ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই দেশে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যেগুলির বৈজ্ঞানিক কোনও ব্যাখ্যা নেই। বিশেষ করে নানা মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনি ও অবস্থান, স্থাপত্যে নিয়ে। ২০২২ সাল শুরু পর পরই ভ্রমণ ও পর্যটনের জায়গাগুলি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নয়া কোভিড স্ট্রেন। তাই ছোট ছোট ট্যুরেই মনকে তৃপ্ত করতে হচ্ছে।
কাজের সূত্রে বা সেখানে ভ্রমণে গিয়েছেন বা সেখানে যদি নতুন বসতি গড়েন, তাহলে ছোট্ট ট্যুরের জন্য একটি প্ল্যানের কথা শেয়ার করা যায়। ইতিহাসের দেশ ভারতবর্ষ। আর সেই ছোঁয়া এসে পড়েছে অন্ধ্রতেও। অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার একটি গ্রাম, লেপাক্ষী। হায়দরাবাদ থেকে ৪৮০ কিলোমিটার এবং বেঙ্গালুরু থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লেপাক্ষী মন্দির।সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর জন্য নন্দী পাহাড় ও এই বিস্ময়কর লেপাক্ষী মন্দির দর্শন করার প্ল্যান করতে পারেন।
ভারতের প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে এই লেপাক্ষী মন্দির অন্যতম ও পৌরাণিক কাহিনিতে পরিপূর্ণ। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে নিয়ে পুষ্পক রথে চড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সেখানে হাজির হন জটায়ু। আকাশপথের সেই যুদ্ধে রাবণের কাছে পরাজিত ও গুরুতর আহত হয়ে এই গ্রামেই এসে পড়েন জটায়ু। সেখান থেকেই এই নাম। একটা সময় নিজামের শাসন দেখেছে এখানকার মানুষ, আর তারও আগে দেখেছে বিজয়নগর সাম্রাজ্য। আর সেই অধ্যায়েরই একটি অংশ হল লেপাক্ষীর বীরভদ্র মন্দির। গ্রামটি ছোট্ট হলেও ইতিহাসের কোলে বেড়ে উঠেছে। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সেই মাহাত্ম্য। তেলেগু ভাষায় ‘লেপাক্ষী’ শব্দের অর্থ হল উড়ন্ত পাখি।
পুরাণ থেকে একটু সরে আসা যাক ১৬শ শতকে। তখন দক্ষিণ ভারতে প্রবল বিক্রমে রয়েছে বিজয়নগর সাম্রাজ্য। মসনদে রাজা অচ্যুতদেবরায়। সেই সময় তাঁরই নির্দেশে পেণুকোণ্ডার বীরুপান্না ও বীরান্না মিলে তৈরি করেন এই বিশেষ মন্দির। লেপাক্ষী গ্রামেই শুরু হয় নির্মাণকাজ। প্রকৃতপক্ষে শিবের মন্দির এটি। মহাদেবেরই এক অবতার বীরভদ্র এখানে পূজিত হন। তবে এর বাইরে গিয়েও মন্দিরের নকশা, তার গায়ের কারুকাজ ও স্থাপত্য ভারতের সমৃদ্ধ ইতিহাসকেই সামনে নিয়ে আসে। লেপাক্ষীতে শিব, বিষ্ণু, পাপনাথেশ্বর, রঘুনাথ, রাম এবং অন্যান্য দেবতাদের উত্সর্গীকৃত বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। বীরভদ্র মন্দিরের স্তম্ভে ছোট খোদাই হোক বা একশিলা নন্দী, যাকে বিশ্বের বৃহত্তম বলা হয়, বিজয়নগর রাজবংশের কারিগরদের সূক্ষ্মতা এবং দক্ষতা শহরজুড়ে ভাস্কর্যগুলিতে স্পষ্ট।
লেপাক্ষী মন্দির নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। এমন বিষ্ময়কর মন্দির নিয়ে বেশ কিছু অজানা তথ্য রয়েছে, যা সকলের জানা দরকার…
১. লেপাক্ষী মন্দির, যা বীরভদ্র মন্দির নামেও পরিচিত। প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যের বিস্ময়গুলির মধ্যে একটি। একইসঙ্গে ইতিহাস ও পৌরাণিক জগতে বিচরণ করতে চলে যান অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে।
– ভগবান বীরভদ্রকে উৎসর্গ করা মন্দির, লেপাক্ষী মন্দির হল কালজয়ী শিল্পের একটি প্রদর্শনী। মন্দিরের বেশিরভাগ অংশ কুরমাসাইলম (তেলেগুতে “কচ্ছপের পাহাড়”) নামক একটি নিচু, পাথুরে পাহাড়ে নির্মিত – পাহাড়ের আকৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত।
– মন্দিরের চারপাশে বিজয়নগর রাজ্যের গৌরব আবিষ্কার করতে পারবেন। আশ্চর্যজনক সচিত্র উপস্থাপনা প্রস্তুতকারী শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা আছে সঙ্গীতজ্ঞ ও সাধুদের ছবি। আপনি গণেশের মূর্তি, মাতা পার্বতীর মূর্তি এবং ভগবান শিবের সুন্দর নৃত্য দেখতে পাবেন। এখানে একটি গুহা কক্ষও রয়েছে যেখানে ঋষি অগস্ত্য থাকতেন বলে জানা যায়। এই বীরভদ্র মন্দিরে ৭০টি স্তম্ভ রয়েছে।
– মন্দিরের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি হল ঝুলন্ত স্তম্ভ। মূল মন্দিরের বাইরের অংশেই রয়েছে নাটমন্দির। আর এখানেই আমাদের প্রধান আকর্ষণের অবস্থান। ঢুকলেই প্রথমে নজর কাড়বে সুবিশাল ৭০টি থামের কারুকাজ। ঘুরতে ঘুরতে চোখ থামবে একটি বিশেষ থামের দিকে। ঝুলন্ত স্তম্ভ। নাটমন্দিরের একটু কোণের দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে এটি। ঠিক নিচের একটু জায়গা একেবারে ফাঁকা! স্থানীয় কিংবদন্তি বলে, লেপাক্ষীর বীরভদ্র মন্দিরের এই বিশেষ থামটির ভেতরেই নাকি এখানকার যাবতীয় রহস্য লুকিয়ে আছে!…
– রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য একবার এসেছিলেন এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার।এই বিশেষ স্তম্ভটি নিয়ে তাঁরও উৎসাহ ছিল প্রচুর। রহস্য ভেদ করতে আট ফুট উঁচু স্তম্ভটির তলায় লোহার রড ঢুকিয়ে নাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। তারপরেই ঘটল অদ্ভুত ঘটনা। গোটা মন্দিরটাই যেন দুলতে শুরু করল! শুধু তাই নয়, সবকটা থামই নড়তে শুরু করে। আর মন্দিরের ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ কানে আসে। পাছে মন্দির ভেঙে পড়ে, সেইজন্য তড়িঘড়ি সেই জায়গা থেকে পালান ওই ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকরাও গবেষণা চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে আখেরে লাভ কিছুই হয়নি
আরও পড়ুন: Road Trips In India: কম খরচে রোড ট্রিপে যাওয়ার সেরা জায়গাগুলি কী কী, দেখুন ছবিতে