বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের (Buddhism) সবচেয়ে বড় ও পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান হল এই বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা (Buddha Purnima)। ১৬ মে, এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয় বলে একে বৈশাখী পূর্ণিমাও বলা হয়। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমাকে বলা হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, ভগবান বুদ্ধ এই পূর্ণিমা দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কঠোর অনুশীলনের পরে এই তারিখে বোধি লাভ করেছিলেন। ভগবান বুদ্ধ হলেন ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার। জ্যোতিষীদের মতে, বুদ্ধ পূর্ণিমায়, ভগবান বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার, ভগবান বরাহের অবতার স্থান, সোরন ছাড়াও লেহরা এবং কাচলা গঙ্গা ঘাটে স্নান করলে পুণ্য লাভ হবে। সোমবার বুদ্ধ পূর্ণিমা। অনেকেই জানেন না যে সোরন, লেহরা, কাচলা গঙ্গা ঘাটে স্নানের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
বিশ্বাস করা হয় এই দিনে গঙ্গায় পবিত্র স্নান করলে মানুষের সব মনস্কামনা পূরণ হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণও ঘটছে, দেশে দেখা না গেলে এর প্রভাব কিন্তু পড়বে না। কথিত আছে যে, ভগবান বুদ্ধের শিক্ষায় মনোযোগ দিলে মানুষের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়।
সোমবার স্নানের পূর্ণিমা, রবিবার ছিল উপবাসের পূর্ণিমা। এই দিনে, ভক্তরা একটি উপবাস পালন করে এবং ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করে থাকেন। পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য এই ব্রত পালন করে থাকেন ভক্তরা।
বুদ্ধ পূর্ণিমায় গঙ্গাস্নান ও দান করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়। তাদের নামে দান করাও খুব ফলদায়ক। সোরন হল ভগবান বরাহের বংশধরের স্থান। এখানে স্নান করে ডুব দিলে পুণ্য লাভ করে, এমনটাই বিশ্বাস বৌদ্ধ ও হিন্দুদের।
বৌদ্ধ ধর্মে বলা হয়েছে, বর্তমান নেপালের লুম্বিনিতে, খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে গৌতম বুদ্ধ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। পাশাপাশি ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই একই দিনে তিনি মহানির্বাণ লাভ করেছিলেন। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমাকে আবার বুদ্ধ জয়ন্তী (Buddha Jayanti 2022) নামেও পরিচিত।
শুভতিথি
বৈশাখ পূর্ণিমা পালিত হবে আগামী ১৬ মে, সোমবার।
পূর্ণিমার তিথির শুরু- ১৫ মে, দুপুর ১২.৪৫ মিনিট পূর্ণিমা তিথির সমাপ্তি- ১৬ মে সোমবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিট।
কাহিনি
বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমা দিবসে মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ নামে খ্যাত। বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, পূর্বজন্মে বোধিসত্ত্ব সকল পারমি পূরণ করে সন্তোষকুমার নামে যখন স্বর্গে অবস্থান করছিলেন, তখন দেবগণ তাঁকে জগতের মুক্তি এবং দেবতা ও মানুষের নির্বাণ পথের সন্ধান দানের জন্য মনুষ্যকুলে জন্ম নিতে অনুরোধ করেন। দেবতাদের অনুরোধে বোধিসত্ত্ব সর্বদিক বিবেচনাপূর্বক এক আষাঢ়ী পূর্ণিমায় স্বপ্নযোগে মাতৃকুক্ষিতে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্মলাভ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষ ছায়ায় উন্মুক্ত আকাশতলে। তাঁর নিকট জাতি, শ্রেণি ও গোত্রের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। তিনি মানুষকে মানুষ এবং প্রাণীকে প্রাণিরূপেই জানতেন এবং সব প্রাণসত্তার মধ্যেই যে কষ্টবোধ আছে তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন। তাই তিনি বলেছিলেন ‘সবেব সত্তা ভবন্তু সুখীতত্তা’ জগতের সব প্রাণী সুখী হোক। এই মর্মচেতনা জাগ্রত করা এবং এই পরম সত্য জানার জন্য তিনি ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন। সত্যের সন্ধানে পরিভ্রমণ করতে করতে এক সময় তিনি গয়ার উরুবেলায় (বুদ্ধগয়া) গিয়ে নিবিষ্টচিত্তে সাধনামগ্ন হন। দীর্ঘ ছয় বছর অবিরাম সাধনায় তিনি লাভ করেন সম্যক সম্বুদ্ধ বা বুদ্ধত্ব। সেদিনও ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি।