বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। ঠিক যেমন বছরে চারবার দেবী দুর্গার পুজো করা হয়। পালন করা হয় নবরাত্রি। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে চৈত্র নবরাত্রি উৎসব পালিত হয়। এই সময়ে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের আরাধনা করা হয়। এই বছর চৈত্র নবরাত্রির উৎসব ২২শে মার্চ বুধবার থেকে শুরু হবে এবং শেষ হবে ৩০ মার্চ। দেবী শৈলপুত্রী, দেবী ব্রহ্মচারিণী, দেবী চন্দ্রঘণ্টা, দেবী কুষ্মাণ্ডা, দেবী কাত্যায়নী, দেবী কালরাত্রি, দেবী মহাগৌরী এবং দেবী সিদ্ধিদাত্রীর পুজো করা হয় ন’দিন ধরে।
চৈত্র নবরাত্রিকে নববর্ষ বা নতুন বছর সূচনা হিসেবে ধরা হয়। পশ্চিমবঙ্গে চৈত্র নবরাত্রিকে বাসন্তী পুজোও বলা হয়। মহারাষ্ট্র এবং কোঙ্কনে চৈত্র নবরাত্রিকে গুড়ি পদওয়া পরব বলা হয়। দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু জায়গায় চৈত্র নবরাত্রি উগাদি নামেও পরিচিত। চৈত্র নবরাত্রি পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হল, গ্রীষ্মের মরশুমে নতুন ফসল কাটা। যদিও যে কোনও হিন্দু উৎসবের পিছনে পৌরাণিক কাহিনি জড়িত থাকে। একই ভাবে, হিন্দু ধর্মে চৈত্র নবরাত্রির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। চৈত্র নবরাত্রিতে নিষ্ঠা ও পূর্ণ ভক্তির সঙ্গে দেবী দুর্গার আরাধনা করতে হয়। এতে সমস্ত মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।
সনাতন ধর্মেও চৈত্র নবরাত্রির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ন’দিন ধরে দেবী দুর্গার নয়টি রূপ পুজো করা হয়। সংসারে অর্থ, সম্পদ ও ভাগ্যের জন্য এই চৈত্র নবরাত্রি পালন করা হয়। তাছাড়া চৈত্র নবরাত্রিতে দেবী দুর্গাকে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চৈত্র নবরাত্রির দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার জামা-কাপড় পরার নিয়ম রয়েছে। এরপর ঠাকুর ঘরে গঙ্গাজল ছড়িয়ে প্রতিমা কিংবা ঘট স্থাপন করতে হয়। পুজোর উপকরণ হিসেবে সুপারি, বাদাম, দই, মধু, নারকেল, ফুল ইত্যাদি রাখতে হয়। ঘটের উপর নারকেল ও আম পাতা রাখতে হয়। সঠিক ভাবে মন্ত্র জপ করতে হয়। যেহেতু নয়দিনে দেবীর নয়টি রূপের পুজো করা হয়। তাই প্রতিদিনের মন্ত্র আলাপ হয়। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট মন্ত্র জপ করতে হয়।
চৈত্র নবরাত্রিতে দেবী দুর্গা নৌকায় চেপে মর্ত্যে আসেন। পুরাণ অনুসারে, দেবীর বাহন নৌকাকে অত্যন্ত শুভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মনে করা হয়, দেবীর আগমনে বসুন্ধরা শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে। চৈত্র নবরাত্রি বা বাসন্তী পুজোয় দেবীর আরাধনা করলে সমস্ত মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। এতে জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে।