বাবা-মা ছোটবেলায় একখানি গপ্প প্রায় সব শিশুদেরই শুনিয়ে থাকেন। আর তা হল পিপু-ফিশুর কাহিনি। তা কেমন। এক বাড়িতে ছিল দুই ভাই। তারা এতখানিই অলস ছিল যে কোনও কাজই করত না। এমনকী কথা বলতেও বেশি পরিশ্রম হবে বলে গোটা বাক্যকে সংক্ষিপ্ত রূপ দিয়ে কথা বলত। একদিন রাতে দুই ভাই বিছানায় ঘুমাচ্ছিল। তখন ওই ওদের বাড়িতে লাগল আগুন। আগুন প্রায় বিছানার কাছেই চলে এসেছিল। তাতেও তারা পালানোর চেষ্টা করল না। হঠাৎ এক ভাই বলল— ‘পিপু!’ অর্থাৎ পিঠ পুড়ছে। তখন অন্য ভাই বলল— ‘ফিশু’। মানে ‘ফিরে শো’। অর্থাৎ আগুনের দিক থেকে পিঠ ফিরিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়। মূলত আলস্য যে মানুষের উন্নতির পথে বাধা এবং সর্বনাশ ডেকে আনে তা বোঝাতে এই গল্পখানি বাবা-মায়েরা শিশুকে বলতেন! তবে তাঁরা যদি জানতেন খাঁটি আলসে হলে পুরস্কার মেলে তাহলে বোধহয় গল্প খানি এত জনপ্রিয় হতো না।
আসলে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা সকালে ঘনঘন অ্যালার্মের আওয়াজকেও অনায়াসে অগ্রাহ্য করে ঘুমোতে পারেন! সারাদিন শুয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন সোফায় বা বিছানায়। আমরা এমন ব্যক্তিকে আলসে বলে গাল পাড়লেও এমন সত্যিকারের ল্যাদখোর মানবদের জন্য রয়েছে বিশেষ উৎসব ও প্রতিযোগিতা! এমনকী এই উৎসবে যোগ দিলে মিলতে পারে পুরস্কারও! পুরস্কারের আর্থিক মূল্যও লোভনীয় ও আকর্ষণীয়।
‘ফেস্টিভ্যাল অব লেজিনেস’ শীর্ষক এই উৎসব আয়োজিত হয় পূর্ব ইউরোপের ব্রেজনারের মেন্টেনিগ্রিন গ্রামে। উৎসবে অংশগ্রহণকারী পেয়ে যেতে পারেন প্রায় ৯০ হাজার টাকা!
যে প্রতিযোগী সবচাইতে আলসে কুঁড়ে হিসেবে বিবেচিত হবেন, তিনিই পেয়ে যাবেন এই পুরস্কারের অর্থ। আর জন্য করতে হবে একটাই কাজ— সারাদিন বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাতে হবে!
প্রতিযোগীদের জন্য রয়েছে কয়েকটি নিয়ম— তাদের বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে সটান। এই অবস্থায় শরীরের নড়াচড়া হবে অত্যন্ত স্বল্প! তবে প্রতিযোগীরা বই পড়তে পারেন। এমনকী ব্যবহার করতে পারেন মোবাইল। কেউ দেখা করতে এলে বলতে পারেন কথাও। তবে শুয়ে থাকতে হবে বিছানাতেই। প্রতি ৮ ঘণ্টা অন্তর তাদের একটু নিজের মতো সড়ানড়া করারও অবকাশ দেওয়া হয়। সেই সময়ে তাঁদের শারীরিক সুস্থতারও চেকআপ হয়।
সূত্রে র খবর অনুসারে এই প্রতিযোগিতা এখন ওই গ্রামের ঐতিহ্য হয়ে গিয়েছে। এই উৎসব শুরু হয়েছিল মন্টেনিগ্রিনদের রোজকার জীবনযাপনের একঘেয়েমি কাটাতে! মূলত ব্যস্ত রোজনামচা এবং একে অপরকে টপকে যাওয়ার ইঁদুর দৌড় থেকে বেরিয়ে এসে জীবনকে অন্যভাবে দেখতে, অলসভাবে জীবনকে উপলব্ধি করার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে আহ্বান জানায় এই উৎসব। এই প্রতিযোগিতা আমাদের নিজের চারপাশের প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে শান্তভাবে জানতে সাহায্য করে। জীবনে যে আনন্দেরও স্থান রয়েছে, রয়েছে হাসির উপস্থিতি তা অনুভব করতে সাহায্য করে।
স্থানীয়দের ভাষায় এই উৎসব পরিচিত ‘লেজি অলিম্পিক’ নামে। মূলত স্থানীয়দের জন্য আয়োজিত হলেও রাশিয়া এবং সার্বিয়া থেকে আগত পর্যটকরাও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
একটি রিসর্টের মধ্যে পর্দা ঘেরা বিছানায় আয়োজিত হয় ওই অনুষ্ঠান। প্রতিযোগীদের দেওয়া হয় সুস্বাদু খাদ্য এবং উষ্ণ লেপ। তবে বিছানায় বসে পড়লে বা উঠে দাঁড়ালে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগীকে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।