একই রাজ্যের মধ্যে দুটো হিমালয়ের বাস। এক হল কুমায়ন, আর অন্যটি গাড়োয়াল। যখন উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল অঞ্চলে ভ্রমণের প্রসঙ্গ আসে, তখন সেই তালিকায় প্রথমেই থাকে দেরাদুন। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এবং ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দেরাদুনে সারা বছর যে মনোরম জলবায়ু থাকে, তাতে যে কোনও ভ্রমণপ্রেমী এখানে কয়েক দিন কাটিয়ে যেতে বাধ্য। তাছাড়া দেরাদুন ভ্রমণের আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল এই শহরটি উত্তরাখণ্ডের দুন উপত্যকায় অবস্থিত। এই উপত্যকা থেকে হিমালয়ের যে সৌন্দর্য অন্বেষণ করা যায়, তা অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল।
তবে এমনটা নয় যে দেরাদুনে কোথাও ঘোরার জায়গা নেই। উত্তরাখণ্ড এমন একটি রাজ্য যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পুরাণ কাহিনির কোনও শেষ নেই। দেরাদুনও সেই রকমই একটা জায়গা বলা চলে। জলপ্রপাত থেকে শুরু করে গুহা, বিভিন্ন মন্দির- সবই রয়েছে এই উপত্যকায়।
দেরাদুন থেকে ১১ কিমি দূরে অবস্থিত সহস্রধারা জলপ্রপাত। এই চুনাপাথরের দেওয়াল গড়িয়ে হাজার ধারার গন্ধক মিশ্রিত জল গড়িয়ে পড়ছে। এই ঝর্ণার জলে স্নান করলে নাকি একাধিক চর্মরোগ দূর হয়ে যায়। প্রাচীন দ্রোন মন্দির ও শিব মন্দির এবং প্রাকৃতিক গুহাও রয়েছে এই জলপ্রপাতকে কেন্দ্র করে।
তবে দেরাদুনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হল রবার্স কেভ। এই রবার্স কেভের মধ্য দিয়ে অবিরাম বয়ে চলেছে টনস নদী। আপনি চাইলে এই টনস নদীর উৎপত্তিস্থলের সন্ধান করতে পারেন, সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে আপনার জন্য। এই রবার্স কেভ থেকে ৬ কিমি দূরেই রয়েছে টপকেশ্বর মহাদেব মন্দির। দেবভূমিতে শিবের বাস থাকবে না, এটা হয় না। গুহার মধ্যে শিবলিঙ্গের উপর ঝর্ণার জল টপটপ করে জল পড়তে থাকে এই মন্দিরে। এছাড়া দেরাদুনে খালসা ডিয়ার পার্ক, সাঁই মন্দির, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিউজিয়ামের মত একাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।
দেরাদুন সাধারণত দু’দিন কাটালেই এর সৌন্দর্য অন্বেষণ করা যায়। রাজ্যের রাজধানী ও বড় শহর হওয়ায় এখানে সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে পর্যটকদের। যদি শান্ত নিরিবিলি কোনও জায়গার খোঁজে থাকেন, তাহলে দেরাদুন থেকে ৯৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চকরাতা।
রডোডেনড্রন, ওক, পাইনে ঘেরা পাহাড়ি গ্রাম চকরাতা। এখানের নির্মল পরিবেশ যে কোনও মানুষের মন কাড়তে বাধ্য। এখানে ৩০০ ফিট উচ্চতায় রয়েছে টাইগার জলপ্রপাত। এটাই এখানকার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তবে চকরাতা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাম্পিংয়ের জন্য। যাঁরা ট্রেক করতে ভালবাসেন, প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় নির্জনে কাটাতে চান, তাঁদেরকে কোনও ভাবেই নিরাশ করবে না চকরাতা।
আগামিকাল: মুসৌরি
আরও পড়ুন: পুনরায় খোঁজ পাওয়া গেল চারধামের ৩টি প্রাচীন ট্রেকিং রুটের