অগ্রহায়ণ মাসের শেষেই নতুন ধান ওঠে। নতুন গুড়ের গন্ধে ম ম করে চারিদিক। সকালে খেজুর গুড়ের রস, ঝোলা গুড় দিয়ে গরম রুটি, পাটালি দিয়ে পায়েস, নতুন গুড়ের রসগোল্লা এসব আসে বাজারে। গুড়ের সঙ্গে চালের গুঁড়ো, নারকেলের পুর ভরে তৈরি হয় হরেক পিঠে। সেই প্রাচীন থেকেই পিঠের (Poush Parbon)প্রচলন ছিল। পিঠেকে তখন মিষ্টান্ন ( Bengali Pithe) হিসেবেই ধরা হত। কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে মঙ্গলকাব্য সবেতেই কিন্তু উল্লেখ রয়েছে পিঠের। সেখানে সরা পিঠে, পুলি পিঠে, ভাজা পুলি (Patishapta recipe) নানা রকম পিঠের কথা বলা হয়েছে।
শহরে এখন বাড়িতে বাড়িতে পিঠের চল (Makar sankranti 2022) প্রায়ই আর নেই। বেশিরভাগই দোকান থেকে কিনে খেতেই অভ্যস্ত। বাড়িতে ঝামেলা চান না অনেকেই। এছাড়াও পিঠে গড়তে যে ধৈর্য লাগে, যে পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় তাতে নারাজ বেশিরভাগ। এই প্রজন্মের অনেকে আবার পিঠে ঠিক পছন্দও করে না। তবুও শীতের দিনে কড়াইশুটির কচুরি, আলুর দম, চুষির পায়েস, দুধপুলি এসব খাবারের মধ্যে কিন্তু মিশে থাকে বাঙালির ঐতিহ্য (Bengali pithe recipe)।
গ্রামের দিকে কিন্তু এখনও জমজমাট করে চলে নবান্ন, পিঠে পার্বণের প্রস্তুতি। মাটির উনুনে সরায় পিঠে বানানোর রীতি রয়েছে সেখানে। পৌষ পার্বণের দিন সকাল থেকেই সকাল থেকেই চলে তোড়জোড়। একদিকে চাল গুঁড়ি তৈরি করা, নারকেলের পুর বানানো, পিঠে গড়া, গুড়ে পাক দেওয়া এসব চলতেই থাকে। সকালে গৃহদেবতার পুজোর পর বাড়িতে বানানো হয় নবান্ন। চাল গুড়ো, দুধ, নানা রকম ফলের মিশ্রণেই বানানো হয় এই নবান্ন। ক্ষীর পুলি, পাটিসাপটা, রস বড়া, মুগ পুলি, ভাপা পিঠি, সিদ্ধ পিঠে, গোকুল পিঠে এসব তো হবেই। তাই আজ রইল ভিন্ন স্বাদের দুটি জনপ্রিয় পিঠে রেসিপি। নারকেল-ক্ষীর নয়, বানিয়ে নিন চিকেনের পুর দিয়েই (Chicken Pitha Recipe)।
চিকেন পাটিসাপটা
যা যা লাগছে
চিকেন কিমা- ২০০ গ্রাম
লঙ্কা কুচি
পেঁয়াজ কুচি
টমেটো কুচি
ধনেপাতা কুচি
আদা রসুন বাটা
লেবুর রস
গরম মশলা গুঁড়ো
স্বাদমতো নুন
হলুদ
ব্যাটারের জন্য
২৫০ গ্রাম- ময়দা
৩ চামচ- সুজি
৩ চামচ- চালের গুঁড়ো
যে ভাবে বানাবেন
প্রথমে ব্যাটার বানিয়ে নিন। ময়দা, চালের গুঁড়ো, সুজি আর সামান্য নুন মিশিয়ে একটু একটু করে জল মিশিয়ে গোলা তৈরি করে নিন। এবার ফ্রাইং প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি, টমেটো, আদা রসুন বাটা, চিকেন কিমা, সামান্য লাল লঙ্কার গুঁড়ো আর নুন দিয়ে কষিয়ে নিন। এর মধ্যে একে একে বাকি মশলা, কাঁচা লঙ্কাকুচি, ধনেপাতা মিশিয়ে নিন। ভাল করে কষে এলে সোয়া সস বা এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নামিয়ে নিন। পুরো শুকনো হবে পুরটা। এবার ব্যাটার দিয়ে চিকেনের পুর ভুরে এদিক-ওদিক থেকে মুড়ে নিলেই তৈরি পাটিসাপটা (Chicken Patishapta)।
মাংস পিঠে
মাংস ছোট ছোট টুকরো করে নিন। বোনলেস পিস হতে হবে। এবার এর সঙ্গে নুন, গোলমরিত গুঁড়ো, লেবুর রস, এক চামচ ধনে পাউডার, জিরে গুঁড়ো, গরম মশলা পাউডার মিশিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ, আদা-রসুনের পেস্ট, টমেটো, লঙ্কা কুচি, লঙ্কা গুঁড়ো আর স্বাদমতো নুন- চিনি দিয়ে কষিয়ে চিকেন দিন। খুব ভাল করে কষিয়ে নিতে হবে।
বেশ ভাল করে কষা হলে ঢেকে রাখুন ১০ মিনিট। এবার তিন কাপ গরম জল ঢালুন চিকেনের মধ্যে। চিকেন যাতে জলে ঢাকা পড়ে এমন পরিমাণে জল দিতে হবে। এবার এর মধ্যে চালের গুঁড়ো আস্তে আস্তে মিশিয়ে ভাল করে পাক করে নিন। এবার শালপাতায় সরষের তেল বুলিয়ে পুরো মিশ্রণটি ঢালুন। গ্যাস একেবারে সিমে রেখে তাওয়া বসিয়ে তাতে এই পিঠে বসান। উপর থেকে আরও একটা শালপাতা ঢাকা দিয়ে দিন। এই পিঠে কিন্তু ভাপে হবে।
আরও পড়ুন: Recipe: সংক্রান্তির দিন স্পেশাল বানাতে বাড়িতে বানান গাজরের বরফি! রইল তার রেসিপি