হিন্দুধর্মে ও পুরাণে বহু দেব-দেবীর নাম ও গুরুত্ব উল্লেখ রয়েছে। হিন্দুধর্মে শনিগ্রহের অলৌকিক ক্ষমতার কাছে নতিস্বীকার করেন দেবতা থেকে সাধারণ মানুষ। সূর্যদেব ও তাঁর স্ত্রী ছায়াদেবীর পুত্র হওয়ায় গ্রহরাজকে ছায়াপুত্রও বলা হয়। অন্যদিকে মৃত্যু ও ন্যায় বিচারের দেবতা যমদেব ও যমুনাদেবীর অনুজ ভ্রাতা হলেন শনি। হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে নবগ্রহ রয়েছে, তার মধ্যে হল অন্যতম এই শনিগ্রহ। পৌরাণিক কাহিনি ও পুরাণ অনুযায়ী, শনিকে কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, শনিদেবকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গ্রহ বলে পরিচিত। যে কোনও ভুল বা অবিচারের সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি প্রদান করেন। কিন্তু কৃষ্ণভক্তদের কোনও ভুলেই শাস্তি দান করেন না শনিদেব। এই কথা অনেকেই মেনে চলেন, বিশ্বাসও করেন। কিন্তু এই কাহিনি কতটা সত্যি?
শনিদেব শুধু অপরাধ বা অন্যায়কে বরদাস্ত করেন না তাই নয়, ভালো কাজের জন্যও আশীর্বাদ বর্ষণ করে থাকেন। দয়ালু,পরপোকারী ও ভালো কাজের মানুষকে অগাধ আশীর্বাদ বর্ষণ করে থাকেন। এমন মানুষদের উপর কখনও সুখের ছায়া কেড়ে নেননি। শনিদেবকে কলিযুগ জগতের বিচারক বলা হয়। কিন্তু হিন্দুধর্মে এমন তিনটি দেবতা রয়েছেন, যাদের পুজো করলে শনিদেব সেই ভক্তদের কখনও কষ্ট দেন না। শনিদেবের কাছ থেকে শুভ ফল পান। শনিদেব আসলে মহাদেব,হনুমান ও শ্রী কৃষ্ণের ভক্ত। কথিত আছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত ও তাঁর উপাসনা করেন যাঁরা, শনিদেব তাদের কখনও কষ্ট দেন না। এর কারণটা জানা আছে?
শনিদেব শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত, সত্যিটা কী?
কথিত আছে, শনিদেবও শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত। তিনি সর্বদা দেবতার চিন্তায় মগ্ন থাকে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় সকল দেব-দেবী নন্দগাঁওয়ে এসেছিলেন। শনিদেবও এখানে পৌঁছেছিলেন। কৃষ্ণের মাতা যশোদা শনিদেবকে ঘরে ঢুকতে দেননি। এর কারণ ছিল শনির কুদৃষ্টি যেন তার সন্তানের ওপর না পড়ে ও তার কোনও ক্ষতি না হয়। এতে শনিদেব খুব দুঃখিত হয়ে পড়েন ও তিনি নিকটবর্তী বনে ধ্যান ও তপস্যা করতে যান। কিছু সময় পর যখন শ্রী কৃষ্ণ তাঁর ঐশ্বরিক বাঁশি বাজালেন, তখন নন্দগাঁওয়ের মহিলারা বাঁশির সুরেলা ধ্বনিতে আকৃষ্ট হন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কোকিলা (কোকিল) রূপে নিজেকে রূপান্তরিত করে শনিদেবের কাছে আবির্ভূত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শনিদেবের সামনে হাজির হয়ে তাঁকে তপস্যার কারণ জিজ্ঞেস করেন। শনিদেব তখন বলেন, আমি তো শুধু ন্যায়ের দায়িত্ব পালন করছি, তাহলে আমাকে নিষ্ঠুর ভাববে কেন? এর সঙ্গে শনিদেব ভগবান রূপে শিশু কৃষ্ণকে দেখতে না পাওয়ার দুঃখের কথাও বলেছিলেন। এরপরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শনিকে বর দিয়েছিলেন যে যাঁরা তাঁর উপাসনা করবেন তাঁরা তাদের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন ও শনিদেবকে নন্দনবনে থাকতে বলেছিলেন। সেই থেকে মথুরার এই স্থানটি কোকিলাবন শনিধাম নামে পরিচিত।