জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে প্রতিটি মাসের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি মাসে কোনও না কোনও দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়। শাস্ত্র মতে, যে মাসে যে দেব-দেবীকেই উত্সর্গ করা হয়, সেই মাসে সেই দেব-দেবীর আরাধনা করলে ওই দেবতার আশীর্বাদ পাওয়া যায় খুব সহজেই। তবে প্রতি মাসেই রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা। হিন্দুধর্মে চাতুর্মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। চাতুর্মাসের দ্বিতীয় মাস ভাদ্রপদ মাস। এটি ভাদর নামেও পরিচিত। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, ৩১ অগস্ট থেকে ভাদ্রপদ মাস শুরু হয়েছে। এই মাসেই শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, হরতালিকা তীজ, গণেশ চতুর্থী, অনন্ত চতুর্দশী, কাজরী তীজের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপবাস ও উত্সবগুলিও পালিত হয়।
ভাদ্রপদ মাস মানেই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি। এই মাসেই উপাসনার জন্য উত্সর্গীকৃত। কথিত আছে যে এ মাসেই ভক্তিভরে গোপালের পুজো করলে শুভ ফল ও সুখ পাওয়া যেতে পারে। জীবনে আসন্ন সকল প্রকার দুঃখ দূর হয় ও ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এমাসে। তবে ভাদ্রপদ মাস নিয়ে শাস্ত্রে কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে। ভাদর মাসে কোন কাজ করবেন আর কী কী করবেন না, তা জানুন…
ভাদ্রপদে কোন কাজ একেবারেই করবেন না
– ভাদ্রপদকে হিন্দু ধর্মে ভগবানের ভক্তির জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়েছে। এই মাস একটি পুণ্যময় মাস। এই পরিস্থিতিতে এই কিছু কাজ করলে মানুষ পাপের অংশীদার হয়।
-জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে ভাদ্রপদ মাসে ভগবানের আরাধনা, জপ ও উপবাস ইত্যাদির বিশেষ গুরুত্ব বলা হয়েছে। এ মাসে ব্রহ্মচর্য উপবাস পালন করা উচিত। ধর্মীয় বিশ্বাস যে এ মাসে হিংসাজাতীয় কোনও কাজই করা উচিত নয়।
– বিশ্বাস করা হয় যে, ভাদ্রপদ মাসে পাপ থেকে মুক্তি ও পুণ্য অর্জনের জন্য কামনা করা হয়। এ মাসে পাপমুক্তির কামনায় বিছানায় ঘুমানো উচিত নয়। এমাসে খারাপ কথা না বলা, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত।
-বলা হয় যে বিয়ে, বাগদান, গৃহ নির্মাণের শুরু ইত্যাদি কাজ এ মাসে ভুল করেও করা উচিত নয়।
– শুধু তাই নয়, ভাদ্রপদ মাসে পূজার নিয়মের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ারও রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম। এই সময়কালে, গুড়, দই দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
ভাদ্রপদ মাসে কী কী করবেন
– জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, যারা পুণ্য কামনা করেন তাদের এই মাসে দিনে দুবার স্নান করা উচিত। সূর্যোদয়ের আগে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে হবে ভক্তের। সন্ধ্যার সময় ঈশ্বরের পুজো করার আগে আবার একবার স্নান করুন।
– যদি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের পূজা করেন, তবে তাঁর পুজো করার সময়, ভোগ হিসাবে শুধুমাত্র গরুর দুধের তৈরি পঞ্চামৃত ও প্রসাদ ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন বিশেষ করে পুজোয় তুলসী পাতা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।
– ভাদো মাসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজোয় শঙ্খ, চন্দন ও ময়ূর ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এছাড়াও, পূজায় মন্ত্র জপ করুন। এর জন্য চন্দন, তুলসী বা বৈজয়ন্তীর মালা ব্যবহার করুন।
– শাস্ত্র মতে, ভাদ্রপদ মাসে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আশীর্বাদ পেতে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ বা শ্রবণ করুন।
– এ মাসে যতটা সম্ভব গরুর সেবা ও গরু পুজো করতে হবে। সম্ভব হলে জলে কয়েক ফোঁটা গোমূত্র মিশিয়ে নিয়মিত পুজো করা উচিত। এই প্রতিকার করলে মানুষের জীবনের যাবতীয় দোষ-ত্রুটি দূর হয়।