Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়: পর্ব ২১—প্রতিকূলতার LOC পেরিয়ে হানলে গ্রামের রাত্রিবাস, নবম পর্ব

TV9 Bangla Digital | Edited By: megha

Oct 08, 2023 | 9:20 AM

Leh-Ladakh: আরও এক ঘণ্টা ক্রমাগত ধুলো উড়িয়ে এসে পৌঁছলাম দেবরিং। এসে উঠলাম লেহ মানালির বড় রাস্তায়। ক্লান্ত সূর্য পাহাড়ে পিছনে লুকিয়ে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার ফাঁক খুঁজছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উত্তরের ঠাণ্ডা। পরিস্থিতি যা, তাতে পাং পেরিয়ে যাওয়া আর সম্ভব ছিল না।

Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়: পর্ব ২১—প্রতিকূলতার LOC পেরিয়ে হানলে গ্রামের রাত্রিবাস, নবম পর্ব

Follow Us

ঘুম ভাঙার পর চোখ রগড়ানোর ফাঁকে বাইরে তাকাতেই দৃষ্টি আটকে গেল সামনের ক্যানভাসে। সূর্যের ঘুম ভাঙেনি এখনও। তবে তার আড়মোড়া ভাঙার লাল আভা এসে পড়েছে পাংগং-এর জলে। দিগন্তরেখায় ভাসতে- ভাসতে থমকে দাঁড়িয়েছে পরিযায়ী মেঘের দল। পাড় ধরে হেঁটে চললাম বেশ কিছুটা পথ। বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার আমরা বেরিয়ে পড়লাম মীরাক হয়ে হানলের উদ্দেশ্যে। জনবসতি নীচে ফেলে চড়াই শুরু হল। রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে, চারপাশে নেড়া পাহাড় আর রাস্তা বলতে কুড়ি পাথর দিয়ে তৈরি দুর্গম এক পথ। মনে হচ্ছে যেন সত্যি চাঁদের দেশে কোনও এক নির্জন প্রকৃতির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যদিও প্রকৃতি এই খামতি মিটিয়ে চলেছে অবিরত, এত ঝাঁকুনিতেও ক্লান্ত হতে দেয়নি কখনওই। ওঠার পথে গোটা দুয়েক ছোট-ছোট নাম না-জানা বরফজমা লেক চোখে পড়ল। বালি আর পাথরের ফাঁকে-ফাঁকে দেখা মিলল কুল-গোত্রহীন রঙ বেরঙের ফুলের ঝোপ। তারপর এসে পোঁছলাম রেজাংলা ওয়ার মেমোরিয়ালে। এখানে এসে জানতে পারলাম কীভাবে ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে ভারতীয় সেনা যুদ্ধ করেছিল এবং এই রেজাংলা শৃঙ্গকে অধিকার করে রেখেছিল। সেই ভারতীয় সৈনিকের দল বীরত্বের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেও কীভাবে সেনা ছাউনিকে চিনের হাতে তুলে দেয়নি, তারই অনবদ্য ঘটনার কথা জানতে পেরে কষ্ট হলেও পড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে রেজাংলা মাটিতে পা দিয়ে গর্ভ অনুভব করলাম।

এরপর আর দেরি না করে হনলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা পৌঁছলাম একটি ছোট্ট গ্রামে, যার নাম থাংরা। রাস্তা খুব খারাপ… প্রায় নেই বললেই চলে। কোনও ক্রমে আর্মি ক্যাম্প পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম লোমা চেকপোস্ট অথবা লোমা ব্রিজের সামনে। ইনার লাইন পারমিট চেক করানো সম্পূর্ণ হলে সিন্ধুনদীকে বাঁ দিকে রেখে ব্রিজ পেরিয়ে হানলের দিকে পা বাড়ালাম। লোমা থেকে হানলের দূরত্ব পঞ্চাশ কিমি। রাস্তা আগের থেকেও মসৃণ। সদ্য বিছানো মসৃণ কালো কার্পেটে চাকা গড়াল মর্জি মতো। লোমার পর সাত কিলোমিটারের মধ্যেই একমাত্র গ্রাম রঙ্গো পেরিয়ে এলাম। খানিক দূরত্ব রেখে হাঁটু জল নিয়ে সিন্ধু অভিমুখে বয়ে চলেছে হানলে নালা। একটানা চালিয়ে হানলের উপকণ্ঠে এসে দাঁড়ালাম। খানিক দূরেই সামনের উঁচু পাহাড়টার ওপর সপ্তদশ শতকের প্রাচীন হানলে গুম্ফা দাঁড়িয়ে আছে কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। লাদাখের রাজা সেনগে নামগিয়াল তৈরি করিয়েছিলেন এই বৌদ্ধ উপাসনাস্থল। সোজা বাইক চালিয়ে উঠে এলাম মনেস্ট্রির প্রবেশদ্বারে। পরিচর্যার অভাবে ভগ্নপ্রায় এই মনেস্ট্রির পরতে-পরতে তিব্বতি স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট। একদিকে, সারিবদ্ধ বাড়ি, সামনের সবুজ মাঠের মাঝে শিরার মতো বয়ে যাওয়া অজস্র নালা, একটা-দু’টো জংলি ঘোড়া, ওপর থেকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে গ্রামটাকে।

উল্টো দিকের পাহাড়ের ওপর আছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স দ্বারা নির্মিত পনেরো হাজার ফুট উচ্চতায় বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম টেলিস্কোপ। পৃথিবীর সবথেকে বেশিদিন স্বচ্ছ আকাশ এখান থেকে দৃশ্যমান হওয়ার কারণে হানলেতে এই টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে। এখানে ওঠার পথে বাইকগুলো একটু নীচে পার্ক করে হেঁটে উঠে এলাম। নীচে এক অংশে প্লান্ট হচ্ছে শ’য়ে-শ’য়ে সোলার প্যানেল। অবজারভেটরির ভিতরে ইন্সট্রাক্টর সমস্ত অংশ ঘুরিয়ে ডেমো দিয়ে দেখালেন এই বিশাল টেলিস্কোপের কার্যপ্রণালী। তিনি জানালেন, সবকিছু ম্যানুয়ালি এখানে মেইন্টেনড হলেও সরাসরি পুরো কন্ট্রোল হয় বেঙ্গালুরুর মেইন সেন্টার থেকে। সবকিছু দেখার পরে আমাদের কাছে আর একটাই কাজ বাকি—রাত্রি নিবাসের জায়গা খোঁজা। প্রায় গ্রামটাকে ভাল করে খুঁজে কোথাও হোটেল বা হোমস্টে পাওয়া গেল না। শেষে একটি পরিত্যক্ত দোকানে থাকার জায়গা মিলল, তা-ও হাজার টাকার বিনিময়ে। তাই আর দেরি না করে সন্ধ্যা নামার আগেই আমরা রান্নার কাজ সেরে ফেললাম। খাওয়া সেরে দোকানের ছাদে উঠলাম তারা গুণতে। সত্যি বলতে বিড়লা তারামণ্ডলের ভার্চুয়াল আকাশ ছাড়া এত কাছ থেকে তারায় ভরা আকাশ আর কোথাও দেখিনি। যেন চাইলেই হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে ওদের এক-একটাকে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ফলে বেশিক্ষণ আর তাদের দেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরে কিছু ফটোশুট করে শুয়ে পড়লাম স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে।

সকাল সাতটার সময় উঠে দেখি আকাশ কেন জানি না আমাদের উপরে অভিমান করে আছে। আমরা যে দিকে যাব—আজকের প্ল্যান হল ফোটি লা ১৮১২৪ ফিট এবং উমলিং লা ১৯১০০ ফিট, মানে সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মোটারেবেল রোড—যা এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের থেকে উঁচু। তাই আর সময় নষ্ট না করে ব্রেকফাস্ট শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম ফোটি লা-র উদ্দেশ্যে। হানলে থেকে ডান দিক নিয়ে ফোটিলা রোড ধরলাম। রাস্তা কিছুটা ভাল; তারপর রাস্তার কাজ হওয়ার কারণে যাত্রাপথ আর নেই বললেই চলে। বাইকের থ্রটল না-পাওয়ার কারণে আমাদের বাইকের এয়ার ফিল্টার খুলতে বাধ্য হলাম। এবার আগের থেকে থ্রটল একটু ভাল অনুভব করলাম। তারপর এভাবেই ফার্স্ট এবং সেকেন্ড গিয়ারে পৌঁছে গেলাম ফোটিলা টপে। টপে ওঠার ঠিক আগেই শুরু হল তুষারপাত। এখানে তাপমাত্রা এতটাই কম যে, বৃষ্টি বরফের আকার ধারণ করেছে। উপরে কিছুটা সময় কাটিয়ে এবং ছবি তুলে এবার নীচে নামার পালা। নীচে নামার সময় আবহাওয়া আরও খারাপ। মাত্র পাঁচ ফুটের বেশি কিছুই দেখা যাচ্ছে না… শুধু মেঘ আর মেঘ। এখানে তুষারপাতের পরিমাণও বেশি। রাস্তায় সবে পড়া বরফে পথ প্রায় সাদা। তার সঙ্গে আমাদের গাড়ির চাকারও গ্রিপ নেই বললেই চলে। কোনও ক্রমে দু’পা এবং গিয়ারের সাহায্যে নীচে নামলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি অঝোরে বৃষ্টি। তাই আবহাওয়ার এরকম পরিবর্তন দেখে আমরাও আমাদের প্ল্যানের পরিবর্তন করলাম। ঠিক হল উমলিং লা আর যাওয়া হবে না। তাই এই প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আশ্রয় নিলাম আর্মি ক্যাম্পে। কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি একটু কমায়, তাঁদেরই কথা মতো রাস্তা অনুসরণ করলাম। তাঁদের কথামতো এই রাস্তা কোনও ট্যুরিস্টের প্রযোজনে ব্যবহার করা হয় না। এই রাস্তাটাই হল LOC। ট্যুরিস্টের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় দু’টি রাস্তা: একটি হল যে রাস্তা দিয়ে আসলাম আমরা, আর অন্যটি হল ডেমচক হয়ে হানলে রোড। তুষারপাতের কারণে দু’টি রাস্তাই বন্ধ, চারচাকা হলেও যাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু বাইক নিয়ে যাওয়া কোনও মতেই সম্ভব নয়। তাই তাঁদের কথামতো রাস্তাটি হল ফুকছে থেকে বাঁ দিক নিয়ে সিন্ধু নদীকে ডান দিকে রেখে সোজা দুংটি। এই রাস্তাতেই দেখেছি ভারতীয় বাঙ্কার। আর এই রাস্তাটির বিবরণ না দেওয়াই ভাল, কারণ এর সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য জড়িত রয়েছে।

তারপর অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রায় সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে পৌঁছে গেলাম হানলে শহরে। লাগেজ কাল রাতেই বাইকে লোড করা ছিল। তাই ব্রেকফাস্ট সেরে সাতটার মধ্যেই রওনা দিলাম। আজকের রাস্তা যে বেশ অফরোড হতে চলেছে, তার একটা অস্পষ্ট ধারণা আগে থেকেই ছিল। বিগতদিনের ফেলে আসা পথেই লোমা, নিওমা হয়ে মাহে চেকপোস্ট থেকে যেতে হবে বাঁ দিকে সো-মরিরির উদ্দেশ্যে। বালি, নুড়ি-পাথর, আর পিচ ভাঙা রাস্তা ধরে পৌঁছতে হবে সুমডো গ্রামে। মাহে থেকে বারো কিলোমিটার এসে এই সুমডো থেকেই বাঁ দিকে আরও চল্লিশ কিলোমিটার পথ নিয়ে চলে সো মরিরির উদ্দেশ্যে। রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে। বড়-বড় বোল্ডারের মাঝে কোনও মতে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি। চেষ্টা করেও বাইকের স্পিড বাড়ানো যাচ্ছে না। এভাবেই ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় কিয়াগার লা পেরিয়ে কিয়াগার সো পৌঁছলাম। প্রকৃতি এখানে বিরূপ। রুক্ষ শুষ্কতায় ভরে রয়েছে প্রতিটা কোণা। তারই মাঝে নীলার মতো আবেশ ছড়ানো ছোট্ট এই লেক নিষিদ্ধপল্লির মোহময়ীর ছলে বারবার ইশারা করলেও, সময়ের অভাবে সাড়া না-দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম সো মরিরির দিকে। শেষের পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা বোল্ডারের ধাক্কায় বাইকের নীচের ধাতব ঠুংঠাং শব্দ বুকে গিয়ে বিঁধছে। ধোঁয়াটে আকাশের ছায়ায় মুখ লুকিয়েছে সো মরিরি। তার সব্জে ঘোলাটে রং মোটেও মন ভোলায় না। এ দিকে, হটাৎ একঝাঁক ডাইনোসরের আকারে মশার মতো দেখতে একপ্রকার পতঙ্গ কামড়াতে শুরু করেছে অতর্কিতে। এই অবস্থায় বেশিক্ষণের অপেক্ষা ঠিক হবে না বুঝে পাং-এর দিকে পা বাড়ালাম। ভিউ পয়েন্টের বাঁ দিকে দূরে চামসের কাংরি। এখানেই রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম নন-মোটরেবল পাস। উচ্চতা প্রায় একুশ হাজার পাঁচশো ফুট।

লেকের দু’পাশে দুই ভিউ পয়েন্ট আর কারজক গ্রাম রয়ে গেল অদেখা। একই পথে ফিরে এলাম সুমডো, সঙ্গে নিলাম একটা চা-পানের বিরতি। পাং এখনও একশো কিমির রাস্তা, যার মধ্যে প্রায় ষাট কিলোমিটারের কম বেশি অফরোড। অতএব ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই বাইকে স্টার্ট দিলাম। যখন সো কার এসে পৌঁছলাম, তখন প্রায় বেলা তিনটে। সো কার প্রায় জলশূন্য। আশপাশের ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, সাদা ঝুরো বরফের মতো সাদা হয়ে আছে। বাকি জলা জমি জুড়ে চরে বেড়াচ্ছে জংলি ঘোড়া, ভেড়া আর ইয়াকের দলবল। এখানে কিছুক্ষণ ছবি তুলে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেললাম হোটেলে। লেক বাঁ দিকে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম।

আরও এক ঘণ্টা ক্রমাগত ধুলো উড়িয়ে এসে পৌঁছলাম দেবরিং। এসে উঠলাম লেহ মানালির বড় রাস্তায়। ক্লান্ত সূর্য পাহাড়ে পিছনে লুকিয়ে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার ফাঁক খুঁজছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উত্তরের ঠাণ্ডা। পরিস্থিতি যা, তাতে পাং পেরিয়ে যাওয়া আর সম্ভব ছিল না। দেখতে-দেখতে মোরে প্লেন-এ এসে উপস্থিত হলাম। স্থানীয় নাম কিয়াং চু থাং, আক্ষরিক অর্থ কিয়াং যেখানে জল খুঁজে পায় না। চল্লিশ কিমির ধূ-ধূ মাঠ জুড়ে রাস্তা চলেছে প্রায় সরলরেখায়। অত্যধিক ঠাণ্ডা আর অক্সিজেনের অভাবের কারণে অভিজ্ঞরা এখানে থাকতে বারণ করলেও আমাদের আর উপায় ছিল না। এখানেই রাত কাটানোর জন্য থেকে গেলাম। একটু দর-দাম করে এক চাচির ধাবায় মাথা পিছু একশো টাকায় কোনও রকমে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা হল। জায়গাটির ছোট পরিসরের সৌজন্যে পরিচিতি হল আরও ভিনরাজ্যের রাইডারদের সঙ্গে।

আজ রাতের খাওয়া নিয়ে একটা মজার ঘটনা বলি। চা-বিস্কুট খেতে-খেতে সন্ধ্যে সাতটা বেজে গেল। আজ রান্না করার প্রস্তাব আগেই নাকচ হয়েছে। অতএব কিনে খেতে হবে। এই কিনে খাওয়ার ব্যাপারে ভিলেজ বাইকার্স বরাবরই নিমরাজি। আসলে স্বল্প বাজেটে ঘুরে বেড়ানোই আমাদের মূলমন্ত্র। তাই টেন্ট আর রান্নার সরঞ্জাম আমরা সঙ্গেই রাখি। এখন সমস্যা হচ্ছে মাথাপিছু দেড়শো টাকা প্লেটে রুটি-সব্জিতে আমাদের একটু গাত্রদাহ হয় বৈকি। আশপাশের ধাবায় ছড়িয়ে পড়লাম জুটি করে দাম যাচাই করতে। সবশেষে দেখলাম আমরা যে ধাবায় আছি, সেটাই সবথেকে সস্তা। অগত্যা চাচিকেই অর্ডার দিয়ে টিনের চালায় ঢুকে গেলাম। আমাদের ফেরার দিন, থাকার জায়গা আর মোট মিল-এর হিসাব কষে দেখা গেল প্রায় দশ কিলো চাল বেঁচে যাবে। আমাদের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। এই চাল চাচি নিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন, যার বিনিময়ে রাতের প্লেটপিছু ডিসকাউন্টের আর্জি জানালাম। চাল দেখে চাচি যে খুশি হয়েছিল, তা জানতে পারলাম আমাদের বিলের যোগফলে। রাতের স্টে হাজার টাকা আর মাথাপিছু মিল পঞ্চাশ টাকা। মানে বাংলার চাল, প্রতি কেজি একশো টাকা। বিনিময় প্রথার কথা পড়েছিলাম ছেলেবেলায়, আজ চাক্ষুষ হলো। যাই-ই হোক, খাওয়া সেরে এত ঠাণ্ডার সত্ত্বেও রাতে ঘুম ভালই হলো সবার।

…………… ক্রমশ

Next Article