
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এই ফুলের সঙ্গে মহাদেবের যোগ রয়েছে। ফুলটি কিছু বিশেষ এলাকাতেই ফোটে। আর এমন একটি জায়গা হল ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলা। ১২ বছর অর্থাৎ এক যুগ পর এই ফুল প্রস্ফুটিত হল ঝাড়খণ্ডের দুমকায়।

শিবলিঙ্গি শব্দবন্ধটি একাধিক প্রশ্ন জাগায়। বিশেষ করে ফুলের রং এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে। দেখা যাক এই ফুল ও গাছের তাৎপর্য ঠিক কোথায়?

ঝাড়খণ্ডের দুমকায় আদি নিবাস এই পুষ্পের। ফুলের আকার ও আকৃতিও চিত্তহরণকারী। ফুল ও গাছের এমন নামকরণের পিছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। এক ঝলক দেখলেই বোঝা যাবে এই গাছের বীজের সঙ্গে শিবলিঙ্গের মিল রয়েছে।

যে গাছে শিবলিঙ্গি ফোটে সেই গাছের দেখা মেলে দারুক অরণ্যে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই পুষ্প দিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা করলে তিনি অত্যন্ত প্রসন্ন হন। ভক্তের সকল ইচ্ছা পূরণ করেন তিনি।

শিবলিঙ্গি ফুল ফোটে ব্রায়োনিয়া ল্যাসিনিওসা গাছে। গাছটি ঔষধিগুণসম্পন্ন। অর্থাৎ ওষুধ প্রস্তুতিতেও কাজে আসে উদ্ভিদটির নানা অংশ। কলেরা, ব্রঙ্কাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, প্রদাহ, এবং পক্ষাঘাতের মতো একাধিক অসুখ সারাতে এই ঔষধি গাছের বিশেষ ভূমিকা আছে।

কামোত্তেজনা বাড়াতেও বিশেষ কাজে আসে গাছটির ঔষধি উপাদান। এছাড়া সাপের কামড়ের চিকিৎসা ও পেটের রোগ ভালো করতেও বিশেষ উপকারী।

ঝাড়খণ্ড ছাড়াও শিবলিঙ্গি গাছের দেখা মেলে নেপাল, সিকিম, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ জাপান, আফ্রিকার উষ্ণমণ্ডলে। ভারতের মধ্যে বিহার, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশেও গাছটি জন্মায়। অবশ্য কর্ণাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের কিছু কিছু অংশে গাছটির দেখা মিলেছে।

তবে শুধু গাছ নয়, এই উদ্ভিদের বীজেরও বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। কনস্টিপেশন সারাতে বিশেষ উপকারী এই গাছের বীজ।

শিবলিঙ্গি গাছের বীজ চূর্ণ করে খেলে কনস্টিপেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ এই গাছের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা মলের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অন্ত্রের আকুঞ্চন ও প্রসারণ ক্ষমতা স্বাভাবিক হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে চলে যায়। এমনকী তীব্র জ্বর কমাতেও শিবলিঙ্গি গাছের বীজ কার্যকরী। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এই গাছের বীজের ঔষধি গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। এমনকী ক্লান্তি ও দুর্বলতা হ্রাস করে শরীরে উদ্যম আনতেও সাহায্য করে এই গাছের বীজ।

ইউটেরাস বা জরায়ুর কোষের পরিচর্যা করে বীজটি। অনিয়মিত ঋতুচক্র স্বাভাবিক করতে পারে।

এত গুণ থাকলেও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা প্রেগন্যান্সির সময়ে এই বীজ সেবন করতে নিষেধ করছেন। কারণ সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বীজটি সেবন করলে মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।