Kausani: উত্তরাখণ্ডেও রয়েছে সবুজে মোড়া এক সুইজারল্যান্ড! জেনে নিন সেই পাহাড়ি শহরের ঠিকানা
দেবদারু গাছে ঘেরা কৌসানি। সবুজে ঘেরা শান্ত উপত্যকা। যত দূর চোখ যায়, শুধুই সবুজ দিগন্ত। কিন্তু এর মাঝেই হিমালয়ের প্যানারমিক ভিউ দেখা যায় কৌসানি থেকে।
ভারতের সুইজারল্যান্ড কোন শহরকে বলা হয় এই নিয়ে বেশ মতাভেদ রয়েছে। বরং বলা চলে, একটা ছোটোখাটো তালিকা রয়েছে। সেখানে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে শুরু করে হিমাচলের অফবিট খাজ্জিয়ারেরও নাম রয়েছে। আর ওই তালিকাতেই নাম রয়েছে উত্তরাখণ্ডের কৌসানির।
ভারতের সুইজারল্যান্ড হোক বা না হোক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কোনও অংশে কম নয় উত্তরাখণ্ডের কৌসানি। কুমায়নের কোলে গড়ে ওঠা একটি শৈলশহর। আলমোড়া শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কৌসানি। ১৮৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কৌসানি হিমালয়ের এক অন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
দেবদারু গাছে ঘেরা কৌসানি। সবুজে ঘেরা শান্ত উপত্যকা। যত দূর চোখ যায়, শুধুই সবুজ দিগন্ত। কিন্তু এর মাঝেই হিমালয়ের প্যানারমিক ভিউ দেখা যায় কৌসানি থেকে। এপিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই সুবজের সমাহার দেখা যায় কৌসানিতে। তারপর ধীরে ধীরে যখন শীতের মরসুমে শুরু হয়, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি অবধি কৌসানি ঢাকা থাকে সাদা বরফের চাদরে।
নির্জন হলেও কৌসানি শহর হিসাবে বেশ বড়। পাহাড়ের ধাপে ধাপে রয়েছে ছবির মত সাজানো গ্রাম। পাহাড়ের যত ওপরে ওঠা যায়, রয়েছে দেবদারু গাছে ঘেরা চা বাগান। পায়ে হেঁটেও আপনি অনায়াসে অন্বেষণ করতে পারবেন এই চা বাগানগুলি। তবে যদি হিমালয়ের প্যানারমিক ভিউ দেখতে চান, তাহলে যেতে হবে পাহাড়ের বেশ ওপরে।
কৌসানির আলাদা করে কোনও ভিউ পয়েন্ট নেই। তবে এখানে রয়েছে গান্ধী আশ্রম। এর আসল নাম অনাশক্তি আশ্রম। এই জায়গাটিতে মূলত গবেষণা তথা অধ্যয়ন কেন্দ্রের কাজ করা হয়। এছাড়া এখানে রয়েছে একটি ছোট্ট মিউজিয়াম, যেখানে রাখা রয়েছে গান্ধীজির বই এবং ছবি। আপনি চাইলে এখানেও রাত্রিবাস করতে পারেন। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে ২৪ টি কক্ষও রয়েছে।
এই গান্ধী আশ্রম কৌসানির পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। শান্ত ও নিরিবিল এবং চারিদিক পাইন ও দেবদারু গাছে ঘেরা। এখানে রাত্রিবাস না করলেও, পর্যটকরা ভিড় করেন সূর্যোদয় দেখতে। এই গান্ধী আশ্রম থেকেই দেখা যায় হিমালয়ের প্যানারমিক ভিউ। ত্রিশূল, নন্দাদেবী ও পঞ্চচুল্লির মাঝ দিয়ে সূর্য উদয় মন কাড়ে পর্যটকদের।
যখন কৌসানির বিশেষত্ব নিয়ে কথা বলা হয়, সেখানে শাল ফ্যাক্টরি থাকতে বাধ্য। কৌসানির শাল ফ্যাক্টরিতে গিয়ে আপনি নিজেই দেখতে পাবেন কীভাবে শাল, চাদর ও বিভিন্ন ধরনের উলের বস্ত্র তৈরি করা হয়। তবে কৌসানির শাল ফ্যাক্টরি খুব বেশি পুরনো নয়। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এই শাল ফ্যাক্টরি। কুমায়নের শিল্পীরা নিজেদের ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য এই শাল ফ্যাক্টরি চালু করেন।
উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের ধাপে ধাপে রয়েছে পুরাণ। তারই এক ছোট্ট নিদর্শন দেখা যায় কৌসানিতেও। কৌসানির আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল বৈজনাথ মন্দির। যদিও এটি কৌসানি শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গোমতি নদীর তীরে দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি হয় এই বৈজনাথ মন্দিরটি। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এখানে ভগবান শিব এবং পার্বতী গোমতী এবং গারুর গঙ্গা নদীর সঙ্গমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল এই মন্দিরের গঠন। কাতিউরি রাজারা নির্মাণ করেছিল এই বৈজনাথ মন্দিরের। পাথরের ওপর পাথর সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছিল মন্দিরটি।
কৌসানিতে যদি দু’রাত কাটান, তাতেই মন কাড়বে এই শৈলশহর। নির্জনতা খোঁজে কিংবা একাকীত্ব উপভোগ করতে চাইলে কিছুটা সময় কাটিয়ে যান কৌসানিতে।
আগামিকাল- বাগেশ্বর ও চকৌরি
আরও পড়ুন: কুমায়নের কোলে জঙ্গল সাফারি করতে ইচ্ছুক? এক রাত কাটিয়ে আসুন বিনসরে