কয়েকদন আগেই ২০২১ সালের একটি মামলার রায় দেওয়ার সময় এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়েছিল 'স্তনে হাত দেওয়া বা পাজামার দড়ি ছেঁড়া, ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা হিসাবে গণ্য হয় না। বরং বিষয়টিকে যৌন হেনস্থা হিসাবে নিজের পর্যবেক্ষণ পেশ করেছিল উচ্চ আদালত। তারপর থেকেই সর্বত্র চলছিল এই রায়ের সমালোচনা। এমনকি এই রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার দাবি উঠেছিল।
যদিও সেই মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়। তবে সোমবার সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুনতেই অস্বীকার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী এবং বিচারপতি প্রসন্ন বি ভারালের বেঞ্চ আবেদন খারিজ করে জানিয়ে দেয় 'আদালত এতে মনোনিবেশ করতে আগ্রহী নয়।'
মামলাকারী পক্ষের আইনজীবি এই দিন সুপ্রিম কোর্টে নিজের পক্ষে বক্তব্য পেশ করার সময় 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' প্রকল্পের উল্লেখ করলে বিচারপতি ত্রিবেদী তাঁকে থামিয়ে দেন। এরপরেই তিনি বলেন, কেস পেশ করার জন্য আইনজীবির 'লেকচার বাজি' শোনার প্রয়োজন নেই। কেন আবেদনকারী আইনজীবি সেই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তারপরেই আবেদন খারিজ করে দেয় দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত ২০২১ সালে উত্তর প্রদেশের কাসগঞ্জে ১১ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে দুই অভিযুক্ত পবন এবং আকাশ। লিফ্ট দেওয়ার অছিলায় নির্যাতিতার স্তনে হাত দেয়, পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দেয় অভিযুক্তরা বলেই অভিযোগ। তাঁকে কালভার্টের নীচে টেনে ধর্ষণের চেষ্টাও করে। তখনই কয়েকজন পথচলতি মানুষ নাবালিকার চিৎকার শুনে ছুটে এসে নাবালিকাকে রক্ষা করেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রথমে কাসগঞ্জ ট্রায়াল আদালতে শুনানি শুরু হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইপিসি ৩৭৬ ধর্ষণের ধারা এবং পকসো আইনের ১৮ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের হয়। অভিযুক্তরা হাইকোর্টে আবেদন জানালে, সেখানে বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয় যে এই ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মামলা করা যাবে না। বদলে যৌন নিগ্রহ আইপিসি ৩৫৪বি এবং পকসো আইনের ধারা ৯এম-এর অধীনে মামলার শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই রায়ের পরেই সুপ্রিম কোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবি শোভা গুপ্তা চিফ জাস্টিস অব ইন্ডিয়া, সঞ্জীব খান্নাকে একটি চিঠি লিখে বিষয়টি তাঁর নজরে আনেন। তারপরেই এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীও জানান, তিনি এই রায়কে সমর্থন করেন না। সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি। সুপ্রিম কোর্টকে এই রায়কে খতিয়ে দেখার জন্য আর্জি জানান।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ইন্দিরা জয়সিং, নিজের এক্স মাধ্যমে একটি পোস্ট করে সুপ্রিম কোর্টকে এই বিষয়টিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ কররা অনুরোধ জানান। এক্স মাধ্যমে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরোধীতা করেন বিজেপির সদস্য সিটি পল্লভী। সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল।