মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বঙ্গদেশ জুড়ে চলছে বাণীবন্দনা। ভারতের অন্য প্রদেশে সরস্বতী পুজো হলেও বাঙালি পড়ুয়াদের কাছে সরস্বতীর গুরুত্ব একদম অন্যরকম। প্রতিটা বাঙালি বাড়িতে নিজের মত করে হয় বাগদেবীর আরাধনা। স্কুল অফিস থেকে শুরু করে পাড়ার ক্লাব কোনওটাই বাদ থাকে না। দেশজুড়ে বিদ্যাদেবীর মন্দির কিন্তু রয়েছে হাতে গোনা। কর্ণাটকের চিকমাগালুরে শ্রীঙ্গেরি শরদম্বা মন্দির অবস্থিত। তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে এই মন্দির। চতুর্দশ শতাব্দীতে তৈরি সরস্বতীর মূর্তিটি চন্দন কাঠের। পুষ্করেও ব্রহ্মার মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে সরস্বতীর মন্দির। দক্ষিণের অনেক জায়গাতেই রয়েছে সরস্বতীর মন্দির। আবার মধ্যপ্রদেশেও একটি রয়েছে সরস্বতীর মন্দির। আমাদের রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সরস্বতী মন্দির থাকলেও তা হাতে গোনা।
জীবনের অনেক প্রথম এর সাক্ষী এই সরস্বতী পুজো। প্রথম প্রেম, প্রথম বাড়িতে লুকিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, প্রথম চুম্বন, প্রথম কৈশরে পা রাখা অনেক কিছু। সরস্বতী পুজোয় আঞ্জলি তো সকলেই দেন। তবে পুজোর রীতিতে কিছুটা ফারাক রয়েছে। এপার বঙ্গে সরস্বতী পুজোর পরদিন গোটা সেদ্ধ হয়। প্রসাদে চাল মাখা, মকর থাকবেই। কিন্তু ওপার বাংলার পুজোর রীতি হল জোড়া ইলিশ। এদিন মরশুমের প্রথম ইলিশ আসে বাড়িতে। ইলিশের গায়ে ধান, দূর্বা তেল সিঁদুর কাঁচাহলুদ লাগিয়ে তবেই বাড়িতে প্রবেশ করানো হয়। প্রথমে এই মাছ রাখা থাকত কুলোতে। এর পর তা বরণ করা হত।
ইলিশের সচরাচর যে সব রান্না আমরা খাই সরস্বতী পুজোয় ইলিশের রান্না অনেকটা অন্যরকম। এই মাছ রান্নায় কোনও রকম গুঁড়ো মশলা, তেল ব্যবহার করা হয় না। কাঁচালঙ্কা, হলুদ দিয়েই রান্না করা হয়। মাছ প্রথমে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখা হয়। কড়াইতে জল ফুচতে দিন। ওর মধ্যে নুন-হলুদ ফেলে দিন এক চামচ। এবার বড় বড় টুকরো করা বেগুন, আলু ফেলে দিন ওতে। ৫ মিনিট পর মাছ দিয়ে ঢাকা দিয়ে নেড়েচেড়ে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে তিনটে কাঁচালঙ্কা ফেলে দিন। এভাবেই রান্না করুন, আর এই মাছ খেতে কিন্তু খুব ভাল লাগে। দই ইলিশ, সর্ষে ইলিশ কিংবা ভাপা ইলিশের চাইতে এমন মাছ খেতে অনেক ভাল হয়।