গরম কালের সবজি বাজারে শুধুই সবুজের সমারোহ। লাউ, ঝিঙে, পটল, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ, উচ্ছে- আর এই প্রতিটি সবজিরই একাধিক উপকারিতাও রয়েছে। গরমের প্রকৃতি রুক্ষ, আর তাই গরমের যে কোনও সবজির মধ্যেই জলের ভাগ থাকে বেশি। সেই সঙ্গে থাকে একাধিক খনিজ, ভিটামিনও। গ্রীষ্মকালীন সবজিটি লাউ এবং ঝিঙে পরিবারের অংশ। ইংরেজিতে এই সবজিকে বলা হয় Snake Gourd। বাংলায় চিচিঙ্গা। চিচিঙ্গার মধ্যেও একাধিক উপকারিতা রয়েছে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সবেতেই খুব ভাল কাজ করে এই সবজি। এছাড়াও গরমের দিনে বাড়ে পেটের রোগের সমস্যা। আর তাই জন্ডিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই সবজি খুব ভাল কাজ করে।
রোজ কেন পাতে রাখবেন চিচিঙ্গা
দেখতে যেমনই হোক না কেন চিচিঙ্গার মধ্যে রয়েছে একাধিক পুষ্টি-উপকারিতা। তে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড, দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় খাদ্যতালিকাগত ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় খনিজ রয়েছে, যা চিচিঙ্গাকে ঔষধি ও থেরাপিউটিক ভাবে সক্রিয় করে তোলে। এছাড়াও চিচিঙ্গার মধ্যে আছে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এ, ই, পটাশিয়াম, ফসপরাস, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং জিঙ্ক। জ্বর, হজমের সমস্যা, ডায়রিয়া, পেট ফেঁপে যাওয়া, ফোঁড়া, প্রস্রাবের সমস্যায় খুবই উপকারী এই চিচিঙ্গা। এর মধ্যে জলের ভাগ বেশি। ফলে গরমের দিনে তা শরীরকে আর্দ্র রাখতেও সাহায্য করে। বেশ কিছু অ্যালার্জির চিকিৎসাতেও কিন্তু ব্যবহার করা হয় চিচিঙ্গে।
জন্ডিসের চিকিৎসায়- গরম বাড়লেই একাধিক রোগ-সমস্যা বাড়ে। বিশেষত পেটের যে কোনও রোগ। লিভারের সমস্যাও বেশি হয় এই সময়। জলবাহিত রোগ হিসেবে জন্ডিস তো আছেই। জন্ডিস হলে একেবারে হালকা খাবার, জল, কম প্রোটিন খেতে বলা হয়। এক্ষেত্রে চিচিঙ্গা কিন্তু উপকারী। চিচিঙ্গে দিয়ে মাছের ঝোল বা পোস্ত বানিয়েও খেতে পারেন।
ত্বকের ক্ষেত্রে- ত্বক ভাল রাখতেও বূমিকা রয়েছে চিচিঙ্গার। নিয়ম করে এই সবজি খেতে পারলে বার্ধক্য আসে দেরিতে। সঙ্গে ত্বকও থাকে উজ্জ্বল। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ভূমিকা রয়েছে এই সবজির। চুলের গোড়ায় চিচিঙ্গার রস লাগাতে পারলে চুল পড়া কমে।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়- দেশ জুড়ে ক্রমেই বাড়ছে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা। এক্ষেত্রে ফাইবার, সবজি যত বেশি খেতে পারবেন ততই কিন্তু উপকার পাবেন। চিচিঙ্গার তরকারি রোজ রাখুন মেনুতে। এতে ওজনও কমবে আর ডায়াবেটিসও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
হার্ট ভাল রাখতে-চিচিঙ্গায় রয়েছে কিউকারবিটাসিন-বি, কুকুরবিটাসিন-ই, ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকলাপ হিসাবে কাজ করতে পারে। ফলে অক্সিডেটিভ ক্ষতির পরিমাণ কমে। যে কারণে হার্ট ভাল থাকে। হার্টের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়।
হজমের উন্নতি হয়- চিচিঙ্গার মধ্যে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার। যা অন্ত্রের একাধিক কাজে লাগে। খাবারকে সহজে হজম করিয়ে দেয়। অতিরিক্ত কিছু মলের মাধ্যমে বের করে দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও আসে না। আর এই কারণেই রোজকার তালিকায় অবশ্যই রাখুন এই সবজি।