TV9 Bangla Digital | Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী
Oct 09, 2021 | 1:49 PM
চারপাশে মৃত্যু, অক্সিজেনের অভাব, রাস্তায় কান পাতলেই বুকে ভয় ধরানো অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। মাত্র পাঁচ-ছ মাস আগেই এমন কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে বাংলা তথা গোটা দেশ। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের সেই স্মৃতি এখনও দগদগে। সেই সময়ে বাংলায় চলছিল আরও এক উৎসব। ভোট উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই বেরিয়ে পড়েছিল সংক্রমণের ভয়াল চেহারা। সংক্রমনের দায় নির্বাচন কমিশনের দিকে ঠেলেছিল আদালত। কমিশনকে খুনি তকমা পর্যন্ত দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। ঠিক কয়েক মাস বাদেই শুরু হয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। দ্বিতীয়া কিংবা তৃতীয়ায় যে ভিড় দেখা দিয়েছে,তাতে ফের উঁকি দিচ্ছে সংক্রমণের আশঙ্কা। আর এবার যদি হাজির হয় তৃতীয় তরঙ্গ তাহলে সেই 'খুনে'র দায় নেবে কে?
হিসেব মতো পুজো এখনও ভালো করে শুরু হয়নি। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত যে উৎসব এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল তার পরিধি বাড়তে বাড়তে এখন মহালয়া অবধি পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পুজো উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েক দিনে সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া মণ্ডপগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো।
মন্ডপের ভিতরে প্রবেশ ভিতরে প্রবেশ নিয়ে একাধিক নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ডপের বাইরেই বা ভিড় কম কি! বিশেষত গত দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যতম আলোচ্য হয়ে উঠেছে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পূজো। কলকাতার একটি পুজোয় মণ্ডপের বাইরে যদি এত ভিড় হয় তাহলে শহর কলকাতার কী অবস্থা হতে পারে তার তার আন্দাজ অবশ্যই পাওয়া যায়। ভিড়ের মধ্যে মাস্ক নেই অনেকের মুখেই। বিশেষত অনেক ছবিতেই দেখা গিয়েছে, শিশুদের মুখে কোনও মাস্ক নেই। আর শিশুদের জন্যই বারবার সতর্ক করা হয়েছে।
দীপাবলীর আগে সতর্ক স্বাস্থ্য মন্ত্রক (ফাইল ছবি)
গত মার্চ -এপ্রিল মাস জুড়ে ছিল বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যেই তখন কড়া নাড়তে শুরু করেছে দ্বিতীয় তরঙ্গ। আর এপ্রিল থেকেই বাংলা জুড়ে চড়চড় করে বাড়তে শুরু করে করোনার গ্রাফ। আক্রান্ত হন নেতা, মন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রত্যেক পরিবারে থাবা বসিয়েছিল করোনা। এই অবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি দায়ী করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। মানুষের মৃত্যুর দায় কমিশনকে নিতে হবে বলে উল্লেখ করেছিল আদালত। বলা হয়েছিল কমিশনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হওয়া উচিত।
সেই সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। মনে রাখা প্রয়োজন কেরলের সংক্রমণ এখনও চিন্তায় রেখেছে বিশেষজ্ঞদের। সে রাজ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ওনম উৎসবের পর সংক্রমণ বেড়েছে বলেও মত অনেকের। ওনমে মতো কোভিডের দায় চাপবে না তো শারদীয়া উৎসবে?
এই প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বনিক বলেন, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনও সমাবেশেই অনুমতি দেওয়া উচিৎ নয়। তিনি জানান, গত ৭ দিন ধরে রাজ্যে বেড়ে চলেছে করোনা। তিনি বলেন, যতই ভ্যাকসিন দেওয়া হোক নতুন করে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকছেই। কোনোভাবেই এই ধরনের সমাবেশে উৎসাহ দেওয়া উচিৎ নয়। তাঁর কথায়, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন থাকা সত্ত্বেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমাবেশে জন্য প্ররোচিত করা হবে, এটা চলতে পারে না। কেউ এই কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
কলকাতায় পুজোর ভিড় নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, সেই প্রসঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এই পরিস্থিতির জন্য আসলে বিজেপি দায়ী।' এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি আসলে রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর দাবি যেহেতু বিজেপির পুজো নেই তাই বিজেপি নানাভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে, আর আদালত পুজো নিয়ে ছোট ছোট বিষয়েও দুবেলা দু'রকম নির্দেশ দিচ্ছে। তাঁর মতে আদালতের নির্দেশ আদতে কার্যকর করবে সরকার। তাই আদালত ও সরকারের মতে অমিল হলে নির্দেশ কার্যকর হওয়া মুশকিল।
কোভিড নিয়ে তৃণমূল সরকারের কোনওদিনই বিশেষ মাথা ব্যথা ছিল না। এমনটাই মত গেরুয়া শিবিরের। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'কোভিড নিয়ে সরকার কোনওদিনই চিন্তিত নয়। তাদের নিজেদের নির্দেশের মধ্যেই স্ববিরোধিতা রয়েছে। বিশেষত বিধানসভা ভোটের সময় রাস্তায় নেমে খেলা হয়েছে।' বিজেপি নেতা বলেন, 'সেগুলো যখন হয়েছে তাহলে এটাও ঠিকই হচ্ছে।' প্রশাসনের নির্দেশ কি আদৌ কার্যকর হচ্ছে? শমীক বাবুর কথায় এ রাজ্যের মুখ্যসচিব একজন সিভিক ভলেন্টিয়ারের মতো আচরণ করেন। ফলে এ রাজ্যে প্রশাসন বলে কিছু নেই।