হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের দশমী তিথিটি হিন্দুরা “গঙ্গাবতরণ” বা গঙ্গার মর্ত্যে অবতরণের স্মরণে বিশেষভাবে উদ্যাপন করে। এই দিনটিকে “দশহরা” (Ganga Dussehra) বলে। হিন্দুমতে, এই দিনটি গঙ্গাস্নানের জন্য বিশেষভাবে প্রশস্ত। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই দিন গঙ্গাস্নান করলে দশবিধ বা দশ জন্মের পাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রাজা ভগীরথের তপস্যা খুশি হয়ে দেবী গঙ্গা এই দিন ভগীরথেক পূর্বপূরুষদের অভিশপ্ত আত্মাকে শুদ্ধ করতে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন। গঙ্গা যেহেতু স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে এসেছিলেন, তাই তাকে মর্ত্য থেকে স্বর্গে উত্তরণের একটি মাধ্যমও মনে করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল – এই তিন লোকে প্রবাহিত বলে গঙ্গার অপর নাম ত্রিলোকপথগামিনী। আবার, জীবিত ও মৃত সব জীবেরই যাত্রাপথে অবস্থিত বলে, তার অন্য নাম তীর্থ।
বহু মানুষ এইদিন পুণ্য লাভের আশায় গঙ্গা স্নান করেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এইদিন গঙ্গা স্নান করলে, প্রায় ১০ প্রকার পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জালিয়াতি, লোভ, হিংসা, মোহ, কাম ,ক্রোধ প্রভৃতি থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
• এই তিথিতে দশবিধ পাপ হরণ করেন। পরদ্রব্য হরণ, অযথা হিংসা অর্থাৎ বৃথা প্রাণী হত্যা ও পরদার গমন অর্থাৎ অবৈধ প্রণয় এই তিনটি দেহগত পাপ।
• অহংকারী বাক্য, মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা এবং অসংবদ্ধ প্রলাপ বা বাজে বকা— এই চারটি বাক্যগত পাপ।
• মনে মনে পরের দ্রব্যের কামনা, পরের অনিষ্ট চিন্তা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি— এই তিনটি মানসিক পাপ।
• স্কন্ধপুরাণ অনুযায়ী, এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে গঙ্গাকে দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজো করার কথা বলা হয়েছে।
• এছাড়াও এই দিন দান-ধ্যান করার জন্য অত্যন্ত শুভ একটি দিন । এই বিশেষ তিথিতে অসহায় ব্যক্তিদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করুন , পুণ্য লাভ হবে।
• স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী এই দিন গঙ্গা স্নান করে সুফল পেতে দশটি ফল, দশটি ফুল এবং দশটি প্রদীপ দিয়ে দেবীর আরাধনা করা উচিত। পৌরাণিক মত অনুযায়ী, এই তিথিতে দেবী গঙ্গা স্বর্গ থেকে মর্তে এসেছিলেন। যার কারণে রুক্ষ পৃথিবী শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে। গঙ্গার প্রবাহ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য মহাদেব গঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন নিজের জটায়।
• এই দিন যদি গঙ্গায় স্নান করা সম্ভব না হয় তাহলে দেবী গঙ্গার নাম করে বাড়ির নিকটস্থ কোন জলাশয়ে স্নান করতে পারেন।