
শীত মানেই মিঠে রোদ, ছুটি কাটানোর অনন্ত বেলা! বাঙালিদের কাছে শীতের অর্থ তাই বড়দিন, চিড়িয়াখানা, দীঘা, পুরীতে কয়েকদিনের নিশ্চিন্ত ট্যুর। তীব্র রোদে ত্বক পোড়ার সমস্যা নেই। ভয় নেই ঘামে ভিজে ক্লান্ত হওয়ার। তবে সমস্যা একটাই।

শীতকালে অনেক অসুখ কিন্তু মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কমন কোল্ড অর্থাৎ কাশি, সর্দি, জ্বরে নাজেহাল অবস্থা হয় অনেকের। অসুখে কাহিল হয়ে আরামদায়ক শীতের হর্ষ উপভোগ করতে পারেন না অনেকেই। আসলে শীতকালে যত দিন যায় ততই ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসতে থাকে। দ্রুত আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের সঙ্গে অনেকেই মানিয়ে নিতে পারেন না।

তাছাড়া রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ঘন ঘন ঠান্ডা, সর্দি, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও থাকে। দ্রুত বদলে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার একটাই উপায়, আর তা হল রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলা। ইমিউনিটি শক্তিশালী করতে হলে জোর দিতে হয় খাদ্যগ্রহণের উপর।

আয়ুর্বেদে ঋতুচর্যা বলে একটি বিশেষ বিভাগই রয়েছে। এই বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে কীভাবে জীবনযাপন করতে হয়, কেমন ধরনের খাদ্যগ্রহণ করা দরকার ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও করা হয়েছে। ঋতুচর্যার নিয়ম মেনে চললে যে কোনও ব্যক্তিই অন্দর থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। মোকাবিলা করতে পারেন যে কোনও রোগের। এইভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলা ও অসুখ থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার নাম ‘বালা’।

‘বালা’ অনুসারে শীতকালে একজন ব্যক্তির কিছু নির্দিষ্ট ধরনের খাদ্য খাওয়া উচিত যেগুলি নিয়মিত গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চড়চড় করে বাড়ে! দেখা যাক সেগুলি কী কী?

আমলকী: আমলকী নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই! আয়ুর্বেদে এই ফলকে অমৃত ফলও বলা হয়। ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে এই ফলে। আর আমরা সকলেই জানি ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কতখানি কার্যকরী। এছাড়া অন্যান্য খনিজও রয়েছে যথেষ্ট মাত্রায়। ত্বকের সমস্যা, নানাবিধ প্রদাহ, হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, মানসিক রোগ দূরে রাখতে আমলকী অব্যর্থভাবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন একটি করে আমলকী খান। এমনকী আমলকী খাওয়া যায় সেদ্ধ, শুকনো, মোরব্বা করে। তবে কাঁচা খেলেই ভিটামিন সি মেলে সর্বোচ্চ মাত্রায়।

গুড়: শীতকালই খাঁটি গুড় পাওয়ার ও খাওয়ার আদর্শ সময়। আয়রন সহ একাধিক খনিজ থাকে গুড়। ফলে গুড় খেলে দেহে রক্তের সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। তাই দেহ থাকে উষ্ণ। তবে গুড় খেতে হবে মাত্রা বজায় রেখে। বেশি পরিমাণে গুড় খেলে লুজ মোশন হতে পারে। মুখে ঘায়ের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

মিষ্টি আলু: এই খাদ্যবস্তুতে যথেষ্ট মাত্রায় রয়েছে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম। পুষ্টি উপদানগুলি স্ট্যামিনা বাড়ায়। মিষ্টি আলু সেদ্ধ করে খেলে শরীরের নানা প্রদাহ দূরে থাকে। কনস্টিপেশনের সমস্যাও সেরে যায়। বৃদ্ধ এবং বাচ্চাদের পাতে তাই নিয়মিত দিন মিষ্টি আলু।

চিনাবাদাম: প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ম্যাক্রো এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস-এ ভরপুর চীনাবাদাম। ফলে নিয়মিত চীনাবাদাম ডায়েটে রাখলে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

চ্যবনপ্রাশ: ২০ থেকে ৪০ ধরনের ভেষজ, আমলকী দিয়ে তৈরি হয় চ্যবনপ্রাশ। ফলে নিয়মিত চ্যবনপ্রাশ খেলে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে তো বটেই, তার সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও উজ্জ্বল হয়। নিয়মিত চ্যবনপ্রাশের সেবনে মরশুমি বিভিন্ন অসুখ দূরে থাকে। তার সঙ্গে হজমক্ষমতাও জোরদার হয়। খাবার খাওয়ার পরে একচামচ চ্যবনপ্রাশ খাওয়ার অভ্যেস বাচ্চা থেকে বুড়ো— সবার ক্ষেত্রেই উপকারী।