আজ মহানবমী। আজই পুজোর শেষ দিন। রাত পোহালেই মা পারি দেবেন আবার কৈলাশে। মন খারাপ তো রয়েছেই। তবে আজকেই জমিয়ে আনন্দ করে নিতে হবে। তাছাড়া মহানবমীর সেরা বিষয় হল ভূরিভোজ এবং ধুনুচি নাচ। দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ধুনুচি নাচ। মহানবমীর সন্ধ্যায় প্রতিটা পুজো মণ্ডপে ধুনুচি নাচের আয়োজন করা হয়। মাটির সরায় নারকেলের ছোবড়া এবং ধুনো জ্বালানো হয়। তারপর সেটা নিয়ে ঢাকের তালে মেতে ওঠে বাঙালি। যদিও সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিনই ধুনুচি নাচের প্রচলন রয়েছে। তবে ধুনুচি নাচের জৌলুস ফুটে ওঠে মহানবমীর সন্ধ্যায়।
আজকাল খুব একটা ধুনুচি নাচ লক্ষ্য করা যায় না মণ্ডপে। তবে আজও বনেদি বাড়ি, রাজবাড়ি এবং বাড়ির পুজোয় ধুনুচি নাচ লক্ষ্য করা হয়। দেবীর সামনে ঢাক ও কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে ধুনুচি নিয়ে জমে ওঠে নাচের আসর। হাতে এবং মুখ নিয়েও অনেকে ধুনুচি নাচ নাচেন। আবার অনেক জায়গায় এই ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতাও হয়। কিন্তু দুর্গাপুজোর সঙ্গে এই ধুনুচি নাচের কী মাহাত্ম্য? এর কি কোনও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক…
নবমীর দিনে মনটা একটু হলেও ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। মা আর কিছুক্ষণের অতিথি। তারপর আবার এক বছরের প্রতীক্ষা। কিন্তু মহানবমীর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনটি হল দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের লড়াইয়ের শেষ দিন। এরপর অর্থাৎ দশমীর দিন দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুর পরাজিত হবে। নবমী হল শুভ-অশুভের দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষ দিন। এই কারণে দুর্গাপুজোয় এত বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় মহানবমীকে।
মহানবমীর দিন মহাআরতিরও প্রচলন রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ধুনুচি নাচের প্রচলনও। এই ধুনুচি নাচ আসলে দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, দেবী দুর্গা নিজে ধুনুচি নাচ নেচে ছিলেন নিজের মধ্যে শক্তির সঞ্চারের জন্য। দেবতারা যখন মা দুর্গাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, সেই সময় দেবী নিজের মধ্যে শক্তি বৃদ্ধি করতে এই ধুনুচি নাচ নেচে ছিলেন। এই কারণে আজও মহানবমীর সন্ধ্যায় ধুনুচি নাচের আয়োজন করা হয়। এবং এই কারণে শক্তির আরাধনা ক্ষেত্রেও মহানবমীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
ধুনুচি নাচের অর্থ নিজেকে দেবীর কাছে ম্পূর্ণভাবে নিবেদন করা। এর মাধ্যমে সমস্ত অশুভ শক্তি দূর হয়ে যায়। মনের মধ্যে আলোর পথ উন্মোচিত হয়। ধুনুচি নাচ বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে চলে। এর পিছনে পৌরাণিক তাৎপর্য যাই থাকুক না কেন, আনন্দে মেতে উঠতে ধুনুচির নাচের জনপ্রিয়তা আজও রয়েছে।