এক কাপ চা যে কী অসীম শক্তিশালী হতে পারে তার প্রমাণ বাঙালি পদে পদে পেয়েছে! মহার্ঘ ক্যাফেটেরিয়া হোক কিংবা নন্দুদার চায়ের দোকান— গরম চায়ের জোড়া পেয়ালা যে কতশত প্রেমের উষ্ণতা বাড়িয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত চায়ের অনুরাগী (Tea Lover) ছিলেন। জানা যায়, ঠাকুর পরিবারে নিয়মিত মজলিশি আড্ডার অঙ্গ ছিল চা। এমনকী শান্তিনিকেতনেও গুরুদেব চায়ের আসর গড়েছিলেন। নাম ছিল সুসীম চা-চক্র! জাপান ভ্রমণকালেই তিনি চায়ের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। জাপানে ভদ্র বাড়িতে চা পানের অভ্যেস রয়েছে। বিশেষ করে অতিথি আপ্যায়নে চা বিশেষ ভূমিকা নেয় ওই দেশে। কবিগুরু সেই অভ্যেসে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে পরবর্তীকালে চা পানে তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়। দেশে ফিরে অন্যদেরও তিনি চা পানে উৎসাহ জোগাতেন!
চিনদেশের নাগরিকদের মধ্যেও চা পান নিয়ে আগ্রহ লক্ষণীয়। অতএব চা নিয়ে সমগ্র বিশ্বের মানবজাতির অন্যমাত্রার আবেগ রয়েছে। তবে আবেগ যে কতখানি মহার্ঘ হতে পারে তার প্রমাণ মিলল চায়ের এক নিলামে। অসমের এক চা (Assam Tea) বাগানে উৎপাদিত মাত্র ১ কেজি চা বিক্রি হল ১ লাখ টাকায়! কেন এত দাম?
অসমের গোলাঘাট জেলায় এক চা বাগানে বিরল ধরনের ভেষজ চা উৎপাদিত হয়। চায়ের নাম ‘পাভোজন গোল্ড টি’ (Pabhojan Gold Tea)। সম্প্রতি জোরহাটে আয়োজিত এক নিলামে ওই চা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ লাখ দামে! জোরহাট-টি অকশন সেন্টারের আধিকারিকরা এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত চায়ের মূল্য হিসেবে এই দাম সর্বাধিক। পাভোজন ভেষজ চা বাগানের কাছ থেকে ‘ঈশা টি’ নামক এক সংস্থা ওই চা আকাশচুম্বী মূল্যে কিনেছে বলে জানা গিয়েছে।
কী আছে এই চায়ে? জানা যাচ্ছে উজ্জ্বল হরিদ্রাভ চায়ের লিকার তৈরি হয় এই চা থেকে। এই চায়ে চুমুক দিলেই মেলে গভীর প্রশান্তি! ‘সেকেন্ড ফ্ল্যাশ’ বা মরশুম অনুসারে চা বাগান থেকে দ্বিতীয়বার সংগ্রহ করে আনা চা অনেকটা সোনার বর্ণ ধারণ করে। এই চা পাতাই পেয়ালার লিকারে আনে গলানো সোনার মতো রূপ!
ঈশা টি সংস্থার চিফ একজিকিউটিভ অফিসার বিজিত শর্মা জানিয়েছেন, ‘চা বিলাসিদের ক্ষেত্রে অসমের এই বিরল ধরনের চা পান পৃথক অভিজ্ঞতা বয়ে নিয়ে আসবে। সারা বিশ্বেই আমাদের গ্রাহক রয়েছে। তাঁরা এই চায়ের গুরুত্ব জানেন। আমরা গ্রাহকদের কাছে খাঁটি অসম চায়ের স্বাদ ও গন্ধ পৌঁছে দেওয়ার ধারা অব্যাহত রাখতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।’
পাভোজন চা বাগানের বর্তমান কর্ণধার রাখি দত্ত সাইকিয়া জানিয়েছেন, রেকর্ড ভঙ্গকারী মূল্যে চায়ের বিক্রি ইতিহাস তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে এই বৈচিত্র্যের চা মাত্র ১ কেজি উৎপাদন করাই সম্ভব হয়েছিল! বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, উচ্চমূল্যে চায়ের বিক্রি অসম চা শিল্পের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে। একইসঙ্গে ধুঁকতে থাকা চা শিল্পকেও অনেকখানি অক্সিজেন জোগাবে।
মূলত বিচক্ষণ ও চা বিলাসী গ্রাহকদের অত্যধিক চাহিদার কারণেই এই বিরল ধরনের চায়ের উৎপাদন করার ব্যাপারে উৎসাহী হয় পাভোজন টি এস্টেট।