
সনাতন ধর্মে শঙ্খের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কথিত আছে যে শঙ্খ ফুঁকলে ঘরের বাতাস শুদ্ধ হয়, শঙ্খের ধ্বনি যতদূর যায় ততদবর পর্যন্ত ইতিবাচক শক্তি সঞ্চারিত হয়। শঙ্খকে বিজয়, শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক বলে মনে করা হয়। বেদ পুরাণেও শঙ্খের উল্লেখ আছে।

মহাভারতেও বিরল পঞ্চজন্য শঙ্খের উল্লেখ রয়েছে। পাঞ্চজন্য হল ভগবান বিষ্ণুর চার অলৌকিক ও ঐশ্বরিক গুণের মধ্যে একটি। সমুদ্রমন্থণের সময় উদ্ভূত বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে এই বিশেষ শঙ্খ ছিল অন্যতম।

মহাভারতে বলা হয়েছে, ভগবান বিষ্ণু বিশ্বকর্মা দ্বারা নির্মিত চক্রবন পর্বতে পাঞ্চজন নামে একজন দৈত্যকে বধ করেছিলেন। আর সেই অসুর যে শঙ্খে বাস করত, সেটিও দখল করেছিলেন। দৈত্যের নাম থেকেই এই শঙ্খের নাম হয়েছে পাঞ্চজন্য।

হরিবংশ পুরাণ অনুসারে, বিষ্ণু হলেন শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম অবতার। পাঞ্চজন্য নামে শঙ্খ হল ভগবান বিষ্ণুর পরম প্রিয় একটি বস্তু। বিষ্ণুর চার হাতে রয়েছে গদা কৌমাদকী, সুদর্শন চক্র ও পদ্ম, পাঞ্চজন্য শঙ্খ। এই শঙ্খ আবার কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল।

হিন্দু ধর্মে সাধারণত তিন ধরনের শঙ্খের উল্লেখ রয়েছে। দক্ষিণাবৃত্তি শঙ্খ, মধ্যবৃত্তি ও বামাবৃত্তি শঙ্খ। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শঙ্খ হল ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চজন্য শঙ্খ। এই বিশেষ শঙ্খের গুরুত্ব অপরিসীম। রয়েছে পৌরাণিক কাহিনিও।

মহাভারত অনুসারে, এই শঙ্খের উদ্ভব হয়েছিল সমুদ্র মন্থনের সময়। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান কৃষ্ণের গুরুপুত্র পুনর্দত্তকে পাঞ্চজন নামে এক অসুর অপহরণ করেছিল। তাঁকে বাঁচাতে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং রাক্ষসনগরীতে যান। ওই অসুর একটি শঙ্খের ভিতরেই বাস করত। সেখানে গভীর নিদ্রায় ছিল পাঞ্চজন অসুর। শ্রীকৃষ্ণ অসুরকে বধ করে শঙ্খটি নিজের কাছেই রেখে দেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, পুর্ণদত্ত যমলোকের দিকে যাত্রা করেছেন।

গুরুপুত্র যে দিকে গিয়েছেন, সেদিকে তিনিও যাত্রা করেন। কিন্তু সেখানে গেলে যমদূত তাঁকে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেন। এরপর শ্রীকৃষ্ণ সেই শঙ্খে ফুঁ দিয়ে গোটা যমলোক কেঁপে ওঠে। এমনকি যমরাজ পর্যন্ত পিলে চমকে যান। আতঙ্কে যমরাজ স্বয়ং কৃষ্ণের কাছে পুনর্দত্তের আত্মা ফিরিয়ে দেন। শঙ্খ ও পুনর্দত্ত দুজনকেই গুরুর কাছে পৌঁছে দেন। শ্রীকৃষ্ণ ফেরত দিলে গুরু জানিয়েছিলেন, সেই শঙ্খ কৃষ্ণের জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

মহাভারতে বলা আছে, পাঞ্চজন্য শঙ্খের শব্দ এতটাই তীব্র যে কৌরবদের কাছে তা আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। শ্রীকৃষ্ণ যখনই এই বিশেষ শঙ্খ বাজাতেন, তখন এর শব্দ মাইলের পর মাইল শোনা যেতন। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই শঙ্খের শব্দ সিংহের গর্জনের চেয়েও তীব্র ছিল।

পাঞ্চজন্য শঙ্খ ছিল ১৪টি রত্নগুলির মধ্যে ষষ্ঠ রত্ন যা সমুদ্র মন্থনের সময় উদ্ভব হয়েছিল। এই শঙ্খ আসলে বিজয় ও খ্যাতির প্রতীক। এর আকৃতি হাতের পাঁচ আঙুলের মতো। তাই শঙ্খ ধরার সময় পাঁচটি আঙুলই ব্যবহার করতে হয়।

বাস্তুদোষ কাটাতে চাইলে এই শঙ্খ বাড়িতে আনতে পারেন। কেটে যাবে বাস্তুদোষ। এই শঙ্খ আবার ধনলক্ষ্মীরও প্রিয়। তাই বাড়িতে আনলে সংসারে কখনও অন্ন-অর্থের অভাব ঘটবে না। পুরাণ অনুযায়ী , এই শঙ্খে ফুঁ দিয়েই শ্রীকৃষ্ণ এক যুগের অবসান ঘটিয়ে নয়া যুগের সূচনা করেছিলেন। সেই থেকে পাঞ্চজন্য শঙ্খের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।