Ramkrishna Paramhansa: শ্রীরামকৃষ্ণের এই চিন্তাভাবনাগুলি গ্রহণ করলেই জীবন হবে সহজ-সরল! বাড়বে আস্থা-বিশ্বাস
Hinduism: ‘যত মত তত পথ’, এই সর্বধর্মের সারকথাটি এত সহজ করে আর কেউ বলতে পারেননি। কোনও ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ না করে, সকল ধর্মকেই সমদৃষ্টিতে দেখার পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। বাঙালি সমাজকে এক নতুন আশার আলো দিয়েছিলেন তিনি। নিজ ধর্মকে সংকীর্ণ গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে আধ্যাত্মবাদ ও মানবতাবাদের সমন্বয় ঘটিয়ে ফেলাই ছিল রামকৃষ্ণের আদর্শ।

দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ থেকে শুরু করে কলকাতা, পশ্চিমঙ্গের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ঠাকুরের নাম। শৈশব থেকে অন্তিমদিন পর্যন্ত নিজেকে ঈশ্বরের আরাধনায় নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। বঙ্গে নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা রামকৃষ্ণদেব শুধু আধ্যাত্মিক চেতনার সঙ্গে জড়িত, তা নয়, শিক্ষা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানুষের জীবনেও তাঁর বাণী ও মতামত প্রভাব ফেলে। তাঁর জীবদ্দশাতেই সমাজের বিশিষ্ট ও পণ্ডিতদের মহলের গণ্ডি পেরিয়ে ধর্মীয় চিন্তাধারা ও উপদেশের প্রভাবে গোটা বাংলায় নবজাগরণ ঘটেছিল। তাঁর কথায়, মানবজীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যই হল ঈশ্বর-উপলব্ধি। গোটা জীবন বা জগতকে মায়া ও ত্যাগ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কাম-বাসনা-লোভ-মোহ-লালসা এইসব মানুষজনকে নিস্নস্তরে নামিয়ে রাখতে শুরু করে।
‘যত মত তত পথ’, এই সর্বধর্মের সারকথাটি এত সহজ করে আর কেউ বলতে পারেননি। কোনও ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ না করে, সকল ধর্মকেই সমদৃষ্টিতে দেখার পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। বাঙালি সমাজকে এক নতুন আশার আলো দিয়েছিলেন তিনি। নিজ ধর্মকে সংকীর্ণ গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে আধ্যাত্মবাদ ও মানবতাবাদের সমন্বয় ঘটিয়ে ফেলাই ছিল রামকৃষ্ণের আদর্শ। বিদ্বেষ-হিংসা সরিয়ে সার্বিক লক্ষ্যই ছিল মানবসেবা ও মানবকল্যানের প্রচার।
রামকৃষ্ণ পরমহংস যুগাবতার একজন মহান সাধক ও চিন্তাবিদ ছিলেন। একাধারে তিনি সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। রামকৃষ্ণদেবের একটি বিশেষত্ব ছিল যে তিনি খুব সহজ কথা বলতে পারতেন। তাঁর আরও একটি গুণ ছিল, তিনি খুব সহজ কথায় মানুষকে প্রভাবিত করতে পারতেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ সারাবিশ্বের দরবারে এক উল্লেখযোগ্য নাম। অনেকেই বিশ্বাস করেন, ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার ক্ষমতা রাখতেন গদাধর। তাঁর বেশ কিছু কথা বা বাণী যদি সারাজীবন ধরে মেনে নেওয়া যায়, গ্রহণ করে সেই পথেই হেঁটে যাওয়া যায়, তাহলে আর কখনও সঙ্কট বা নেগেটিভ শক্তির প্রভাব পড়ে না।
-রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর পথ আলাদা হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্ত পথই ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায়। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন যে একজন ভক্তের খারাপ চিন্তা ও খারাপ আচরণ পরিহার করা উচিত। তাহলেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া সম্ভব।
-রামকৃষ্ণ পরমহংস বিশ্বাস করতেন যে মানুষের অহংকার হল মায়া। অহংকারকে দূরে রেখে কাজে মগ্ন থাকা আবশ্যিক। কারণ যতক্ষণ মানুষের মনে অহংবোধ থাকে ততক্ষণ ঈশ্বর তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন না।
-রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতে, ঈশ্বর লাভের জন্য সত্য কথা বলা প্রয়োজন, কারণ সত্যই হল ঈশ্বর। ঈশ্বর লাভের জন্য মানুষকে সর্বদা সত্যের পথে চলা উচিত। মিথ্যেও পরিহার করা জরুরি।
-রামকৃষ্ণ পরমহংস জানিয়েছিলেন, কোনও স্বার্থ ছাড়াই যখন অন্যকে সাহায্য করেন, সেটাই হল মানুষের ধর্ম। তাঁর কথায়, সমুদ্রে একবার ডুব দেওয়ার পরেও যদি একটিও মুক্তো খুঁজে না পান, তাহলে তার অর্থ এই নয় যে সমুদ্রে কোনও মণিমুক্তো-রত্ন নেই। এর মানে হল ভাল ফলাফল পেতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
