উত্তরাখণ্ডের অন্যান্য শহরের তুলনায় কৌসানি এতটাই আলাদা যে দু’দিন কাটিয়েও মন ভরে না। কিন্তু থেমে থাকলে তো আর চলে না! তাই আবারও বেড়িয়ে পড়া। কৌসানি শহর বাগেশ্বর জেলার অন্তর্গত। আর এই জেলা এতটাই বড় যে এর কোন জায়গায় কোন গ্রাম বা আবার কোন শৈলশহর লুকিয়ে আছে, তা ঠাওর করা মুশকিল।
এই জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল বাগেশ্বর মন্দির। কুমায়নের কোলে যে দেবতার বাস থাকবে, এ জানা কথা। কিন্তু বাগেশ্বর মন্দির অন্যান্য ধামের থেকে এতটা আলাদা, তা না গেলে বোঝা যায় না। ভীলেশ্বর ও নীলেশ্বর পর্বত ঘেরা রয়েছে এই ছোট্ট বাগেশ্বর শহরকে। আর এই শহরের মাঝেই অবস্থিত বাগেশ্বর মন্দির। পাশ দিয়ে অবিরাম বয়ে চলেছে গোমতি নদী। মূলত গোমতি ও সারযূ নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত এই মন্দির।
এই মন্দিরে পূজিত হন মহাদেব। সারা বছরই কম-বেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে মন্দির প্রাঙ্গণে। যেহেতু শহরের মধ্যে, বাজারের পাশেই অবস্থিত এই মন্দির তাই সারাদিন কোলাহলে ভরা থাকে মন্দির চত্বর। কথিত রয়েছে, এখানে ভগবান শিব বাঘ অবতার ধারণ করে ঋষি মার্কণ্ডেয়কে আশীর্বাদ দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই কারণেই এই অঞ্চলের নাম বাগেশ্বর। হিন্দি ভাষায় ‘বাগ’ এর অর্থ হল ‘বাঘ’।
উত্তরাখণ্ডের প্রতিটি শহর, প্রতিটি গ্রাম নিজের মত করে সুন্দর। এখানে যেমন দেবতার বাস রয়েছে, তেমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উত্তরাখণ্ডের প্রতিটি পাহাড়। এরকমই আরেকটি গ্রাম হল চকৌরি। কুমায়নের কোলে লুকানো আরেকটি রত্ন হল এই চকৌরি। বাগেশ্বর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চকৌরি। কৌসানি থেকে এই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। আপনি চাইলে আলমোড়া থেকেও যেতে পারেন চকৌরি।
শহুরে জীবনযাত্রা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন চকৌরি। স্থানীয় গ্রাম পর্যটন কেন্দ্র থেকে বেশ নীচে। ওপরে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান। আর রয়েছে খান পাঁচেক হোটেল। এখানে যে কেউ রাত্রিবাস করে না, তা আপনি এলেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আপনি চকৌরি রাত্রিবাস করলে যে হিমালয়ের যে অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন, তা উত্তরাখণ্ডের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল।
আলাদা করে এই জায়গায় কিছু নেই। শুধু রয়েছে শান্তি আর নির্জনতা। এমনকি বিংশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা চা বাগানগুলোও আজ আর নেই চকৌরিতে। নেই তথাকথিত সানসেট পয়েন্ট, নেই কোনও সাইটসিনের জায়গা। আর হিমালয়ের কোলে সূর্য অস্ত গেলেই চিতাবাঘের ভয়ে বাইরে বেরনোরও জো নেই।
পুরনো চা বাগানগুলো ধীরে-ধীরে হোটেল, রিসোর্টে পরিণত হচ্ছে। এই পুরনো চা বাগানের রাস্তা এখনও কাঁচা-পাকা। এই রাস্তা ধরে সোজা হেঁটে গেলেই নীচের দিকে রয়েছে জঙ্গল। তবে জঙ্গল শুরুর আগে আপনি এমন এক জায়গা পাবেন, যেখান থেকে হিমালয়ের প্যানারামিক ভিউ দেখা যায়। এক দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নন্দাদেবী, আর চকৌরির সোজাসুজি রয়েছে পঞ্চচুল্লি। স্থানীয়দের মধ্যে এই জায়গা পরিচিত হলেও, পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম।
সজ্জিত না হলেও চকৌরির রাতের দৃশ্যই মনে দাগ কাটে পর্যটকদের। রাত নামলেই তারাদের সমাহার দিনের সব ক্লান্তি কেড়ে নেয়। ল্যাম্পপোস্টের আলো দরকার হয় না রাতে। তারাদের আলোতেই আলোকিত হয়ে ওঠে চকৌরি। এমন পাহাড়ি গ্রামে দু’রাত না কাটালে চলে!
আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডেও রয়েছে সবুজে মোড়া এক সুইজারল্যান্ড! জেনে নিন সেই পাহাড়ি শহরের ঠিকানা