মূলত কোনওভাবে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট-এ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার পর বংশবৃদ্ধি শুরু করলে প্রকাশ পেতে থাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের উপসর্গ। প্রস্রাবের দ্বারে শুরু হয় প্রবল ব্যথা। ব্যথার চোটে তলপেট সহ কোমর থেকে শরীরের নীচের অংশ ভারী হয়ে আছে মনে হয়। তার সঙ্গে বারংবার ইউরিনের বেগ আসে। ইউরিন ধরে রাখা অসম্ভব মনে হয়। যতক্ষণ না সংক্রমণ সারে ততক্ষণ এই অসহ্য পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় রোগীকে।
বিশেষ করে কর্মরতা মহিলার জানেন, ইউটিআই কেমন অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে তাঁদের জীবনে। কারণ গণপরিবহণে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় হঠাৎ ইউটিআই-এর কারণে ইউরিনের বেগ এলে ভয়াবহ শারীরিক অস্বস্তিতে পড়তে হয়!
কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইউরিনের বেগ সামলাতে না পেরে কাপড়েচোপড়েই ইউরিন পাস হয়ে যায়! মহিলারা বারংবার ইউটিআই-এর সমস্যায় আক্রান্ত হন। প্রশ্ন হল কীভাবে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়? বারংবার ইউটিআই প্রতিরোধ করার উপায়ই বা কী?
ইউরোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, ইউটিআই সারাতে রোগীকে দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক। তবে ইউটিআই হওয়ার পরে চিকিৎসার তুলনায় রোগ প্রতিরোধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউটিআই প্রতিরোধে ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস হয়ে উঠতে পারে অন্যতম অস্ত্র। তাই সাধারণ কতকগুলি বিষয় মাথায় রাখুন।
১) শরীরে তরলের জোগান: শরীরের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত জল পান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একইসঙ্গে পর্যাপ্ত জল পানের অভ্যেস ইউটিআই প্রতিরোধেও বিশেষ কাজে আসে। যথেষ্ট মাত্রায় জল পান করলে তা স্বাভাবিক ইউরিন পাস-এ সাহায্য করে। এর ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যেতে পারে।
এছাড়া পর্যাপ্ত মাত্রায় জল পানে ইউরিনের ঘনত্বও কমে যায়। এর ফলে এক জায়গায় অনেকখানি ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য অপদ্রব্য জমে থাকার সুযোগ পায় না। ব্লাডার এবং ইউরেথ্রার উপর চাপও কম পড়ে।
তবে শুধু জল নয়। অন্যান্য যে কোনওভাবে তরল পদার্থ সেবনও ইউটিআই প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই বলে চা, কফি, মদ্যপান করা চলবে না কোনওভাবেই। খেতে পারেন স্যুপ। এছাড়া ক্র্যানবেরি জ্যুস পান করলেও তা কিছুটা হলেও ইউটিআই প্রতিরোধ করে বলে দেখা গিয়েছে।
খাবার: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট-এর অন্দরের দেওয়ালে ব্যাকটেরিয়া আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে বেশ কিছু খাদ্য। উদাহরণ হিসেবে ক্র্যানবেরি, ব্লু বেরির কথা বলা যায়। মোট কথা বেরিজাতীয় যে কোনও খাদ্যই ইউরিনারি ট্র্যাক্ট-এর ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্মুদি করে এই ধরনের বেরি নিজের ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
এছাড়া ইউটিআই হলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট-এর বিস্তর ক্ষতি হয়। কমলালেবু, ডার্ক চকোলেট, ইয়োগার্ট, টম্যাটো, ব্রকোলি, পালং-এর মতো খাবারও ইউটিআই জনিত ক্ষয়ক্ষতি সারাতে কাজে আসে।
শুধু জল পান বা খাদ্যাভ্যাসে বদলেই যে কাজ হবে তা ভাবলে ভুল হবে। রোজকার জীবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। প্রশ্ন হল কী কী করবেন?
প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের আগে ও পরে হাত ধুতে হবে সাবান দিয়ে। ল্যাট্রিন ব্যবহারের পরে খুব সাবধানে অ্যানাস পরিষ্কার করা দরকার। খেয়াল রাখবেন জল যেন সামনে থেকে পিছনে আসে। আঁটসাঁট পোশাক পরবেন না। খুব কড়া এবং ক্ষার বেশি দেওয়া সাবান ব্যবহার করবেন না।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোনও ব্যক্তির খুব ঘনঘন ইউটিআই হওয়ার ইতিহাস থাকলে চিকিৎসক রোগীকে প্রোবায়োটিক খাওয়ার ও ট্রপিকাল ইস্ট্রোজেন ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।