আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা রাতে নিদ্রাজনিত সমস্যায় ভোগেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন অনিদ্রার সমস্যা বলতে বোঝায় রাতে একেবারেই ঘুম না আসা বা ঘুমাতে গেলেও বারংবার ঘুম ভেঙে যাওয়া। চিকিৎসকরা এও বলছেন, বয়স্কদের এমনিতেই ঘুম কম হয়। তবে আজকাল কমবয়সিরাও অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন। এমনিতে প্রত্যেক ব্যক্তির অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা গভীর ঘুমের দরকার। ঘুমের মধ্যেই আমাদের ব্রেন সারাদিনের স্মৃতির ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ করে। দরকারি স্মৃতিগুলিকে ব্রেন ধরে রাখে ও অপ্রয়োজনীয় স্মৃতিকে বাদ দেয়। এছাড়া কোষের নানা কাজকর্মও এই সময়কালে সম্পন্ন হয়। এর ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা তরতাজা অনুভব করি। সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হয়।
অনিদ্রা এবং অসুখ
প্রতিদিন সঠিকভাবে ঘুম না হলে আমাদের মেজাজ হয়ে পড়ে খিটখিটে। আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করি। কারও কারও মাইগ্রেনের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা কমে যায় অনিদ্রার ফলে।
কেন হয় অনিদ্রা
বয়স্কদের এমনিতেই ঘুম কমে যায়। তবে কমবয়সিদের ক্ষেত্রে অনিদ্রার পিছনে মূলত দায়ী থাকে রাত জেগে মোবাইল বা কম্পিউটারে ওয়েব সিরিজ দেখা ও কাজ করা। এছাড়া অফিস ও সংসার নিয়ে উদ্বেগে ভুগলেও আসতে পারে অনিদ্রা। ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমোতে চান অথচ ঘুম আসে না চোখে। এমনকী হাতের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ সরিয়ে রেখেও সেভাবে কোনও কাজ হয় না। অনেকে ঘুমের ওষুধও খান। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে ঘুমের ওষুধের সবচাইতে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল— আসক্তি। তবে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে জাদুকরি এক মশলা যা খেলে ঘুম আসবে ম্যাজিকের মতো। শুধু জানতে হবে সঠিক ব্যবহার!
গোপন মশলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের উপরেও তাঁর ঘুম আসা বা না আসার বিষয়টি নির্ভর করে। এছাড়া সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিষয়টিও জড়িয়ে থাকে ঘুমের উপরেই।
এই কারণে বিশেষজ্ঞরা বারবার সুষম খাদ্যগ্রহণের উপর জোর দেন। এছাড়া তাঁরা বারবার সহজপাচ্য আহার করতে বলেন। তবে আধুনিক জীবনে আমরা জাঙ্ক ফুডের উপর বড্ড বেশি ভরসা করে ফেলেছি। ফলে সর্বদাই আমাদের পেটের গণ্ডগোলে ভুগতে হয়। আর পেটের সমস্যাও অনিদ্রার পিছনে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। জাঙ্ক ফুডের উপর ভরসা করার কারণে সনাতন খাদ্যগুলি সম্পর্কে ভুলতে বসেছি। অথচ সনাতন খাদ্যগুলি আমাদের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িত।
আমরা আজ যে রেসিপি সম্পর্কে বলতে চলেছি তার আয়োজন সামান্য। এই খাদ্যটি আমাদের উত্তেজিত ইন্দ্রিয়গুলিকে শান্ত হতে সাহায্য করে। এছাড়া খাদ্যটি ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে খেলে পেটও ঠান্ডা হয়। এমনকী কমিয়ে দিতে পারে মাথাব্যথা। হ্যাঁ আমরা কথা বলছি পোস্ত বীজ নিয়ে! হিন্দিতে পোস্তকে বলা হয় খুশখুশ। অত্যন্ত পরিচিত এই মশলাটিকে বেটে সাইড ডিশ হিসেবে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন পেট ঠান্ডা রাখতে মশলাটি দুর্দান্ত!
কীভাবে বানাবেন পোস্তবাটা?
সনাতন এবং ঐতিহ্যবাহী এই বাঙালি রেসিপি তৈরি করতে দরকার পড়ে পোস্ত বীজ, সর্ষের তেল, নুন, কাঁচা লঙ্কা। এছাড়া কেউ কেউ ফ্রেশ নারকেল কোরা দিয়েও পোস্ত বাটা খেতে ভালোবাসেন। তবে পেট গণ্ডগোলের ইতিহাস থাকলে নারকেল কোরা না দেওয়াই ভালো।
পোস্তবাটা তৈরির জন্য নিন ৩ চামচ পোস্ত বীজ। একবাটি জলে ঘণ্টাখানেক ধরে ভিজিয়ে রাখুন। এবার একটা কাঁচা লঙ্কা নিয়ে কুচো আকারে কাটুন। এবার কাঁচা লঙ্কা, স্বাদ মতো নুন আর পোস্ত বাটা একসঙ্গে নিয়ে ব্লেন্ডারে দিন। এই সময়েই চাইলে পোস্তবাটাও যোগ করতে পারেন। ব্লেন্ডার চালিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার একটা বাটিতে পোস্তবাটা নিয়ে তার উপর ঢেলে দিন ১ চামচ সর্ষের তেল। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন সুস্বাদু পোস্তবাটা।
কেন পোস্তবীজ খাবেন?
পোস্তবীজ সম্পূর্ণভাবে উদ্ভিজ্জ খাদ্য। পোস্তবীজে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, আয়রনের মতো দেহের পক্ষে উপযোগী খনিজ। তাই খাবারের সঙ্গে পোস্ত খেলে তা হজমে সহায়তা করে, অস্থির জোর বাড়ায়, বাড়ায় প্রজনন ক্ষমতা এবং কমায় মাথাব্যথা। এছাড়া পোস্ত খেলেই জমিয়ে ঘুম আসে। কারণ পোস্তবীজে থাকে ওপিয়াম যৌগ। ওমিয়াম ঘুম আসার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করে। তাই অনিদ্রার সমস্যা হলে রাতে গরম ভাতের সঙ্গে সর্ষের তেল দেওয়া পোস্তবাটা খেয়ে দেখতে পারেন।