পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয় কাশ্মীরকে। যার সৌন্দর্য্যের টানে বহু ভ্ৰমণ প্রেমীরা ছুটে আসে বার বার। এই স্বর্গের মধ্যে রয়েছে আরও একটি বিষয় যার টানে ছুটে আসে খাদ্য রসিকরা। আমরা কথা বলছি কাশ্মীরের সেই ঐতিহ্যবাহী খাদ্য গুলি সম্পর্কে, যার স্বাদ পৃথিবীর অন্য কোনও স্থানে পাওয়া যায় না।
কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং মুসলিম- একটি রাজ্যের মধ্যেই দুটি রন্ধন শৈলী যা মিশে রয়েছে কাশ্মীরের খাবারেও। এমনই একটি খাবার হল রোগান জোশ। মটন বা ভেড়ার মাংস তৈরি একটি খাদ্য যা কাশ্মীরিদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়। এই রোগান জোশকে কাশ্মীরিদের সিগনেচার ডিশও বলা হয়ে থাকে। মোঘল সাম্রাজ্যের সময় থেকে এই খাদ্য কাশ্মীরে চলে আসছে। এর প্রত্যেক কামড়ে আপনি পিঁয়াজ, লাল লঙ্কা এবং দইয়ের স্বাদ পাবেন। এই খাবারের গাঢ় লাল রঙ আসে আলকানেট ফুল এবং কাশ্মীরের লাল লঙ্কা থেকে, যা আপনি ভূ-ভারতে কোথাও পাবেন না।
ভারতীয়দের মধ্যে পানীয়র একটি চল প্রথম থেকেই রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে পানীয় হিসাবে চা বা কফি ভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়। কিন্তু কাশ্মীরের পানীয় এদেশের সব রাজ্যের থেকে আলাদা। কাশ্মীরের পানীয়কে বলা হয় ‘কাহবা’। এটি এমন এক পানীয় যাকে ছাড়া কাশ্মীরিদের এক মুহূর্ত চলে না। এটি এক প্রকার আয়ুর্বেদিক চা, যা এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জাফরান দিয়ে তৈরি করা হয়। এই সব উপাদানকে শুকনো করে গরম জলে ফুটিয়ে তা পান করা হয়। অনেক জায়গায় শুকনো ফল এবং ফুলও যোগ করা হয় এই পানীয়তে।
কাশ্মীরিদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খাবার হল কাশ্মীরি চমন বা পনির চমন। কম আঁচে পনিরকে দুধে সেদ্ধ করে তৈরি করা হয় এই খাবার। তার সাথে মেশানো হয় লবঙ্গ, এলাচ, মৌরি গুঁড়া এবং ‘সনথ’ বা শুকনো আদা পাউডার, যেখানে তৈরি হয় হলুদ রঙে ক্রিম টেক্সচারের কাশ্মীরি চমন। কাশ্মীরিদের মধ্যে জনপ্রিয় আরেকটি খাবার হল হাক, যা স্থানীয় ভাবে মৌঞ্জ হাক নামে জনপ্রিয়। এটা হল কাশ্মীরিদের এক প্রকার শাক। মাত্র ছয়টি উপাদান দিয়ে কুড়ি মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় হাক। কনকনে ঠাণ্ডায় প্রায় প্রত্যেক কাশ্মীরি বাড়িতেই তৈরি হয় এই খাবার।
এছাড়াও তাবাক মাজক নামক একটি মাংসের খাবারকেও কাশ্মীরের রাজকীয় খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভেড়ার পাঁচরের সাথে দুধ, ঘি এবং একাধিক মশলা মিশিয়ে তৈরি হয় এই তাবাক মাজক। পাকিস্তানী ও ভারতীয় উভয় কাশ্মীরিদের মধ্যে এই খাবারের প্রচলন সবচেয়ে বেশি। প্রত্যেক কাশ্মীরির বাড়ির বিশেষ অনুষ্ঠানে রন্ধিত হয় এই বিশেষ পদটি। পৃথিবীর এই স্বর্গের আরও একটি বিশেষ খাদ্য হল মটন ইয়াখনি। এটি কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যগুলির মধ্যে একটি। দই, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গের স্বাদ এর প্রত্যেক কামড়ে পাওয়া যায়।
ভোজন রসিকদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার হল কাশ্মীরি পোলাও। যা বাসমতি চাল, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, আদা, পুদিনা পাতা, জিরা গুঁড়া, জাফরান, কাঠবাদাম, কাজু, আখরোট এবং তেজপাতা দিয়ে তৈরি হয়। এর সাথে রয়েছে কাশ্মীরের রাজকীয় খাবার গোস্তাবা। যা এই পীর পাঞ্জল রেঞ্জ এবং হিমালয় উপতক্যার আরেকটি সিগনেচার ডিশ। এটি মটনের কিমার সাথে দুধ ও মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এরকমই একটি খাবার হল রিস্তা। গোস্তাবার মতই তৈরি করা হয় রিস্তা, যা শুধু বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন: গোয়ায় তৈরি হল ভারতের প্রথম মদের জাদুঘর!