গঙ্গা (Ganga) কলিযুগে পরম তীর্থ । বিশেষ করে সব শাস্ত্রই এই কথা বলে। মহাভারতে ঋষি পুলস্ত্য, ভীস্মের নিকট কীর্তন করেছেন– ‘যেখানে গঙ্গা আছেন সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের সেই দেশই তপোবন ও সিদ্ধ তীর্থ’ আর্য্যদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও ‘গঙ্গা’ নাম উল্লেখ আছে। ঙ্গা বৈদিকী নদী। ঋক্ বেদের একটি শ্লোকে যমুনা, সরস্বতী, শতুদ্রী , পরুষ্ণী , অসিক্লী , মরুৎবৃধা , বিতস্তা , সুষোমা ও আর্জীকিয়া নদীর সাথে গঙ্গার নাম পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমী তিথিকে দশহরা (Ganga Dussehra )বলে। প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা পুণ্য তিথিগুলির মধ্যে দশহরার উল্লেখ করেছেন। জীমূতবাহন, রায়মুকুট, বৃহস্পতি ও রঘুনন্দন প্রমুখ পণ্ডিতবর্গ জ্যৈষ্ঠ্য শুক্লা দশমী তিথিতে দশহরাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। এবার হস্ত নক্ষত্র ৯ জুন ভোর ৪টে ৩১ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে । চলবে আগামী ১০ জুন ভোর ৪টে ২৬ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
পুরাণ মতে স্বর্গ বাসিনী এই গঙ্গা দেবীকে মর্তে এনেছিলেন সগর রাজার বংশজ রাজা ভগীরথ । তিনি আবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কূলের পূর্বপুরুষ । পৌরাণিক আখ্যান মতে সগর রাজার ষাটি হাজার পুত্র কপিল শাপে ভস্ম হলে, তাহাদিগের প্রেতাত্মার মুক্তির জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গা কে আনবার প্রয়োজন হয় । তপস্যা করতে করতে একে একে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান, দিলীপ রাজা দেহ ত্যাগ করেন। অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সফল হন। গঙ্গাকে মর্তে আনতে পারেন । বৈদিক যুগের কোনও এক সময়ে দশহরা তিথি থেকেই বৎসর গণনা আরম্ভ হতো। দশহরা সেদিন নববর্ষের মর্যাদা পেত। দশহরার প্রধান ধর্মীয় কর্ম গঙ্গায় স্নান। কারণ, এই তিথিতেই গঙ্গা মর্ত্যলোকে নেমে এসেছিলেন। এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে গঙ্গাকে দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজো করার কথা বলা হয়েছে। এই দিনে অনেক অঞ্চলে মা মনসা কেও পুজো করা হয়ে থাকে।
কিংবদন্তি অনুসারে, গঙ্গা যেদিন পৃথিবীতে এসেছিলেন, সেই দিন ১০টি শুভ যোগ বিকশিত হয়েছিল। সেই কারণেই বলা হয়েছে, এই দিন ভক্তদের ১০টি পাপ ১০ উপায়ে মুছে ফেলা যায়। তাই এই দিনটিকে দশেরা নামে পরিচিত।
* ওম নমঃ শিবায় নারায়ণায় দোষারায় গঙ্গায় নমঃ – স্নান করার সময় এই মন্ত্রটি পাঠ করুন।
* আরেকটি বিকল্প মন্ত্র ‘ওম গঙ্গায় নমঃ’ পাঠ করা।
এদিন গঙ্গায় স্নান করাকে পুণ্যময় বলে মনে করা হয়। আমাদের দুর্দশা দূর করার জন্য আমাদের এখন কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা দয়া করে আমাদের জানান –
– এ দিনে গঙ্গা স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। স্নানের পর কি গঙ্গার আরতি করা উচিত।
– এই দিনে, গঙ্গা নদীতে স্নান করার পরে, আপনি মন্দিরে যান এবং শিবলিঙ্গে অভিষেক করুন, তারপর অভিষেক জলের কিছুটা সংরক্ষণ করে আপনার বাড়িতে ছিটিয়ে দিন। এই কর্মের ফলে নেতিবাচক শক্তি ঘর থেকে বহিষ্কৃত হযবে। শুরু হবে অর্থ বর্ষণও।
– এই দিনে, যদি আপনার কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায় সমস্যা হয় তবে একটি মাটির পাত্র নিন। তাতে কলসি অর্ধেক জল দিয়ে পূর্ণ করে কয়েক ফোঁটা গঙ্গা জল এবং চিনি যোগ করুন। তারপর সেটি গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে দিন। বেকারত্বের সমস্যা কাটল বলে।
– যদি ঋণ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে প্রথমে একটি কালো সুতো নিন। সেটি একটি নারকেল দিয়ে মুড়িয়ে শিবলিঙ্গের সামনে রাখুন। সন্ধ্যায় নারকেল থেকে একটি কালো সুতো নিয়ে জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। এই কৌশলটিকরার সময়, আপনার পিঠ দেওয়ালে রাখুন। কথিত আছে যে, এটি করলে যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
– আপনার অসুস্থতা থাকলে এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে ‘বিশ নাশিন্যায় জীবনায়য় নমোস্তু তে, তপ ত্রয়া সংহন্যায় প্রাণেশয় তে নমো নমঃ’ এই মন্ত্রটি ১১ বার বলুন। এতে করে রোগমুক্ত জীবন শুরু হতে পারে।
– আর্থিক অনটন হলে এই দিনে গঙ্গা স্নান করে একটি গাছ লাগান। এতে আপনি আর্থিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বাড়ি চত্বরে একটি গাছ পুঁতলে দেবী লক্ষ্মীকে তুষ্ট করে বলে মনে করা হয়।