গরমের ছুটিতে অনেকেই পাড়ি দেন দার্জিলিংয়ে। গ্লেনারিজ়ে বসে দার্জিলিং টি’তে চুমুক দিয়ে সেলফি আর ভোরের স্লিপিং বুদ্ধাতেই খুশি থাকেন অনেকে। আবার অনেকে খোঁজেন প্রাকৃতিক প্রশান্তি, নিরিবিলি জায়গা। এমন জায়গা যদি দার্জিলিংয়ের মধ্যেই খুঁজে পান, তাহলে কেমন হবে? শৈলশহর থেকে মাত্র ১ ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে এক লুকানো পাহাড়ি গ্রাম। যে গ্রামের কোলে বসে তিস্তা নয়, দেখা মেলে রঙ্গিতের। যেখানে গেলে চোখ জুড়িয়ে যাবে সবুজে। জায়গার নাম কিজম।
কাঞ্চনজঙ্ঘার লোভে কিজম গ্রামে না যাওয়াই ভাল। খুব একটা পরিষ্কার ভিউ পাওয়া যায় না কিজমের কোলে বসে। তবে, আশেপাশের তুষারাবৃত শৃঙ্গগুলো ভালই চোখে পড়ে। কিজম গ্রামে বসে যা দেখা যায়, তা হল সিকিমকে। পশ্চিমবঙ্গের কোলে বসে এভাবে সিকিমকে দেখার মজা কিজম ছাড়া খুঁজে পাওয়া কঠিন। এমনকী কিজমে বসে সিকিমের রাস্তার গাড়ি চলাচলও চোখে পড়ে। আর এই সিকিম ও কিজমের মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে রঙ্গিত নদী। কিজম গ্রাম থেকে রঙ্গিতের প্রতি বাঁক দেখা দেয়। আর দেখা যায় জোরথাং, সিকিমের দারামদিনের মতো একাধিক পাহাড়ি গ্রাম।
গ্রামজুড়ে স্কোয়াশের চাষ। ঘন সবুজে ঢাকা গ্রাম। যদিও এই গ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। গ্রামের মধ্যে রয়েছে একটি প্রাচীন গুম্ফা। নেজি মনেস্ট্রি। ১৭৬০ সালে তৈরি। এই কাঠের তৈরি গুম্ফা একসময় তেন্দুক রাজার প্রাসাদ ছিল। যদিও তিনি ছিলেন তিব্বতী, সিকিমের বাসিন্দা। ব্রিটিশদের কাছে তিনি রাজা উপাধি পেয়েছিলেন। তিব্বতী ধাঁচে পুরো গুম্ফা তৈরি কাঠ দিয়ে। ভিতরের কারুকার্য প্রাকৃতিক রং দিয়ে আঁকা। ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ এই নেজি মনেস্ট্রি। মনেস্ট্রির পাশেই রয়েছে নকশা ডুংগা। পাথরের গায়ে খোদাই করা বৌদ্ধের ছবি। এটাও মনেস্ট্রির সমসাময়িক। মনেস্ট্রির ছাড়াও এই গ্রামে রয়েছে একটি গির্জা, যা ১৮১৫ সালে তৈরি।
এছাড়াও কিজম গ্রামে রয়েছে কার্মি ফার্ম। এটা এই গ্রামের জনপ্রিয় হোমস্টে। তেন্দুক রাজার বংশধর অ্যান্ড্রু এই হোমস্টে চালু করেছেন। তবে, এই হোমস্টে তে থাকতে গেলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভাল। এছাড়া এখানে রয়েছে আলে তার ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে দেখা যায় গোটা উপত্যকা। যদিও এখানে রাস্তা একটু খারাপ। ঘুরতে যেতে পারেন পঞ্চকন্যা ধাম। এটাও একটা ভিউ পয়েন্ট।
দার্জিলিং থেকে কিজমের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। শেয়ার গাড়িতে আসতে হলে আপনাকে বিজনবাড়ি থেকে পৌঁছাতে হবে কিজম গ্রামে। এছাড়া আপনি দার্জিলিং বা শিলিগুড়ি থেকে কিজম যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবে। কিজমে রাত কাটানোর জন্য একাধিক হোমস্টে রয়েছে। সেখানে থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ ১,৫০০-২,০০০ টাকা।