কথায় বলে যেখানে রাধা থাকেন সেখানেই কৃষ্ণও থাকেন। যুগ ধরে ধরে শ্রেষ্ঠ প্রেমিক-প্রেমিকার উদাহরণ দিতে গিয়ে আমরা বলি যেন রাধা-কৃষ্ণ। এমনকি ঘরে ঘরে তাঁরা পূজিতও হন যুগলে। যদিও কোথাও কোথাও কৃষ্ণ একক ভাবেও পূজিত হন। তবে রাধার অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে প্রেমিক কৃষ্ণের নাম। যখনই উচ্চারিত হয় রাধার নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় কৃষ্ণের নামও। তবে আপনি কি জানেন, এহেন রাধাও কিন্তু একক ভাবে পূজিত হন এই ধরাধামে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার রাতে ধন প্রাপ্তির আশায় সেই মধ্যযুগ থেকেই দেবী মহালক্ষ্মী পূজিত হয়ে আসছেন বণিকদের দ্বারা। সম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী তিনি। আবার ঠিক তেমনই কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে বহু জায়গায় একক ভাবে পূজিত হন রাধাও। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় প্রায় ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে নবদ্বীপের বৈষ্ণব মন্দিরে যে পালার ঠাকরুন পূজিত হন তিনিও আসলে শ্রীমতী রাধারানি। শোনা যায়, শ্রী চৈতন্য দেবের পদাঙ্ক অনুসরণকারী নিত্যানন্দ আচার্যের সময় থেকেই এই প্রথার শুরু। আজও নবদ্বীপের মদনমোহন মন্দির ও বলদেব মন্দিরে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন রাতে লক্ষ্মীরূপে পূজিত হন শ্রীমতী রাধারানি।
শোনা যায়, অবিভিক্ত বাংলার বুতুনী গ্রামে প্রথম রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ স্থাপন করে পুজো শুরু করেন হরিগোবিন্দ প্রভু। কিন্তু সেই কৃষ্ণমূর্তি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। অতঃপর সেই মূর্তি বিসর্জন দিতে হয়। এরপর রাধারানির স্বপ্নে এসে আদেশ দেন এককভাবে তাঁর পুজো করার। সেই থেকেই এই প্রথা। শরিকরা পালা করে করে দেবীর পুজো করতেন বলে নাম হয়ে যায় পালার ঠাকরুন। পরে তাঁরা নবদ্বীপে চলে এলে সেই সঙ্গে এই প্রথাও চলে আসে পশ্চিমবঙ্গে। দেশভাগের সময় রাজশাহী, খুলনা, করিমপুর, যশোর থেকে অসংখ্য বৈষ্ণব পরিবার এই দেশে চলে আসে। নবদ্বীপ, রানাঘাট সহ আশেপাশের অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলেন তাঁরা। তাঁদের হাত ধরেই ছড়িয়ে পরে এই প্রথা। লক্ষ্মীপুজোর রয়েছে আরও নানা রীতিনীতি। কোথাও আঁকা হয় লক্ষ্মীর পা, রাখা হয় ধানের শিস। কোথাও পুজো করা হয় কলাগাছ, আবার কোথাও চল সরা পুজোর।
রাধারানিকে লক্ষ্মী হিসাবে পুজো করার চল রয়েছে খাস কলকাতাতেও। শোভাবাজার রাজবাড়ির কূলদেবতা গোপীনাথ। একই সঙ্গে প্রতিদিন সকাল বিকেল পূজিত হন রাধা-কৃষ্ণ। তবে লক্ষ্মী পুজোর দিনটি আলাদা। এই দিন একক ভাবে মহালক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয় রাধারানিকে। ১০৮ পদ্ম নিবেদন করা হয় দেবীর পুজোর। আর পাশেই বসে সেই কাজে তদারকি করেন গোপীনাথ বা কৃষ্ণ।