দোল এলেই ছোটবেলার সেই দিনগুলি মনে পড়ে যায় সকলের। বিশেষ করে যাঁরা ৯০-এর স্বর্ণযুগে দোল খেলেছেন। এখন তাঁরা কেউ অফিসের বস, কেউ আবার বিদেশে বড় বিজ্ঞানী। একটা সময় ছিল যখন চুটিয়ে রঙ খেলার ফাঁকে ফাঁকে চলত এই মঠ আর ফুটকড়াই মুখে চালান করা। দোকানের সামনে থালায় প্রচুর রঙবেরঙের মঠ সাজানো থাকত। পাশে থাকত ফুটকড়াই। কালচে ভাজা মটরের ওপর চিনির আস্তরণ। মুখে দিয়ে চিবলে কড়মড় করে আওয়াজ হত। এও ছিল দোল খেলার সময়ের অত্যাবশ্যকীয় আইটেম। সঙ্গে সাদা মুড়কি। অর্থাৎ চিনির মুড়কি। একটা সময় ছিল যখন দোলের পর মিষ্টিমুখ মানেই ছিল মঠ, ফুটকড়াই আর সঙ্গে সাদা মুড়কি। এখনও চল আছে. তবে এগুলো কিছু কিছু পরিবারে পুজো দেওয়া হয়। দোলের দিনের পুজোয় এগুলো আবশ্যিক। পারিবারিক রীতি মেনে এখনও দেবতার পাতে জায়গা করে নেয় এগুলি। গোলাপি, হলুদ, সাদা মূলত এই ৩ রঙে মেলে মঠ।
দোলযাত্রা আসলে একটি ধর্মনিরপেক্ষ উত্সব। এদিন সকাল থেকেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একে অপরকে আবির,গুলাল, রঙ মাখানো বাড়ি বাড়ি মিঠাই, মট, ফুটকড়াই প্রভৃতি শুকনো খাবার খেয়ে খেলায় মত্ত থাকেন সকলে। মট মূলত চিনির তৈরি উঁচু শক্ত একটি মিষ্টি । সেটা মোমবাতি,ফুল, পাখি-সহ বিভিন্ন আকারের আর বৈচিত্রের মট পাওয়া যেত দোকানে। চুটিয়ে রঙ খেলার ফাঁকে মুখে চালান হয়ে হত এই মট ও ফুটকড়াই ।
তবে, মটের ইতিহাস বেশ সুপ্রাচীন। দোল পূর্ণিমায় রাধামাধবের প্রসাদের থালায় বাতাসা কদমার মাঝখানে সাজানো মন্দিরের চূড়ার আকারের মিষ্টিটাই হল মট। চিনির কড়া পাক দিয়ে সেই সান্দ্র তরল কাঠের ছাঁচে জমিয়ে বা ফুটো পাত্রের ভিতর দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা ফেলে এই মট প্রস্তুত করা হয়। এটি ৫-৬ সেন্টিমিটার উঁচু একটি শুকনো ও অত্যন্ত পরিচিত মিষ্টি। যদিও এই মট মিষ্টান্ন বাঙালিয়ানার কৃষ্টি না হলেও বাঙালি একে আপন করে নিয়েছে তার সংস্কৃতিতে। মট মূলত পর্তুগিজ মিঠাই। হুগলির ব্যান্ডেল চার্চে প্রথম এই মিষ্টি যিশুর প্রসাদী থালায় পাওয়া যায়। পরে বাঙালি ময়রারা পরম স্নেহে মটকে বাঙালি বানিয়ে ফেলেছেন। তাকে গোলাপি, হলুদ, লাল নানান রঙে রাঙিয়ে দোলের অন্যতম ও আবশ্যিক মিষ্টি বানিয়ে তুলেছেন।