Swami Vivekananda: যুবক নরেন কী ভাবে হয়ে উঠলেন স্বামী বিবেকানন্দ?

Jan 12, 2025 | 10:19 AM

Swami Vivekananda: ঠাকুর বুঝলেন তিনি ভুল লোককে বেছে নেননি। তবু পরীক্ষা করতে মিছিমিছি বকে আবার মায়ের কাছে পাঠাল তাঁকে। কিন্তু এবার ফিরে এসেই সেই একই কথা, মায়ের কাছে গিয়ে কিছুতেই কিছু চাইতে পারেন না নরেন।

Swami Vivekananda: যুবক নরেন কী ভাবে হয়ে উঠলেন স্বামী বিবেকানন্দ?

Follow Us

নরেন্দ্র নাথ দত্ত, পাড়ার বন্ধু-বান্ধব আর মায়ের কাছে আদরের বিলু। ছোটোবেলা থেকেই বড় ডাকাবুকো স্বভাবের, সঙ্গে সব বিষয় নিয়ে অকাট্য যুক্তি তাঁর সর্ব সময়ের সাথী। ছোট বেলা থেকেই বড় দয়ার শরীর তাঁর। অন্যের কষ্ট দেখলে, দুর্বলের প্রতি সবলের অন্যায় দেখলে মেনে নিতে পারেন না কোনও দিনই। সেই ছোট্ট বিলুই যে একদিন বড় হয়ে যুগ পুরুষ হয়ে উঠবে তা সকলের জানা। কিন্তু নরেন যে যুগপুরুষ হয়ে উঠবে তা তো আর সে প্রথম দিন থেকে জানত না! তাহলে নরেন কী হতে চেয়েছিল? কী ভাবে সে হয়ে উঠল স্বামী বিবেকানন্দ?

আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতোই বড় হয়ে উঠেছিল নরেন। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া, বদমাইশি করা, মায়ের কাছে বকা খাওয়া, শাস্তি দিতে ঘরে আটকে রাখা এই সব কিন্তু হয়েছে বিবেকানন্দের সঙ্গেও। একটা সময় বেশ ভালই অবস্থা ছিল তাঁদের। গরীব দুঃখীদের দান-ধ্যান করা, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ না করার শিক্ষা ছোটবেলাতে বাড়িতেই পেয়ে গিয়েছিলেন নরেন। কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। বাবার মৃত্যুর পরে হঠাৎ খুব খারাপ পরিণতি হয় দত্ত পরিবারের। কোনও বেলা খাবার জোটে তো কখনও আধ পেটা খেয়ে থাকতে হয়। মায়ের গায়ে সেই এক কাপড়। ভাইবোনেদের দুঃখ, যন্ত্রণা, যা দেখে নিজেকে ঠক রাখতে পারেননি বিলু। অন্য পাঁচটা মধ্যবিত্ত ছেলের মতোই প্রতিদিন সকাল থেকে বেরিয়ে পড়ত চাকরির খোঁজে। কিন্তু চাকরি বললেই তো আর পাওয়া যায় না। ধীরে ধীরে বাড়ির লোকেদের অর্থাভাবে দেখে হতাশা গ্রাস করতে শুরু করল তাঁকে।

এদিকে ততদিনে, এক সভায় গান করতে গিয়ে দক্ষিণেশ্বরের রামকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে আলাপ হয়েছে তাঁর। নরেনের গলায় শ্যামা সঙ্গীত শুনে মুগ্ধ ঠাকুর। কয়েক দিন অন্তর অন্তর তাঁকে ডেকে পাঠান দক্ষিণেশ্বর বা অন্য কোথাও। আসলে নিজের প্রিয় শিষ্যকে না দেখলে মন ভাল থাকে না ঠাকুরেরও। তাঁর উপর মায়ের গোপন আদেশ, নরেনকে গড়ে তুলতে হবে ঠাকুরকেই। ঠাকুরকে সকলেই খুব মান্যিগণ্যি করে, নরেনের মনেও এক বিশেষ জায়গা ছিল তাঁর। কিন্তু দারিদ্র্যের যন্ত্রণায় একদিন ঠাকুরের কাছেই ভেঙে পড়েন নরেন। কেন তাঁর এত কষ্ট? ঠাকুরের মা তো সবার যন্ত্রণা মুকুব করে দেন, তাহলে নরেনের কেন এত কষ্ট? সোজা এসে ঠাকুরকেই চেপে ধরলেন নরেন! সেই মূহুর্তে ঘটীক অদ্ভুত ঘটনা।

নরেনের মুখে টাকা-পয়সা, বৈষয়িক সংসারের কথা শুনে একটু কষ্ট পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঠাকুর বোধহয় জানতেন, এইবার সময় এসেছে নরেনকে তাঁর নিজের সঙ্গে পরিচয় করানোর।

বিচলিত নরেনকে ঠাকুর এসে বললেন, “ওরে মা কখনও কাউকে খালি হাতে ফেরান না। যা তুই শুদ্ধ মনে গিয়ে মা কে নিজের মনের কথা, কষ্টের কথা বল, দেখবি মাও তোর কথা ঠিক কথা শুনবে।”

নরেনকে মায়ের দরবারে পাঠালেন বটে তবে মনে মনে প্রমাদ গুনতে লাগলেন তিনিও। নরেন যেন বিপথে না যায়, সেই প্রার্থনা করতে লাগলেন নিজেও। কিছুক্ষণ পরেই মায়ের মন্দির থেকে ঠাকুরের কাছে ফিরে এলেন নরেন।

ঠাকুর বললেন, “কী রে নিজের কষ্টের কথা বললি?”

নরেন বললেন, “না কি আশ্চর্য! মায়ের সামনে গিয়ে আমি কিছুতেই কিছু চাইতে পারলাম না। শুধু বললাম মা তুমি আমায় বিদ্যে দাও, বুদ্ধি দাও।”

ঠাকুর বুঝলেন তিনি ভুল লোককে বেছে নেননি। তবু পরীক্ষা করতে মিছিমিছি বকে আবার মায়ের কাছে পাঠাল তাঁকে। কিন্তু এবার ফিরে এসেই সেই একই কথা, মায়ের কাছে গিয়ে কিছুতেই কিছু চাইতে পারেন না নরেন।

তখন নরেনকে তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ। তাঁকে যে সংসারে আটকে থাকলে চলবে না। নরেনকে হয়ে উঠতে হবে বটবৃক্ষের মতো। বাকিরা এসে তাঁর তলায় জিরিয়ে নিতে পারে দুদণ্ড। যে বট বৃক্ষ সবরকম ঝড় ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে সকলকে। ‘নরেন লোক শিক্ষা দেবে’ এটাই ছিল ঠাকুরের শেষ কথা। সেই কথা মেনেই নরেন হয়ে উঠেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ!

Next Article