মহাদেব ও স্ত্রী পার্বতীর উদ্দেশে একটি বিশেষ ব্রত রাখা হয়, যা দক্ষিণ ভারতে প্রদোষম বলে পরিচিত। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে প্রদোষ ব্রত পালন করা হয় এবং প্রতিমাসের কৃষ্ণপক্ষ অর্থাত মাসে দু`বার করে পালিত হয়। মঙ্গলবার এই প্রদোষ ব্রতকে ভৌম প্রদোষ হিসাবে উদযাপিত হয়। চলতি মাসে ভৌম প্রদোষ আগামী ২২জুন, মঙ্গলবার, অনুষ্ঠিত হবে।
তারিখ এবং সময়
হিন্দু ক্যালেন্ডার মতে, প্রদোষ পুজোর শুভ মহুরত- সন্ধ্যে ৬টা ১৬ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪২ মিনিট
ত্রয়োদশী ২২ জুন সকাল ৮টা ৫২ মিনিট থেকে আরম্ভ হয়ে এ শুরু হয়ে ২৩ জুন শেষ হবে
তাৎপর্য
প্রদোষকালের সময় পুজো করা হলে দেবাদিদেবের আর্শীবাদ প্রাপ্ত হওয়া যায়। এদিন সূর্যাস্তের পরে ত্রয়োদশী তিথি থাকে। অন্যদিকে, প্রদোষ কালের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে শুরু। ত্রয়োদশী তিথি এবং প্রদোষ যখন একসঙ্গে থাকে, তখন এটিকে প্রদোষের আধিবায়ন বলা হয় এবং এটি শিবপূজার জন্য সেরা সময় বলে মনে করা হয়। প্রদোষ ব্রত পালন করলে দ্রুত আধ্যাত্মিক চিন্তাধারায় উন্নত হয়।
আরও পড়ুন: Ganga Dussehra 2021: গঙ্গাভাতরণ কী? পবিত্র গঙ্গা পুজোর শুভারম্ভ, পূজাবিধি ও মাহাত্ম্য জেনে নিন
ব্রত নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে…
হিন্দু মতে,হনুমানভক্ত এক অতি বৃদ্ধ মহিলা তাঁর ছেলেকে নিয়ে একটি গ্রামে থাকতেন। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল এবং তিনি দেবতাদের উত্সর্গ করা ব্রত পালন করতেন। প্রতি মঙ্গলবার ব্রতকথা পড়তেন, যা ভগবান হনুমানের দিবস হিসাবে বিবেচিত হয়। একবার, দেবতা হনুমান তাঁর প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁকে মেঝে পরিষ্কার করতে এবং তাঁর জন্য রান্না করতে বলেন। বৃদ্ধা ঝাঁট দিতে অক্ষম, তাই তিনি বিনীতভাবে অন্য কিছু নির্দেশ করার জন্য অনুরোধ জানান। তাঁর অনুরোধ বিচার করে ঈশ্বর তাঁকে তাঁর ছেলের পিঠে আগুন জ্বালিয়ে এবং তারপরে রান্না করার পরামর্শ দেন। যদিও সে ভয় পেয়েছিল যে তার ছেলে মারা যেতে পারে, তবুও সে তার ছেলের পিঠে খাবার রান্না করাই বেছে নিয়েছিল। খাবার প্রস্তুত হওয়ার পরে হনুমান ওই বৃদ্ধাকে তার পুত্রের জন্য প্রসাদ গ্রহণের জন্য ডাকতে বললেন। অবাক হয়ে সে আগুনের কারণে ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবেছিলেন, কিন্তু দেবতার আর্শীবাদে তাঁক সুস্থ জীবিত দেখতে পেয়ে ঈশ্বরের পায়ে নিজেকে আত্মসমর্পন করে ফেলেন। ঈশ্বরের কৃপায় তাঁর ভাগ্য ফিরে আসে ও সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে শুরু করে।
পুজোর নিয়ম-কানুন
– প্রদোষ ব্রত পালন করার জন্য সূর্য ওঠার আগেই স্নান সেরে পরিস্কার পোশাক পরিহিত করতে হবে।
– দেবতার আসনে যথাক্রমে, শিব, পার্বতী, হনুমানের প্রতিমা রাখুন। ছবি রাখলেও হবে।
– ব্রত পালনের পরই রান্না করে খাবার গ্রহণ করুন।
– পুজোর জায়গায় মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন।
– বেঙ্গল পাতা, বেটাল পাতা, ভাত, ফুল, ফল এবং ধূপ সাজিয়ে নৈবেদ্য সাজান।
– ব্রতের সময় ব্রতকথা হিসেবে হনুমান চল্লিশা পাঠ করুন।
-সারাদিনে ১০ বার ওঁ নমঃ শিবায় মন্ত্র জপ করুন।