দু’দিনের ছুটিতে এখনও বাঙালি ভিড় করে দিঘায়। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর বেড়াতে এসে বেশিরভাগ সময়টাই মানুষ কাটাতেন সমুদ্র সৈকতে। এবার এর আশেপাশে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন রাজবাড়ি, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান দেখারও সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। দিঘার পর্যটন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে সার্কিট ট্যুরিজম চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। তাই এবার দিঘা গেলে শুধু সমুদ্র নয়, এই জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোও ঘুরে দেখতে পারবেন। এর জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে।
বেশ কিছু বছর আগে এমনই একটি পরিকল্পনা নেওয়া নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ওই সার্কিট ট্যুরিজমের মধ্যে তমলুকের প্রাচীন রাজবাড়ি, ময়নাগড় রাজবাড়ি, পটাশপুর রাজবাড়ি, খেজুরির প্রাচীন ডাক ও টেলিগ্রাফ অফিস, কবরখানা কপালকুণ্ডলা মন্দিরের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এবার জোর কদমে কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে যে সার্কিট ট্যুরিজম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে তমলুক, মহিষাদল, পটাশপুরের মতো জায়গাগুলোও রয়েছে।
হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে মহিষাদল রাজবাড়ি সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানেই শেষ নয়। পর্যটকেরা চাইলে এই রাজবাড়িতে রাতও কাটাতে পারবেন। সেই উদ্যোগ নিয়েছে রাজপরিবার। আশা করা হচ্ছে এই সার্কিট ট্যুরিজম পুজোর আগেই শুরু করা হবে। জেলার এই দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখানো জন্য ১৫০ জন গাইডকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চলছে।
গত কয়েক বছরে দিঘাকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের আদলে দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির। নিউ দিঘা স্টেশন লাগোয়া ভোগীব্রহ্মপুর মৌজার বিস্তীর্ণ উঁচু বালিয়াড়ির ওপর গড়ে উঠছে এই জগন্নাথধাম। তৈরি হবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে। উচ্চতাও হবে পুরীর মন্দিরের সমান।
সম্প্রতি দিঘায় চিড়িয়াখানা তৈরির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। দিঘায় ১২ একর জমিতে নতুন চিড়িয়াখানা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বন দফতর। পাশাপাশি নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে দিঘার কাছে নায়কালী মন্দির ও সংলগ্ন এলাকা। দিঘা গেলে তাজপুরেও ঢুঁ মারেন অনেকেই। ইতিমধ্যে দিঘা থেকে তাজপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের কাজও শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
দিঘার পর্যটন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাস চালানো হবে বলেও জানা গিয়েছে। আশা করে হচ্ছে, এই সার্কিট ট্যুরিজম চালু হলে দিঘায় আরও বাড়বে পর্যটকদের ভিড়। প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশির জোয়ার দিঘা পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। এতে বাড়বে দিঘা কর্মসংস্থানের সুযোগও। সব মিলিয়ে এখন আশার আলো দেখছে দিঘার পর্যটন শিল্প।