হিন্দু ধর্মে গঙ্গা নদী ও গঙ্গাজলকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। নদীকে গঙ্গাদেবী হিসেবে পুজো করা হয়। উত্স থেকে মোহনা, গোটা প্রবাহপথকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এই পবিত্র নদী। গঙ্গাজল ছাড়া হিন্দু পুজো-পার্বণ অসম্পূর্ণ। পূর্বপুরুষদের তর্পণের জন্য গঙ্গাজল ছাড়াই চলবেই না। এমনকি গঙ্গাস্নানও অত্যন্ত তাত্পর্য রাখে। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের দশমী তিথিতে হিন্দুধর্মে গঙ্গাবতরণ পালন করা হয়। অর্থাত্ এদিন গঙ্গা মর্ত্যে অবতরণ হয়েছিল বলে মনে করেন হিন্দুরা। তাই এদিনটিকে দশহরাও বলা হয়ে থাকে। হিন্দু ধর্ম মতে, এদিন গঙ্গাস্নানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সন্তানের জন্ম হোক বা ব্যক্তির মৃত্যু, গঙ্গার জলে সবাই পবিত্র হয়।
মনে করা হয়, গঙ্গা দশহরার দিন গঙ্গা স্নান করলে দশ জন্মের পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। যাঁরা এদিন গঙ্গাস্নান করেন তাঁরা পাপমুক্ত হয়ে যান। পৌরাণিক কাহিনি মতে, স্বর্গরাজ ইন্দ্র এদিন বৃত্র নামে এক ভয়ংকর অসুর বধ করেছিলেন। তার রক্ত সোমরসের রূপে পৃথিবীতে গড়িয়ে পড়ে। সেই স্বর্গীয় তরলের নান বিষ্ণুপদী নামে পরিচিত। সেই তরলই অলকানন্দা হিসেবে মর্ত্যে আগমন ঘটে। ভারতে সেই পবিত্র নদীর নামই হল গঙ্গা।
অধিকাংশ হিন্দুদের বাড়ির ঠাকুর ঘরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গঙ্গাজল সংরক্ষণ করে রাখা হয়। সেই জলই প্রতিদিনের অর্ঘ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে ঠাকুরঘরে গঙ্গাজল রাখারও রয়েছে বেশি কিছু নিয়ম। গঙ্গার পবিত্রতা বজায় রাখতে কী কী সহজ নিয়ম মেনে চলতে হয়, তা জেনে নিন এখানে…
গঙ্গাজল রাখার নিয়ম কী
হিন্দু ধর্মে গঙ্গার জলকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। শরীর, মন ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, তাই এটি কখনওই কোনও নোংরা বা অপবিত্র স্থানে রাখা উচিত নয়। বা স্নান না করে কখনও স্পর্শ করবেন না। এছাড়াও মনে রাখবেন যে এটি কখনওই এঁটো হাত দিয়ে স্পর্শ করা উচিত নয়, এমনকি জুতা ও চপ্পল পরেও কখনও এই পবিত্র জল স্পর্শ করবেন না।
গঙ্গাজল কোন পাত্রে রাখা উচিত?
পুজোর সময় সংকল্প নেওয়ার সময় যে গঙ্গাজল ব্যবহার করা হয়, তা সর্বদা ব্রোঞ্জ বা তামার পাত্রে রাখা উচিত। প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা থেকে বিরত থাকুন। অন্ধকার জায়গায় গঙ্গাজল রেখে দেওয়া উচিত নয়।
গঙ্গাজল কোন দিকে রাখতে হবে?
গঙ্গা জল সবসময় বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে অর্থাৎ পুজো ঘরে রাখতে হবে। ঠাকুরঘরকে সবসময় দেবতাদের অধিবাস বলে বিশ্বাস করা হয়। যদি আপনার কাছে অল্প পরিমাণে গঙ্গাজল থাকে তবে আপনি তা পুজোর জলে তা মিশিয়ে গঙ্গাজলের মতো ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া গঙ্গার জল স্পর্শ করার পরে কখনও মিথ্যা কথা বলা উচিত নয়। এছাড়া বাড়ির রান্নাঘর বা বাথরুমে বা আশেপাশে গঙ্গাজল রাখা উচিত নয়। এতে দেবী গঙ্গা রেগে যেতে পারেন। বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গাজল রাখার জন্য এমন জায়গা বেছে নেওয়া উচিত যেখানে অন্ধকার ও পরিষ্কার হয়ে থাকে। গঙ্গাজলের পাশে কখনও আমিষ খাবার খাবেন না। মদ-মাংস-মাছ কখনও রাখবেন না।