দীপাবলির আগেই দেশ জুড়ে পালিত হন ধনতেরাস। যেহেতু কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে উদযাপিত হয় ধনতেরাস। একে ধনত্রয়োদশী বা ধন্বন্তরী জয়ন্তীও বলা হয়ে থাকে। ভেঙে বললে যা দাঁড়ায়, ‘ধন’ শব্দের অর্থ সম্পত্তি আর ত্রয়োদশী অর্থাৎ ১৩-তম দিন। হিসাব মতো কার্তিক মাসে কৃষ্ণপক্ষের ১৩-তম দিনে পালিত হয় ধনতেরাস। সবাই মনে করে, এই বিশেষ তিথিতে জিনিস কেনা শুভ। এতে সারা বছর গৃহে ধনের সমৃদ্ধ বজায় থাকে।
কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে যদি আপনি দেবী লক্ষ্মী, ধন্বন্তরী ও ধন কুবেরের পুজো করেন, তাহলে কোনওদিনই খালি হবে না আপনার গৃহে অর্থের ভাণ্ডার। ধনতেরাস হল ধন ও সমৃদ্ধির কারক। এই বছর আগামী ২ নভেম্বর মঙ্গলবার ধনতেরাস।
দীপাবলির দু’দিন আগে ধনতেরাস পালন করা হয়। যদিও এই উৎসব মূলত অবাঙালিদের উৎসব হিসাবে পরিচিত। আর পাঁচটা অবাঙালি উৎসবের সঙ্গে ধনতেরাসও বাঙালির অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। এখন বাঙালিরাও ধনতেরাস পালন করেন জাঁকজমকভাবে।কথিত আছে ধনতেরাসে ভক্তের বাড়ি যান মা লক্ষ্মী। এদিন ভক্তদের ইচ্ছা পূরণের দিন। ব্যবসায়ী মহলে এই দিন ধুমধাম করে পালিত হয়। মূল্যবান ধাতু কিনে এই দিন ধন দেবতা কুবেররেও পুজো করেন অনেকে।
হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে, সমুদ্র মন্থনের সময় জল থেকে উঠে আসেন ধন্বন্তরী। যাঁকে ভারতীয় শাস্ত্রে আয়ুর্বেদের দেবতা হিসাবে পুজো করা হয়। কথিত আছে জল থেকে উঠে আসার সময় তাঁর এক হাতে ছিল অমৃতের কলস ও অন্য হাতে ছিল আয়ুর্বেদের বই। এই দিনটিকে ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী হিসাবে পালন করে আসলে অয়ুর্বেদের দেবতা ধন্বন্তরীকে পুজো করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে এই দিনটিকে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস হিসাবেও পালন করে আসছে আয়ুষ মন্ত্রক।
অন্যদিকে প্রচলিত রয়েছে আরেকটি মত। ধনতেরাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রাজা হিমুর ছেলে। তাঁর উপর অভিশাপ ছিল, বিয়ের ৪ দিনের মধ্যেই সাপড়ে কামড়ে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে জানতেন যুবরাজের স্ত্রী। স্বামীর প্রাণ রক্ষার জন্য সেদিন স্বামীকে ঘুমোতে দেননি তিনি। সারা রাত ঘরের আলো জ্বেলে স্বামীকে জাগিয়ে রাখেন রাজকন্যা। আর ঘরের বাইরে রাখা ছিল সোনা-রূপার সব গয়না ও মুদ্রা। বিধাতার বিধান অনুযায়ী, সেই ঘরে আসেন যমরাজ। কিন্তু বাইরে থাকা সোনা-রূপোর আলোয় তাঁর চোখ ঝলসে যায়। এরপরও যুবরাজের ঘরে পৌঁছলে তিনি দেখেন যুবরাজকে গল্প, গান শোনাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী। যমরাজও সেই সোনার উপর বসে গান ও গল্প শুনতে থাকেন। এই ভাবে রাত কেটে যায়। ফলে কাজ সম্পূর্ণ না করেই ফিরতে হয় যমরাজকে। সেই আনন্দে পরের দিন পালিত হয় ধনতেরাস। এদিন পুজো হয় সিদ্ধিদাতা গণেশেরও।
ধনতেরাস নির্ঘণ্ট-
মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর ধনতেরাস পালিত হবে। এই দিন সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত থাকবে প্রদোষ কাল। বৃষ কাল থাকবে সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১৪ মিনিট পর্যন্ত। ধনতেরাসে পুজোর শুভক্ষণ সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: দীপাবলির রাতে লক্ষ্মীর চরণ পাদুকা না আঁকলে বাড়িতে কী কাণ্ড হতে পারে জানেন?