুলির মধ্যে একটি। সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের বাটার চিকেন পাওয়া যায়। কোথাও বাটার চিকেন মিষ্টি, কোথাও মশলাদার। কেউ কেউ বাটার চিকেনে টমেটোর সঙ্গে শুধুমাত্র ক্রিম ব্যবহার করেন। আবার অনেক জায়গায় টমেটো পিউরিতেও কাঁচা টমেটো মেশানো হয়।
কোথাও হাড়ি ব্যবহার করে কারি তৈরি করা হয়, আবার কোথাও হাড়ি ব্যবহার করা হয় না। অর্থাৎ যত দেশ আছে তত বাটার চিকেন আছে। তবে বাটার চিকেনের ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। স্বাধীনতার পর পুরনো দিল্লিতে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। অর্থাৎ এই কাহিনী কোনও রাজা মহারাজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে এটা কোনও গরিবের খিচুড়ি নয়, আবার মধ্য এশিয়ার কাবাবও নয়। বাটার চিকেন- প্রয়োজনের গল্প।
বাটার চিকেন এমন লোকদের গল্প যাঁরা পাকিস্তান থেকে এসে দিল্লিতে ব্যবসা করছিলেন। পুরনো দিল্লির মতি মহল হোটেলে সকাল-সন্ধ্যা নন-ভেজ খাবার পাওয়া যেত। বেশিরভাগ খাবার তন্দুরে প্রস্তুত করা হত। একদিন তন্দুরি চিকেন বেঁচে গেল। বেশি তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু সেদিন কম লোক এসেছিল খেতে। তাই মনে করা হয় মতি মহলের বাবর্চি অবশিষ্ট তন্দুরি চিকেনের মধ্যে ক্রিম মিশিয়ে এবং টমেটো তরকারি তৈরি করে তারপর তাতে তন্দুরি চিকেন দিয়ে বাটার চিকেন তৈরি করেন।
পুরনো দিল্লিতে এখনও পাওয়া যায় এই তন্দুরি স্টাইলের বাটার চিকেন। যেখানে আগে চিকেনটা তন্দুরে রান্না করা হয়। তারপর তাতে বাটার আর ক্রিম যোগ করা হয়। তারপর ওপর দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হল চাট মশলা। পুরনো দিল্লির স্ট্রিট ফুড হিসাবে বেশ জনপ্রিয় এই তন্দুর স্টাইলের বাটার চিকেন।
যে সময় এই বাটার চিকেনের জন্ম হয়েছিল, লোকজন বেশ পছন্দ করেছিল। সুতরাং, বাটার চিকেন রান্না করার সময় মনে রাখবেন, অথেন্থিক বাটার চিকেনে মাংসটা প্রথমে তন্দুরে রান্না করা জরুরি। এটি রান্না করার পরে সরাসরি রাখা হয় না। প্রথমে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে তারপর কারি তৈরি করে রান্না করা হয়।
কিন্তু তখনকার বাটার চিকেন আর আজকের বাটার চিকেনের মধ্যে পার্থক্য আছে। তখন আমুল মাখন ছিল না অর্থাৎ সাদা মাখন ব্যবহার করা হত। দ্বিতীয় পার্থক্যটি ছিল এটিতে কোনও রঙ ছিল না, তাই এটি অবশ্যই কিছুটা হলদেটে দেখতে ছিল, যেখানে আজ বাটার চিকেনে লাল রঙের কারি হয়।
কিন্তু এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাটার চিকেনকে। বাটার চিকেন এতটাই বিখ্যাত হয়ে ওঠে যে লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে হাজার হাজার দোকান আছে যেখানে বাটার চিকেনের নামে অন্য ধরনের চিকেন কারি বিক্রি হয়। দিল্লিতে এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলি আপনাকে দরিয়াগঞ্জের পুরানো মতি মহলের স্টাইলে বাটার চিকেন দেয়, কিন্তু সত্য হল গত ৬০ বছরে বাটার চিকেনও বদলে গেছে। কিন্তু তার গল্প বদলায়নি।
আরও পড়ুন: শীতে শরীরকে গরম রাখতে চান? চটপট তৈরি করে ফেলুন এই ক্রিমি টেক্সচারের স্যুপ