Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়: পর্ব ২৩—‘দ্য কুইন অফ দার্জিলিং’-এর গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে দেখুন এই মরশুমে

TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপ্তা দাস

Oct 22, 2023 | 1:58 PM

Darjeeling: বহরমপুর থেকে রায়গঞ্জের রাস্তা খুব ভাল, কিন্তু গরমের কারণে ৫ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা। কিষাণঞ্জে পৌঁছে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। সঙ্গে সন্ধের টিফিন করে ইসলামপুরে রাতে থাকার মতো হোটেল খুঁজে নিন।

Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়: পর্ব ২৩—‘দ্য কুইন অফ দার্জিলিং’-এর গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে দেখুন এই মরশুমে

Follow Us

লাদাখ থেকে ফিরে সর্বপ্রথম একটাই কাজ ছিল—বাইক সার্ভিসিং করা। বাইকের কাজ করে বেশ কিছুদিন ঘরে থাকার পরে আবারও মনে হলো একটু ঘুরে আসি, আশেপাশে কোথাও একটু নির্জনে, একটু পাহাড়ের কোলে। এখন সেপ্টেম্বর মাস। বৃষ্টি প্রায় শেষ। এই সময় দার্জিলিংয়ের পাহাড় এবং তার প্রকৃতি অদ্ভুত জীবন্ত মনে হয়। এই রোদ, এই বৃষ্টি… পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশের কোলে। যদিও এখন প্রবল বৃষ্টির কারণে দার্জিলিংয়ের একাংশ এবং নর্থ সিকিম প্রায় বন্ধ, তাই ট্রেনের টিকিট বাতিল না-করে চলে আসুন NJPতে এবং বাইক রেন্টে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন দার্জিলিংয়ের কিছু জায়গায়। এছাড়াও আমার মতো কলকাতা থেকে বাইক নিয়ে আসতে পারেন। কোন ট্য়ুর অপারেটরের সঙ্গে ঘোরার থেকে নিজে বাইক বা নিজের মতো করে ঘোরার সুবিধা অনেক।

দার্জিলিংয়ের প্রতি আমাদের ভালবাসার কারণ হল তরাই অঞ্চল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে বিস্তৃত সবুজ জঙ্গলে ভরা পাইন-ফার-ওক গাছের সমাহার… তার সঙ্গে শীতকালে বরফাবৃত হিমালয়ের চূড়া, তারপর চায়ের প্রতি আমাদের ভালবাসা তো আছেই। এরই সঙ্গে যখন কমলালেবুর বাগান দেখা যায়, তখন উভয়ই একত্রিত হয়ে এমন প্রকৃতি তৈরি করে যে, তার জন্য আমরা বারবার দার্জিলিংয়ের সেই ছোট-ছোট গ্রামে ঘুরে বেড়াই। তাই আবারও তারই টানে পৌঁছে গেলাম সিটং ১, সিটং ২, আহালদারা, লাৎপঞ্চার মতো ছোট-ছোট গ্রামে। এরই সঙ্গে এখানকার মানুষের সৎ মনোভাব যা বাড়িয়ে তুলবে আগ্রহকে মুহূর্ত। এখানকার মানুষজনের কাছে নানা কথার মধ্যে এটাও জানলাম যে, এটি হল দার্জিলিংয়ের প্রাচীনতম চা বাগান। তাই যতবারই দার্জিলিঙে যাই, ততবারই খুঁজে নিই এক-একটি গ্রামকে। এই গ্রামগুলো ঘুরে আপনার মনে হতে পারে এই জায়গাগুলি হল ‘দ্য কুইন অফ দার্জিলিং’।

দার্জিলিংয়ের চা বাগান সম্পর্কে অনেক ভাবে খোঁজ নিয়ে আমি এটাই জানতে পারি যে, প্রথমে আসামে ভারতের প্রথম চা বাগান চালু হয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৩০ সালের দিকে দার্জিলিং এলাকায় চা চাষ শুরু করলে ১৮৫০-এর দশকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। সিটং টি এস্টেটের সম্বন্ধে জানা গিয়েছে যে, দার্জিলিংয়ের প্রাচীনতমগুলির মধ্যে এটি একটি। এটি ১৮৫৪ সালে একজন জার্মান ধর্মযাজক জোয়াকিম স্টোয়েলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ১৮৫৪ সালে স্টেইনথাল টি এস্টেটে চা বাগান শুরু করেছিলেন… তারপর আর কি? বিশ্ববাজারে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়ে গেল চায়ের চাষ। একসঙ্গে, স্টেইনথাল এবং সিটং টি এস্টেট প্রায় ১৬০০ একর এলাকা জুড়ে। তাই আপনি একবার সিটং গেলে আপনার জন্য ১৬০০ একর চা বাগান, বাংলো, গ্রাম, বন এবং জলপ্রপাত রয়েছে। সিটং টি এস্টেটের উচ্চতা প্রায় ৪৫০০ ফুট (১৩৭২ মিটার) যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫৯০০ ফুট এবং সর্বনিম্ন ২১০০ ফুট।

এলাকায় কয়েকটি ট্রেকিং ট্রেইল আছে। ছোটগুলি ২ ঘণ্টা সময় নেয়, যখন বড়গুলি প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা নেয়। ট্রেকিং ট্রেইলগুলি চা বাগান, বনের মধ্য দিয়ে যায় এবং পাহাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের দৃশ্য দেখায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ। একটা ট্রেইল আছে, যেটা গ্রামের দিকে নেমে গিয়েছে। আমি একটা ট্রেইল বেছে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং পরিদর্শন করেছি গ্রামের স্কুল এবং পথে চা বাগানের ছবি অনেক তুলেছি। একটি দীর্ঘ ট্রেইল রয়েছে যা রাঙ্গিত নদীতে নেমে গিয়েছে। সেই নদীর উপর ব্রিজের ছবিটি সত্যিই অসাধারণ। এই ট্রেইলটিতে কিছুটা সময় লাগে এবং এই ট্রেকটি করার জন্য আপনাকে পুরো সকাল থাকতে হবে।

কীভাবে যাবেন: তিন-চার দিন ছুটি ম্যানেজ করে বেরিয়ে পড়ুন সিটংয়ের উদ্দেশ্যে। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৬২০ কিলোমিটার। কলকাতাকে ‘গুডবাই’ বলে এনএইচ টুয়েলভ ধরে সোজা চলে আসুন কৃষ্ণনগর। যার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। তারপর আবার মোটামুটি ১০০ কিলোমিটার মানে, বেথুয়াডহরি পলাশি হয়ে বহরমপুর। কলকাতা থেকে বহরমপুর পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তা। গ্রাম, বাজারঘাট, লোকালয় বেশি থাকার জন্য একটু বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তা-ও সকালে যাত্রা শুরু করার জন্য মোটামুটি ছ’ঘণ্টা লাগবে। এখন দুপুর বারোটা। সূর্যের প্রচণ্ড তাপের ফলে বাইকে একটু বেশি সময়ের জন্য ঠাণ্ডা করা দরকার, আর নিজেকে এক লিটার ওআরএস অবশ্যই দিতে হবে। আর একটা কথা বলা দরকার, রাস্তায় কোনও রকমের অসুবিধা হলে হেল্পলাইন ছাড়া যে কোনও পেট্রোল পাম্পে সাহায্যের জন্য আসতে পারেন। জল, বাথরুম, রেস্টুরুম এবং গাড়ির সংক্রান্ত কোনও অসুবিধা হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সাহায্য করতে তাঁরা বাধ্য।

এরপরে চলে আসুন সাগরদিঘি, রঘুনাথগঞ্জ, ধুলিয়ান হয়ে ফারাক্কা। এখানে আপনি দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন রায়গঞ্জের উদ্দেশ্যে। বহরমপুর থেকে রায়গঞ্জের রাস্তা খুব ভাল, কিন্তু গরমের কারণে ৫ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা। কিষাণঞ্জে পৌঁছে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। সঙ্গে সন্ধের টিফিন করে ইসলামপুরে রাতে থাকার মতো হোটেল খুঁজে নিন। ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে ভাল মানের ঘর পেয়ে যাবেন। কারণ ইসলামপুরের পরে সেরকম ভাল থাকার জায়গা নেই।

তারপর ইসলামপুর থেকে সকাল-সকাল বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বাগডোগরা-শিলিগুড়ি-মাল্লাগুরি দু’নম্বর মোড় থেকে বাঁ দিক নিয়ে হিল কার্ট রোড ধরে সোজা চলে আসুন রংটং-এ। রংটং থেকে ডান দিক নিয়ে চলে আসুন সিটং ১, সিটং২, আহালদারা, লাৎপঞ্চার মতো ছোট-ছোট গ্রামে সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

আর লাগেজ কীভাবে প্যাক করবেন, তা বিস্তারিত দেওয়া আছে মোটরসাইকেল ডায়েরির দ্বাদশ পর্বে।

কী-কী দেখবেন:

এক রাত সিটং এবং অন্য একটি রাত আহালদারায় কাটিয়ে সমস্ত জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়াও পরপর স্পটগুলোর বিবরণ নিচে দেওয়া হল।

নুরবাং টি গার্ডেন, পাইন ফরেস্ট, হাওয়া মহল, নামঠিং পখরি, আহালদারা ভিউ পয়েন্ট, অরেঞ্জ গার্ডেন ক্যাম্পিং, লাৎপঞ্চার, সিটং ফরেস্ট, যোগিখলা রক ক্লাইম্বিং স্পট।

Next Article