রাক্ষসী নন, শত শত বছর ধরে ‘মা’ হিসেবেই মানালির মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন ভীম পত্নী হিড়িম্বা

স্থানীয়দের বিশ্বাস আজও হিড়িম্বা মা আপদে বিপদে রক্ষা করে চলেছেন তাঁদের। রক্ষা করছেন গোটা অঞ্চলকে।

রাক্ষসী নন, শত শত বছর ধরে 'মা' হিসেবেই মানালির মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন ভীম পত্নী হিড়িম্বা
পাহাড়ের কোলে হিড়িম্বা দেবীর মন্দির।
Follow Us:
| Updated on: Feb 20, 2021 | 7:16 PM

হিমালয়ের পাদদেশে, পাইন-দেবদারু ঘেরা প্যাগোডা স্টাইলে নির্মিত মানালির এক মন্দির। সে মন্দিরের উপাস্য দেবতা এক ‘রাক্ষসী’। নাম তাঁর হিড়িম্বা। সেই হিড়িম্বা মহাভারতে যিনি পরিচিত পান্ডবপুত্র ভীমের স্ত্রী হিসেবে। ইতিহাস তাঁকে রাক্ষসী বলে চিনলেও স্থানীয়দের কাছে তিনি মা। তিনি ‘মানালির মা হিড়িম্বা’। মানালি বেড়াতে গেলে বরফে সেলফি, ম্যালে কেনাকাটার বাইরেও আপনার ভ্রমণ লিস্টে এক নম্বরে থাকুক হিড়িম্বা দেবীর মন্দির। সেই মন্দির যেখানে রহস্য, ইতিহাস আর পুরাণ মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে।

কথিত আছে, হিড়িম্বা দেবীর দাদা হিড়িম্ব ছিলেন কাম্যাকা জঙ্গলের রাজা। দুর্যোধনের ছলনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সেই জঙ্গলে মাতা কুন্তির সঙ্গে আশ্রুয় নিয়েছিলেন পঞ্চপান্ডব। দাদার আদেশে সুন্দরী রমণীর বেশে পঞ্চপান্ডবকে বধ করতে যান হিড়িম্বা। কিন্তু ভীমকে দেখে প্রথম দর্শনেই ভাল লেগে যায় তাঁর। বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। গোটা ঘটনা জানতে পেরে নিজের বোনকেই হিড়িম্ব হত্যা করতে উদ্যত হলে হিড়িম্বকে বধ করেন ভীম। এর পরেই কুন্তির আদেশে হিড়িম্বাকে বিয়ে করেন ভীম। শর্ত ছিল একটাই তাঁদের সন্তান হওয়ার পর হিড়িম্বাকে ত্যাগ করবেন ভীম। কথিত রয়েছে, ভীম এবং হিড়িম্বার সন্তান ঘটোৎকচ জন্মাবার পর ভীম সেখান থেকে চলে এলে মানালির ওই জঙ্গলেই পুত্রসন্তানকে নিয়ে গভীর তপস্যায় মগ্ন হন হিড়িম্বা। নিজের হাতে বড় করে তোলেন ঘটোৎকচকে।

মানালির হিড়িম্বা মন্দিরটি সম্ভবত তৈরি হয়েছিল ১৫৩৩ সালে। মন্দিরের ভিতর রয়েছে বিরাট এক কালো রঙের পাথর। লোকের বিশ্বাস ওই কালো পাথরের নিচেই ধ্যানে বসতেন মা হিড়িম্বা। গোটা মন্দির জুড়েই অসাধারণ কাঠের কাজ। হিন্দু মন্দিরে বৌদ্ধ প্যাগোডার শৈলী যেন ক্রস কালচারের এক জীবন্ত দলিল। গোটা মন্দির সাজানো রয়েছে বিভিন্ন পশুর শিঙ দিয়ে। রয়েছে এক বিশাল আয়তনের পায়ের ছাপ। স্থানীয়দের বিশ্বাস সেই পায়ের ছাপ নাকি স্বয়ং মা হিড়িম্বার। চারিদিকে পাইন আর দেবদারু গাছের জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে ঠিকরে পড়া আলো সৃষ্টি করে এক মায়াবী আলো-আঁধারি পরিবেশ। নবমী বা নবরাত্রির দিনে যখন সারা দেশ মা দুর্গার পুজো করেন তখন মানালি মেতে ওঠে এক ‘রাক্ষসী’র আরাধনায়।

হিড়িম্বা মন্দির থেকে খানিক এগলেই চোখে পড়বে আরও এক মন্দির, যা আকৃতিতে তুলনামূলক ছোট। সেটি হিড়িম্বা এবং ভীমের সন্তান ঘটোৎকচের মন্দির। সেই ঘটোৎকচ মহাভারত অনুযায়ী যিনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় পাণ্ডব পক্ষে যোগ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মন্দির চত্বরে দেখা মিলবে অসংখ্য চমরি গাইয়েরও। তাই মানালিতে গেলে এ জায়গা মিস করবেন না কোনওমতেই। স্থানীয়দের বিশ্বাস আজও হিড়িম্বা মা আপদে বিপদে রক্ষা করে চলেছেন তাঁদের। রক্ষা করছেন গোটা অঞ্চলকে।