কোনটা বেশি তৃপ্তিদায়ক? ফাউ-এর ফুচকা (Phuchka) নাকি ১০ টাকায় চারটে ফুচকার প্যাকেজ? এই বিষয়ে নিঃসন্দেহে চ্যানেলে চ্যানেলে কয়েক ঘণ্টার ধুন্ধুমার আলোচনাসভা বসতেই পারে। তবে একটা কথা অনস্বীকার্য— সারা দেশে এমন কোনও লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি ফুচকা খেতে ভালোবাসেন না! উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম— ফুচকার প্রশ্নে সকলেই এককাট্টা! অবশ্য বাংলায় আমরা ফুচকাকে ফুচকা বললেও দেশের অন্যান্য প্রান্তে ফুচকার বিবিধ নাম যেমন— গোলগাপ্পা Golgappas), পানিপুরি (Panipuri), ফুচকা, গুপচুপ, পানি কে পাতাশে এবং পাকোড়ি! সকলেই এই সুস্বাদু স্ট্রিট ফুড (Best Indian Street Food) খেতে খুব পছন্দ করেন! প্রশ্ন হল, ফুচকাপ্রেমীরা কি জানেন, ফুচকার জন্ম ঠিক কত বছর আগে? কীভাবে ফুচকা পরিবেশন করা হতো আগে? কারা খাওয়াতো ফুচকা? কাদের খাওয়ানো হত?
আসুন নজর রাখা যাক সেই ইতিহাসে—
ভারতে ফুচকা তৈরি করা হয় একাধিক উপাদানের সমাহারে। আটা, ময়দা, সুজি, নুন, বেকিং সোডা ও জল দিয়ে প্রথমে মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর মণ্ড থেকে ছোট্ট ছোট্ট লেচি কেটে তৈরি করা হয় পুঁচকে আকারের পুরি! এরপর আলুসেদ্ধর সঙ্গে একাধিক ঝাল ও নোনতা মশলা, লেবুর রস মাখিয়ে প্রস্তুত হয় পুর। ফুচকা ফাটিয়ে তার মধ্যে আলুর পুর ঠুসে তাকে ফের ঠান্ডা মশলাদার জলে ডুব দেওয়া করিয়ে বাটিতে পরিবেশন করা হয়! ভাবতেই জিভে জল এসে গেল বুঝি!
লোভ কাটিয়ে আলোচনায় ফেরা যাক। বিষয়টা হল,পুরাণেও কিন্তু ফুচকার উল্লেখ রয়েছে! হ্যাঁ, অনায়াসে যে খাদ্য আপনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মুদিত নয়েনে অনায়াসে টপাটপ মুখে পুরছেন, সেই ফুচকার সংযোগ রয়েছে পুরাণের সঙ্গেও! হ্যাঁ তাই ফুচকার প্রতি খানিক সম্মান প্রদর্শন করে পড়ে ফেলুন বাকি অংশটুকুও!
পুরাণের গাঁথা বিশ্বাস করতে হলে বলতে হয়, দ্রৌপদীই প্রথম পঞ্চপাণ্ডবকে ফুচকা সেবন করিয়েছিলেন!
মনে করা হয়, পাণ্ডবরা যখন নির্বাসনে ছিলেন, কুটিরে খুব সামান্যই খাদ্য বেঁচে ছিল। বউমাটি ঘর চালাতে পারদর্শী কি না তা যাচাই করার জন্য, কুন্তী সামান্য আটা এবং কিছু সব্জি তুলে দেন দ্রৌপদীর হাতে। পাণ্ডবরা ক্ষত্রিয়! যুদ্ধে পারদর্শী। বিশালবপু পাণ্ডবদের ক্ষুধা নিবৃত্তি করা কি সোজা কথা! সামান্য রসদে কীভাবেই বা তাঁদের খিদে মিটবে!
তা সত্ত্বেও দ্রৌপদী হার মানলেন না। সামান্য আটা দিয়েই দিয়ে তৈরি করে ফেললেন ফুচকা! তাতে দিলেন সেদ্ধ সব্জির পুর! তাতেই উদরপূর্তি ঘটল পাণ্ডবের। তবে দেশের নানা প্রান্তে মহাভারততে বিশ্লেষণ করা হয়েছে নতুনভাবে। বহু লেখক মূল মহাভারতের কাহিনির সঙ্গে জুড়েছেন আরও নানা তথ্য। ফলে লেখকের বাসস্থান, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসও কখনও কখনও জুড়ে গিয়েছে মূল কাহিনির সঙ্গে। তাই এই ঘটনা পুরোপুরি সত্য কি না তা যাচাই করা কখনওই সম্ভব নয়। অবশ্য গল্পখানি নিঃসন্দেহে নারীদের অপার ক্ষমতার আভাস দেয় যা প্রশংসনীয় ও সমীহ উদ্দীপক।
৪০০ বছরের পুরনো ইতিহাস
আরও একটি ইতিহাস প্রচলিত রয়েছে ফুচকাকে ঘিরে। মগধের সময়কালেই নাকি ফুচকার উত্থান ঘটেছিল। তবে সেই সময় মশলার ব্যবহার বা পুরের ব্যবহার নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য অমিল! মোট কথা শুরু যেভাবেই হোক না কেন, ফুচকা এখনও খাদ্যরসিকদের জিভে ও প্রাণে তৃপ্তি জুগিয়ে যেতে পারছে। আশা করা যায় আগামীদিনেও একইভাবে ফুচকার জয়ধ্বজা উড়বে!