দুর্গাপুজো শেষ হয়েও হইল না শেষ। কারণ বাঙালি মতে, দুর্গাপুজোর মধ্য দিয়েই শুরু হয় উত্সবের আমেজ। দুর্গাপুজোর পর থেকেই শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো, রাস পূর্ণিমা, কার্তিক পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ও আরও অন্যান্য পুজো। তাই বিজয়াদশমীতে মুখ ভার করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ভারতীয় সংস্কৃতিতে দশেরা উত্সব পালন করা হয়, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধুমধাম করে পালিত হয়। দশমীর পর থেকেই শুরু হয় দশেরা উত্সব। কোথাও দশদিন, কোথাও পাঁচদিন ধরে পালন করা হয় এই বর্ণাঢ্য উত্সব। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলে আনন্দ ও ভালবাসার সঙ্গে দশেরা পালন করা হয়ে থাকে। সাধারণত রামায়ণের কাহিনি অবলম্বনে উত্সব পালন করা হয়ে থাকে। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্রের মতো দক্ষিণ ভারতেও আদ্যাশক্তি তথা শক্তির দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে।
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের পাহাড় ঘেরা কুর্গে ১০০ বছরের পুরনো দশেরা উৎসব পালন হয়ে থাকে। এই উত্সব “মাদিকেরি দশরা” নামেও পরিচিত। মাদিকেরি দশরা ৪ টি কারাগা ও ১০ টি মন্তপ দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। সেখানে দেবতাদের দ্বারা অসুরদের বধ করার চিত্র অঙ্কন করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, অসুরের মতো ভ.ঙ্কর রূপে সেজে অশুভ শক্তিকে দূর করার নানা কৌশল প্রদর্শন করতে থাকেন ভক্তরা। লোকশ্রুতি, মাদিকেরির মানুষ বহু বছর আগে এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। সেই সময় মাদিকেরির রাজা “মারিয়াম্মা” উৎসব শুরু করেন। প্রথা অনুসারে, মহালয়া অমাবস্যার পরদিন থেকে এই উৎসব শুরু হয়।
মাদিকেরি শহরে ৪টি মারিয়াম্মা মন্দির রয়েছে। ডান্ডিনা মারিয়াম্মা, কাঞ্চি কামাক্ষম্মা, কুন্দুরুমোত্তে শ্রীচৈতি মারিয়াম্মা ও কোটে মারিয়াম্মা। এই মারিয়াম্মা মন্দিরগুলি থেকে কারাগা বা ফুলের সাজে একটি প্রতীকী ঘট বের করা হয়। এই চারটি কারাগা দেবতাদের শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে। কারাগা আসলে চাল ও নয় প্রকার শস্য ও পবিত্র জলে ভরা একটি পাত্র বা ঘট। সেই জলপূর্ণ ঘট একটি নৌকার ওপর রাখা হয়। গোটা পাত্র ও নৌকাগুলিকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এই কারাগাগুলি দশেরার পাঁচদিন ধরে মাদিকেরি শহরের মধ্যে ও আশেপাশে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এই দশেরার প্রতিটি আচার পাণ্ডবদের স্ত্রী দেবী দ্রৌপদীকে উৎসর্গ করা হয়। রীতি মেনে, মাদিকেরি দশেরাকে স্বাগত জানানোর জন্য নবরাত্রির নবম দিনে সারারাত ধরে বিভিন্ন ধার্মিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে।