রবিবার শেষ হয়েছে অম্বুবাচী (Ambubachi Mela)। ৪ দিন পর অম্বুবাসী কাটতেই খুলে গিয়েছে গুয়াহাটির বিখ্যাত কামাখ্য়া মন্দিরের (Kamakhya Temple) দরজা। তারপরই কাতারে কাতারে ভক্তের ঢল নেমেছে এই মন্দিরে। দেবী কামাখ্যার (Godess Kamakhya) আরাধনায় শত শত ভ্ক্তের আগমনে রীতিমত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে,। করোনার কারণে টানা ২ বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল এই মন্দিরের দরজা। ফলে ২ বছর পর মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য রেকর্ড হারে ভক্তের সমাগম হবে, তা আশঙ্কা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, মন্দির চত্বরে তন্ত্র সাধনার জন্য ভিড় করেছেন অগণিত সাধুসন্তরাও। বার্ষিক অম্বুবাচী মেলার জন্য মন্দিরটি ২২জুন থেকে 26২৬ জুন পর্যন্ত, তিন দিনের জন্য বন্ধ ছিল। এই তিন দিনের এই উত্সবের পর অসমীয়া আহার মাসে পড়ে।
অসমের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত হিন্দু দেবী কামাখ্যার একটি মন্দিরটি ৫১ পীঠের অন্যতম। ৫১টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটি এবং ৪টি আদি শক্তি পীঠগুলোর মধ্যে একটি হল এই কামাখ্যা মন্দির। ভারতের মধ্যে যত প্রাচীন শক্তিপীঠ আছে সেগুলি অপার রহস্যের আধার বলেই বিশ্বাস করেন ভক্তরা। যোনিপীঠ কামাখ্যাকে ঘিরে সাধুসন্ত থেকে সাধারণ মানুষ সবাই যেরকম কৌতূহলী। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সতীর যোনিভাগ এখানে পড়েছিল। তাই এই পীঠকে যোনিপীঠও বলে থাকে। এখানে অধিষ্ঠিতে দেবী কামাখ্যা ও ভৈরব হলেন উমানন্দ। সাধারণত, দেবী কামাখ্যাকে উর্বরতার দেবী বা “রক্তক্ষরণকারী দেবী” বলা হয়।
এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। এই মন্দিরগুলোতে দশমহাবিদ্যাসহ মহাকালী, তারা, ষোড়শী বা ললিতাম্বা ত্রিপুরসুন্দরী, ভুবনেশ্বরী বা জগদ্ধাত্রী, কামাখ্যা, শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী বা তপস্যাচারিণী, মঙ্গলচন্ডী, কুষ্মাণ্ডা, মহাগৌরী, চামুণ্ডা, কৌষিকী, দাক্ষায়ণী-সতী, চন্দ্রঘন্টা, স্কন্দমাতা, কালরাত্রি, কাত্যায়ণী, সিদ্ধিদাত্রী, শাকম্ভরী, হৈমবতী, শীতলা, সংকটনাশিনী, বনচণ্ডী, দেবী দুর্গা, মহাভৈরবী, ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা, বগলামুখী, মাতঙ্গী ও দেবী কমলা – এই ত্রিশ দেবীর মন্দিরও রয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরাসুন্দরী, মাতঙ্গী ও কমলা প্রধান মন্দিরে পূজিত হন। অন্যান্য দেবীদের জন্য পৃথক মন্দির আছে। হিন্দুদের, বিশেষত তন্ত্রসাধকদের কাছে এই মন্দির অন্যতম প্রাচীন এবং একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। তন্ত্রসাধনার কেন্দ্র হওয়ায় বার্ষিক অম্বুবাচী মেলা অনুষ্ঠানে এখানে প্রচুর মানুষ আসেন। এছাড়া বার্ষিক মনসা পূজাও মহাসমারোহে আয়োজিত হয়, দুর্গাপূজা কামাক্ষ্যা মন্দিরের একটি অন্যতম প্রধান উৎসব। যোগিনী তন্ত্র অনুসারে, এই যোগিনী পীঠের ধর্মের উৎস কিরাতদের ধর্ম। বাণীকান্ত কাকতির মতে, গারো উপজাতির মানুষেরা কামাখ্যায় শূকর বলি দিত। এই প্রথা নরনারায়ণ-কর্তৃক নিযুক্ত পুরোহিতদের মধ্যেও দেখা যেত। দেবী ভাগবত, দেবী পুরাণ, তন্ত্র চূড়ামণি, কালিকা পুরাণ ও যোগিনী তন্ত্রে উল্লেখিত ভারতের শক্তি সাধনার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র কামাখ্যায় মহাশক্তি মহাকালীর পুজোও হয় খুব ধুমধাম করে।
আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয় পাদ অতীত হলে চতুর্থ পাদে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদের মধ্যে ধরিত্রীদেবী ঋতুমতী হন । মহামায়া কামাখ্যাও ঋতুমতী হন। এই সময় তিনদিন দেবী মন্দির বন্ধ থাকে। তিন দিন গত হলে দেবী মন্দির খোলা হয় এবং দেবীর স্নান ও পূজার্চনা শেষে ভক্তদের দেবী দর্শন করতে দেওয়া হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করেন, তার পরবর্তী সেই বারের সেই কালে অম্বুবাচী হয়। অর্থাৎ, পৃথিবী এই সময়ে ঋতুমতী হন। প্রসঙ্গত, অম্বুবাচী চলাকালীন মন্ত্রোচ্চারণ ছাড়া কেবলমাত্র ধূপ-প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করা, মন্দিরে প্রবেশ ও দর্শন বন্ধ রাখা, বিগ্রহ স্পর্শ না করা, কিংবা গৃহ দেবতার নিত্যসেবা বাদ দেওয়া, বা মন্দির ও গৃহে কোনও দেবী মূর্তি বা পট থাকলে সেগুলি লাল কাপড়ে ঢেকে রাখা— এই সব আরোপিত নিয়মের কোনও প্রমাণ শাস্ত্রে বা তন্ত্রে উপলব্ধ নয়।