হিন্দু শাস্ত্র (Hinduism) অনুসারে ব্রহ্মা (Lord Brahma), বিষ্ণু (Lord Bishnu) ও মহেশ্বরকে (Lord Shiva) যথাক্রমে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের অধীশ্বর বলে মনে করা হয়। এই তিন জনের মধ্যে শিবের পূজা ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। নানা রূপে বিষ্ণুর পূজাও যথেষ্ট প্রচলিত। কিন্তু ভারতে ব্রহ্মার পূজার চল প্রায় নেই বললেই চলে, ব্রহ্মা মন্দিরও (Brahma Temple) বেশ দুর্লভ। কিন্তু ব্রহ্মা এমন অনাদৃত থেকে গেলেন কেন? এই প্রশ্নটা অনেকেরই মনের মধ্যে জাগে। তাহলে জেনে নিন ব্রহ্মার পুজার কেন প্রচলন নেই।
পুরাণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা সেই সব দেবতাদের প্রতি থাকে বেশি যাঁরা সাধারণত তাঁদের শক্তিমত্ততার জন্য বিখ্যাত। শিব তাঁর প্রলয়নৃত্যের জন্য বিখ্যাত। বিষ্ণু পরিচিত তাঁর সুদর্শন চক্রের জন্য। দুর্গা ও কালীও শক্তি দেবী হিসেবে আরাধ্যা। ব্রহ্মাকে বলা হয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা। যার কারনের আজ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি তারই পুজার প্রচলন নেই। ব্রহ্মা কেন পূজিত হন না, তার কিছু শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও রয়েছে। পুরাণে কথিত হয়েছে, ব্রহ্মা যখন সৃষ্টি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তখনই নিজের কাজের সুবিধার জন্য এক সুন্দরী নারীকে তৈরি করেন তিনি। শতরূপা, গায়ত্রী, সরস্বতী, সাবিত্রী বা ব্রহ্মাণী নামে পরিচিতা সেই নারীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েন ব্রহ্মা। শতরূপা ব্রহ্মার চোখের আড়াল হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁর উপর নজর রাখতে নিজের ঘাড়ের উপর পাঁচদিকে পাঁচটি মাথা তৈরি হয়ে যায় ব্রহ্মার। শতরূপা তখন ব্রহ্মার কামাবেগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে নানা পশুর ছদ্মবেশ ধরে পালাতে থাকেন। ব্রহ্মাও একে একে সেইসব পশুর পুরুষ রূপ ধারণ করে শতরূপার পিছু নেন। বলা হয়, এইভাবেই তৈরি হয় জীবকূল। শতরূপা বাঁচতে একটি গুহার ভিতর আশ্রয় নেন। ব্রহ্মা সেই গুহাতেই মিলিত হন শতরূপার সঙ্গে। শতরূপা ছিলেন ব্রহ্মার কন্যা। কিন্তু তাঁর সঙ্গেই মিলিত হন ব্রহ্মা। এই অবৈধ যৌনাচারের অপরাধে শিব ব্রহ্মার পঞ্চম মাথাটি কেটে দেন, এবং অভিশাপ দেন যে, ধরাধামে কেউ ব্রহ্মার পূজা করবে না।
পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদি পিতা। মনুস্মৃতি গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন মারীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা । তবে এঁরা মনুষ্যাকারবিশিষ্ট ঋষি নন । এঁরা তাকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন। তার এই পুত্রগণ তার শরীর থেকে জাত হননি, হয়েছেন তার মন থেকে। এই কারণে তাদের মানসপুত্র বলা হয়।
আর একটি কাহিনিতে বলা হচ্ছে, বিষ্ণু ও ব্রহ্মার মধ্যে একবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়- কে বেশি শক্তিশালী- তা জানতে। অসত্ পথে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন ব্রহ্মা। শিব এতে ক্ষুব্ধ হন ও ব্রহ্মাকে অভিশাপ দেন যে, তিনি কোনওদিন পৃথিবীতে পূজিত হবেন না। কারণ যাই হোক, ব্রহ্মা সত্যিই পূজা পান না তেমনভাবে। রাজস্থানের পুষ্করে ভারতের প্রাচীনতম ব্রহ্মা মন্দিরটি অবস্থিত। মনে করা হয় প্রায় দু’হাজার বছর আগে এই মন্দির তৈরি। ভারতে এমন বৃহদাকার ব্রহ্মা মন্দির খুব কমই আছে।
সূত্র: ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ
আরও পড়ুন : Saraswati Puja 2022: সরস্বতী পুজোয় হলুদ শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবি মাস্ট! কারণটা কী?