‘শিকন না ডাল জবিপর শরাব দেতে হুয়ে
এ মুস্কুরাতি হুই চিজ মুস্কুরাকে পিলা,
নেশা শরাব কি মিখদার পর নেহি মামুদ,
শরাব কম হ্যায় তো সাকি নজর মিলাকর পিলা’
— সুরা দেবার সময় কপালে এরকম কুটিল রেখা এঁকো না তুমি। সুরা মানে আনন্দ, সুতরাং এই আনন্দদায়ক পানীয় হাসিমুখে পান করাও। মনে রেখো, নেশা সুরার পরিমাণের উপর নির্ভর করে না। সুরা কম থাকলে আমার চোখে চোখ মিলিয়ে সুরা ঢেলো, তাতেই আমার চরম নেশা হয়ে যাবে। (শের ও শায়েরি— শচীন ভৌমিক )
আসব অনুরাগীই হন কিংবা শুধু শৌখিন সুরা সংগ্রাহক, সকলেই জানেন শরাব কখনও কখনও উদ্যাপন, কখনও দুঃখ’কে রক্তে প্রবাহ করার সঙ্গী কখনও বা বৈভবের প্রতীক। ওয়াইনপ্রেমীরা জানেন কখন কীভাবে সুরাকে ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে কানাডিয়ান তরল সোনার সংবাদ নিশ্চয় অনেকরই কর্ণগোচর হয়েছে। আসুন আজ আরও কিছু খুঁটিনাটি তথ্য দেওয়া যাক এই সুরা সম্পর্কে। কেন এই ওয়াইন অন্য সকল ‘শরাবে’র থেকে খাস।
আইস ওয়াইন কী?
সুমিষ্ট এই ওয়াইন তার তরল সোনা অভিধাটি অর্জন করেছে স্বর্ণের মতো হরিদ্রাভ আভার জন্য। তবে কানাডিয়ান ওয়াইনের বিশেষত্ত্ব অন্য জায়গায়। আমরা মোটামুটি সকলেই জানি, মদ তৈরির অন্যতম উপাদান হল আঙুর। আইস ওয়াইন তৈরির জন্য যে দ্রাক্ষার প্রয়োজন হয় তা সংগ্রহ থেকে শুরু করে পেষাই অবধি থাকে হিমায়িত অবস্থায়! ঠিক তাই উষ্ণতা শূন্যের ৮ ডিগ্রি নীচে নেমে যাওয়ার পরেই শুরু হয় আইস ওয়াইন তৈরির প্রক্রিয়া। এই কারণেই বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, স্বাদে অন্য সকল কারণ বারির তুলনায় ভিন্নরূপে দোলা দেয় আইস ওয়াইন। বস্তুত দ্রাক্ষারস, শাঁস এবং হিমের কেলাসের মিলনে তৈরি হয় অবর্ণনীয় দ্রাক্ষা নির্যাস। এই নির্যাস থেকেই তৈরি হয় স্বর্গীয় আমেজের আইস ওয়াইন।
উৎসের সন্ধানে
হিমায়িত আঙুর এবং তার থেকে ওয়াইন প্রস্তুত করার রীতি মোটেই নতুন নয়। রোম সাম্রাজ্যের প্রবল বোলবোলার সময়েও এই পদ্ধতিতে ওয়াইন তৈরি হতো। বরং কানাডার ভূমিতে উক্ত প্রক্রিয়ায় মদ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় ৫০ বছর আগে। কানাডার পশ্চিমঅংশের প্রদেশ হল ব্রিটিশ কলম্বিয়া। সেই প্রদেশের ওকনাগন উপত্যকার ওন্টারিও অঞ্চলের নায়াগ্রা অন দ্য লেক শহরের (নায়াগ্রা নদী যেখানে ওন্টারিও হ্রদে মিলিত হয়েছে) শীতলতম এলাকায় এইভাবে শুরু হয় আইস ওয়াইন তৈরি। মূলত আঙুর সংগ্রহের মরশুম পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দ্রাক্ষালতায় ছেড়ে যাওয়া হয় কিছু আঙুর। অপেক্ষা করা হয় সেই আবহাওয়ার জন্য যখন উষ্ণতা নেমে যায় হিমাঙ্কের নীচে! আকাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রায় যখন আঙুর এবং তুষার একে অপরকে আঁকড়ে ধরে, ঠিক তখনই যত্ন করে ঘুম ভাঙানো হয় তাদের।
কীভাবে তৈরি হয় ওয়াইন
বিভিন্ন ধরনের আঙুর থেকে প্রস্তুত করা হয় আইস ওয়াইন। নানা ধরনের আঙুর একত্রে মন্থন করলে তবেই মেলে তরল সোনার দর্শন। রিজলিং, শেঁনা ব্লঁ, ভিদাল ব্লঁ, ক্যাবানে ফ্রাঁ, গেভার্জমিনা, পিনো গ্রি, শিরাহ, ক্যাবানে স্যুভেনিয়ন, ম্যার্লো হল এমনই কিছু আঙুরের জাত। মনে রাখতে হবে আইস ওয়াইন কখনওই পুরনো আঙুর দিয়ে প্রস্তুত করা যায় না। কারণ পুরনো আঙুর উত্তরমেরুর চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না ও ওয়াইনেও অধরা থেকে যায় গোলাপি হরিদ্রাভ বর্ণ। সুতরাং অবাক হওয়ার কিছুই নেই যখন এই ওয়াইনের মাত্র ৩৭৫ মিলিলিটারে নানা বিকল্পের মূল্য নির্ধারিত হয় প্রায় চার হাজার টাকা!
কীভাবে পান করবেন?
এই মহার্ঘ ওয়াইন উপভোগ করার সেভাবে কোনও নির্দিষ্ট পন্থা নেই। তবে শীতল প্রদেশগুলিতে গোলমরিচ, লঙ্কা, কাসুন্দির মতো ঝাঁঝালো মশলা যুক্ত স্যালাড, কারি ও পদের সঙ্গে পান করা হয় এই ওয়াইন। তবে চাইলে চিজ, মাখন বা ফোয়ি গ্রা’র (হাঁসের যকৃৎ থেকে প্রস্তুত বিশেষ খাদ্যবস্তু) খণ্ডের সঙ্গে মশলা দেওয়া ক্যানাপেজ (সাধারণভাবে ছোট্ট খাস্তা বিস্কুট বা রুটির উপর মাখনজাতীয় অথবা ডিমজাতীয় খাদ্যবস্তু রেখে একগ্রাসে খাওয়ার মতো ক্যুইজিন।)-এর সঙ্গেও চুমুক দেওয়া যায় পানপাত্রে।
আরও পড়ুন: Delicious Recipe: সন্ধেবেলার ছোট্ট খিদে? রইল মুখে জল আনা টক-ঝাল-মিষ্টি ম্যাগি ভেলপুরি দুরন্ত রেসিপি